এখন কোরআন পড়ছি। যত পড়ছি, গভীরে ঢুকছি, তত মনে হচ্ছে চারপাশে মুসলমানের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
কেন বলুন তো এমন মনে হচ্ছে?
কারণ, কো রা নি (কোরআন অনুসরণকারী) মুসলমানের চেয়ে দেশে হাদিসি (হাদিস অনুসরণকারী) মুসলমানের সংখ্যা ভয়ঙ্কর রকম বেশি।
তাতে সমস্যা কোথায়?
উল্লেখ্য, হাদিস সংকলিত হয়েছে নবীজির মৃত্যুর ৩০০ বছর পর। মজার ব্যাপার হলো, এই হাদিসগুলোর সত্যতা সম্পর্কে নানা জনের নানা মত রয়েছে। শিয়ারা যে হাদিস মানে তার অনেক হাদিস সুন্নীরা মানেন না। আবার উল্টো ধারাও একই রকম সক্রিয়। জাল হাদিসও নাকি রয়েছে অসংখ্য।
এত বির্তক ও জটিলতা সত্বেও আমরা হাদিসটাকেই বেশি মাত্রায় অনুসরণ করে থাকি ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে। অন্যদিকে, কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে নবীজির জীবদ্দশাতেই এবং তখন থেকেই সংরক্ষিত হয়ে আসছে। এই সংরক্ষণ হয়েছে মানুষের মুখে মুখে,পশুর চামড়ায় লিখে রেখে অথবা পাথরে খোদাই করে। পরবর্তীতে সেটাই মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়েছে তেমন কোন বিতর্ক ছাড়াই।
কিন্তু আমরা ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে কোরআনের চেয়ে হাদিসের কথাই অনুসরণ করি বেশি। আমরা কোরআন মুখস্ত করি, ছওয়াবের (পুণ্যের) আশায়। কিন্তু বুঝে পড়ি না। পড়ি কি? হাদিসের নামে আমাদের ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন মোল্লা মৌলবিদের লেখা বিভিন্ন চটি বই-ই আমাদের একমাত্র সম্বল,যেখানে লেখকের নিজস্ব ব্যাখ্যাই দেওয়া থাকে। সেটাই ধর্ম পালনের জন্য আমাদের অন্যতম দলিল (বিধান) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া আছেন বিভিন্ন গোষ্ঠীর ধর্মগুরু বা পীর সম্প্রদায়ের মৌখিক ফতোয়া বা পরামর্শ।
অথচ কোরআন আমরা বাংলা পড়ি না বা পড়তে উৎসাহিতও করি না। কোরআন বাংলায় পড়লেই বোঝা যায় মুসলিম হওয়ার প্রধান শর্ত হল দুটি। এক) এক আল্লাহ-তে বিশ্বাস রাখা এবং দুই) সৎ কাজ ও সত্য কথা বলা। (সূরা বাকারা আয়াত ২৫)
এই দুটোর মধ্যে প্রথমটা মানা যতটাই সহজ,দ্বিতীয়টা মানা ততটাই কঠিন। তবে লোভকে সংবরণ করতে পারলে ঠিক ততটাই সহজ হয়ে যায় দ্বিতীয় কাজটাও। আমরা এই দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে মোটেও জোর দেই না। আমরা জোর দেই এটাকে কম গুরুত্ব দিয়ে লোভের ফলে জমা হওয়া পাপ থেকে মুক্তি লাভের উপায় খোঁজায়।
অর্থাৎ আমরা পাপ (লোভের কারণে যার জন্ম) কাজের থেকে বিরত থাকার উপায় খুঁজি না,খুঁজি লোভের কারণে যে পাপ করছি তা মকুবের রাস্তা। সে কারণেই প্রয়োজন পড়ে প্রার্থনার। কারণ আমাদের বারবার করে জানানো হয়, আল্লাহ পরম দয়ালু ও ক্ষমাশীল। অন্তর দিয়ে প্রার্থনা করলেই তিনি তা ক্ষমা করে দেন। আর প্রার্থনার একমাত্র এবং খুবই সহজ উপায় হল নামাজ। নামাজকে তাই আঁকড়ে ধরি পাপ মোচনের উপায় মোক্ষম উপায় হিসাবে। জোর দেওয়া হয় নামাজেই। আল্লাহকে খুশি করার জন্য এটাই সহজ উপায় বলে আমরা বিশ্বাস করি বা করানো হয়। বলা হয় সব অপরাধের মাপ আছে কিন্তু নামাজ না পড়ার যে গোনা তার ক্ষমা নেই। এটা বাধ্যতামূলক। সব কিছুর থাকলেও এর কোন বিকল্প নেই।
সমস্যা এখানেই। যেভাবে নামাজকে বাধ্যতামূলক বলে প্রচার করা হচ্ছে, যতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সৎ কাজ ও সত্যবাদী হওয়ার বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না, বলা ভালো দেওয়া হচ্ছে না।
আসলে আমরা আল্লাহকে যত না ভয় পাই,তার চেয়ে বেশী ভয় পাই আমার চার পাশের মানুষকে বা সংগঠনকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন