কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী
কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল।
কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল।
রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ না বুঝলেও কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা তা ভালই বোঝে। তাই ভোটের সময় দুই হাতে তারা অর্থ দান করে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী তহবিলে। বিনিময়ে সরকারে এসে সেই রাজনৈতিক দলগুলিই দেশের সম্পদ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সংস্কারের নামে নতুন নতুন আইন করে সেই পথ তৈরি করে দেয়। এভাবেই আজ একের পর এক লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, কারখানা ও সংস্থাগুলো জলের দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমারা অধিকাংশ মানুষই জানিনা, এই সংস্থাগুলো থেকে আয় হওয়া অর্থই অনুদান হিসাবে ফিরে আসে সাধারণ গরিব ও মধ্যবিত্তদের হেশেলে, যা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এখন সেগুলোই যাবে কর্পোরেট পুঁজির লকারে আর তার একটা অংশ ফিরে আসবে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে। ২০১৯-২০ সালের হিসাব অনুযায়ী কর্পোরেট অনুদান হিসাবে বিজেপি