সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

Teacher Recruitment Corruption: Negative Politics Practice, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন

আলী হোসেন

বিচার একটি যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। বিচারক কখনোই সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না, যদি না এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা ও তার কর্মকর্তারা উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ এবং বিচারককে তা সরবরাহ করতে পারেন। আর বিচার ব্যবস্থা হচ্ছে একটি শক্তির আধার; তা যার হাতে থাকে, তিনিই বিচারক। এই শক্তি ন্যায়বিচার তখনই দিতে পারে, যখন বিচারক নিরপেক্ষ থাকার সৎ সাহস দেখান এবং সাংবিধানিক আইন এবং তার প্রয়োগ বিষয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন।

তবে তাঁর সফলতা নির্ভর করে তথ্য সংগ্রহকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং আইনজীবীরা কতটা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই তথ্য বিচারকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তার উপর। তাই বিচারক বা বিচার ব্যবস্থা যা বিধান দেয়, তা সব সময় সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত হবেই - এভাবে নিশ্চিত করা যায় না। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো একটি পক্ষ যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে ন্যায় বিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

মনে রাখতে হবে, বিচার ব্যবস্থা যদি বিচারকের রায় মানেই ঠিক এবং নাগরিক সমাজ তার পক্ষে নিঃশর্ত সমর্থন জানাতে বাধ্য থাকবে - এই দাবি করে - তবে তা আধুনিক বিচার ব্যবস্থার একটা গুরুতর সীমাবদ্ধতা বলে বিবেচিত হবে। কারণ, বিচার ব্যবস্থা ব্যক্তি নিরপেক্ষ নয় এবং একশ শতাংশ ত্রুটিমুক্ত কোন সার্বজনীন সত্তাও নয়, যে সে কখনই ভুল করতে পারেন না। তাই বিচার ব্যবস্থার সাফল্য সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে একজন বিচারকের জানা-বোঝা ও তা মেনে চলার মত সৎ সাহসের ওপর, যা আসলে নিয়ন্ত্রিত হয় ওই মানুষের লোভ, ভয়, মোহ, কিংবা ব্যক্তি স্বার্থের মত আবেগ বা অনুভূতির দ্বারা। একজন মানুষের পক্ষে এই আবেগ ও অনুভূতিগুলো অতিক্রম করা নিশ্চয়ই সম্ভব, তবে তা খুবই দুরূহ কাজ। তাই বিচারকের রায় সবসময় মানুষের প্রশ্ন করার অধিকারকে অতিক্রম করতে পারে না।

স্বাভাবিকভাবেই, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থার পক্ষ থেকে যে নিদান এসেছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও আনন্দ একসঙ্গে মিলেমিশে এক গভীর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। যারা অর্থের মাধ্যমে চাকরি কিনেছে, তারা এই রায় মানতে বাধ্য। কারণ, তাদের কাছে এই রায় কাঙ্ক্ষিত না হলেও একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না।

কিন্তু যারা মেধা ও পরিশ্রমের জোরে চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের কাছে এই রায় হতাশাজনক। স্বাভাবিকভাবেই তারা ক্ষুব্ধ।

প্রশ্ন হল, এই ক্ষোভ কার বিরুদ্ধে? সরকারপক্ষের মানুষ বলবেন এর দায় বিচারক এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সহকারী সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের। কারণ, সত্য উদঘাটনে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে সরকার-বিরোধীরা বলবেন দুর্নীতি যেহেতু সরকার করেছে, তাই তার দায় সম্পূর্ণভাবেই তাদের। সরকার পক্ষের পাল্টা যুক্তি, এই দুর্নীতি সরকার করেনি, করেছে সরকার পক্ষের কিছু নেতা, মন্ত্রী এবং আমলা। আমরা চাই তাদের শাস্তি হোক। তাই জড়িতরা এখন বিচারকের অধীনে জেলখানায়। আমরা তার বিরোধিতা করছি না। তারা এই কাজের সঙ্গে কতটা জড়িত অথবা জড়িত নয়, তা বিচারব্যবস্থাই নির্ণয় করবে। তাই যতক্ষণ না তা প্রমাণ হবে, ততক্ষণ তার দায় আমরা নিতে যাব না।

এখন যারা চাকরি পেয়েছেন, তারা সবাই কী অবৈধ পথে নিয়োগ পেয়েছেন? না। তাই যাঁরা বৈধভাবে চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের চাকরি যাবে কেন - এ প্রশ্নকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক এবং অমানবিক। অন্যদিকে, বিরোধীদের বক্তব্য সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে, এবং সে কারণেই এই রায়। তাই যোগ্য ব্যক্তিদের এই দুর্ভোগের দায় একমাত্র সরকারকেই নিতে হবে।

এই যে সিদ্ধান্ত, সরকার এবং বিরোধী পক্ষের, রাজনীতির মাঠে একটা বহুল প্রচলিত রাজনৈতিক খেলা। কারণ, রাজনীতির লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখা অথবা ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার চাবিকাঠি হস্তগত করা। ইতিহাস বলছে, ক্ষমতার অন্বেষণকারীদের কাছে, এক্ষেত্রে, ন্যায়-নীতি, উচিত-অনুচিত, মানুষের মৃত্যু - একেবারেই জল ভাত খাওয়ার মতই প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। আদিম সাম্যবাদের যুগ পার করে মানুষ যখন রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অধীনস্থ হয়েছে, তখন থেকেই এটাকে শুধু মান্যতা নয়, অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে।

কিন্তু ইউরোপে, ফরাসি বিপ্লবের সূত্র ধরে, এই রাষ্ট্রদর্শনে পরিবর্তন এসেছে। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মানব কল্যাণ হয়ে উঠেছে রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। এটাই সারা পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও মান্য রাষ্ট্রদর্শন। প্রাচীন ভারতে সম্রাট অশোকের যুদ্ধ বিজয় নীতি ত্যাগ করে ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণের মধ্যে এই রাষ্ট্র দর্শনের প্রথম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখার পর তিনি প্রজাকে 'নিজের সন্তান' বলে অভিহিত করেছিলেন এবং প্রজার কল্যাণকে রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাই ইতিহাস তাকে 'মহামতি' এবং 'প্রথম জনকল্যাণকামী' শাসক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা এই উদ্দেশ্য পূরণের একটি আধুনিকতম অস্ত্র। এই অস্ত্রের প্রধান লক্ষ্য তাই মানুষের কল্যাণ, ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচারকে নিশ্চিত করা। এর সূত্রেই তা মানবতাবাদী।

মানবতাবাদী আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা তাই মানুষের কল্যাণকেই একমাত্র লক্ষ্য বলে বিবেচনা করে। কোনো অজুহাতে, কোন একজন সৎ মানুষকেও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। একজনের অপরাধের ফল অন্য কোন নিরপরাধ মানুষ ভোগ করবে - হতে পারে না। কোন আইন যদি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, তবে তা বাতিল বলে বিবেচিত হয়। কারণ, এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা এই নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকার কথা। কারণ, এটা তার অন্যতম প্রধান ভিত্তি এবং শর্তও।

প্রশ্ন হল, কারা যোগ্য তা কীভাবে প্রমাণ হবে? সরকার সহযোগিতা করছে না। তাহলে পাল্টা প্রশ্ন উঠবে সরকার সহযোগিতা না করলে যদি সত্য প্রকাশ না পায়, তবে তদন্তকারী সংস্থা কিংবা বিচার ব্যবস্থার কি কোন গুরুত্ব থাকে? অপরাধী সহযোগিতা না করলে যদি অপরাধ বা সত্য উদঘাটন সম্ভব না হয়, তাহলে কোন সংস্থার অস্তিত্বের পাশে প্রশ্নচিহ্ন উঠবে না কেন? তাদের অক্ষমতার ফল সাধারণ জনগণ ভুগবে কেন? মানুষ কাদের ওপর তবে ভরসা করবে? চোর তো চুরি করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করবেই। এবং ইতিহাস বলছে চোর সম্পূর্ণ প্রমাণ লোপাট করতে কখনোই সফল হয় না। এক্ষেত্রেও হয়নি। তার প্রমাণ, পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি জনসমক্ষে এসেছে।

কোন ডাটা যদি একবার ইন্টারনেটে আপলোড হয়, তবে তার একটা ক্লোন বা কপি ক্লাউড স্টোরেজে জমা হয়ে যায় ইনক্রিপটেড ডাটা হিসাবে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে পাঠ করা কিম্বা উদ্ধার করা অসম্ভব। বঞ্চিত প্রার্থীরা যে তথ্য সামনে এনেছেন এবং যার ভিত্তিতে ইনভেস্টিগেশন শুরু করে প্রমাণ হয়েছে যে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, তা তারা সংগ্রহ করেছে ইন্টারনেট থেকেই। তা যদি হয়, তাহলে তা সরকারি কোন সংস্থার কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে তা থাকলো কি থাকলো না, তার ওপর একমাত্র নির্ভরশীল হওয়ার প্রয়োজন হয় না। কারণ, তার ক্লোন কপি ক্লাউড স্টোরেজে জমা আছে। এই ক্লাউড স্টোরেজগুলোর সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে আমেরিকাসহ বিদেশী রাষ্ট্রের অধীন বড় বড় কোম্পানিগুলো। সরকার বা ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট চাইলেই ক্লাউড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। আর এটা সরকার-সহ সব পক্ষই জানেন। কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞের মতামত হল এভাবে প্রায় সমস্ত ডাটাই পুনরুদ্ধার করা করা সম্ভব।

যদি তাই হয়, তবে প্রশ্ন উঠবে, সরকার-সহ এই বিভাগগুলো তা করছে না কেন? তাহলে তারা কি চাইছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাক? মানুষ এই ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাক এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মুখী হোক?

প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, এতো সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষিকার স্কুলে যাওয়ার ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ কেড়ে নিয়ে স্কুলগুলোকেই কি আসলে পঙ্গু করে দেওয়া হল না? আরও সময় নিয়ে অনুসন্ধান করলে অসুবিধা কোথায়? অযোগ্যদের খুঁজে বের করতে পারিনি বলে সবাইকে শাস্তি দেওয়ার এত ব্যস্ততা কিসের? এর কি কোন বিকল্প ছিল না? যে সাড়ে ৫ হাজার-এর বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তদন্তকারী সংস্থা দাবি করছে, তাদের বরখাস্ত করা এবং সন্দেহভাজনদের আংশিক বেতনের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিধান কি দেওয়া যেত না, যতদিন সত্য খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সফল না হয়? যদি এটা হয় যে সরকার সহযোগিতা করছে না - তা তো সরকারের দোষ। তার ফল সাধারণ মানুষ (যোগ্য চাকরিজীবি এবং ছাত্রছাত্রী) কেন ভোগ করবে?

তাছাড়া, দুর্নীতি কেবলমাত্র শিক্ষা বিভাগেই হয়েছে এমন তো নয়, নিরপেক্ষ সংবাদ মাধ্যমগুলো নজরে আনলে সহজেই অনুমান করা যায়, তা অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়েছে। এবং সেক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য কেউ কম যায় না। অন্যগুলোর ক্ষেত্রে তদন্তের নামে ঝুলিয়ে রেখে কেবলমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে টার্গেট করার মধ্যে কি গভীর কোন উদ্দেশ্য কাজ করছে বলে অনুমান করা যায় না? নাগরিক সমাজ সে কথা ভাবছে।

আসলে ভারতবর্ষে জুড়ে শুরু হয়েছে নেতিবাচক রাজনীতির চর্চা। কর্পোরেট পুঁজির চাপে ইতিবাচক রাজনীতির নাভিশ্বাস উঠছে। নিশ্চিত মুনাফার এমন ক্ষেত্র সরকারি হাতে থাকলে গরিব মানুষের জগৎ, জীবন ও নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে পারে বটে, কিন্তু কর্পোরেট পুঁজির মুনাফায় ঘাটতি তৈরি হয়। তাই নেতিবাচক রাজনীতির চর্চা আজ কর্পোরেট মিডিয়া জুড়ে। সাধারণ মানুষ (শিক্ষক ও ছাত্র সমাজ) পুঁজির হাঁড়ি কাটে গলা দেয়া এক একজন বলির পাঁঠা মাত্র।
-------------xx-----------

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে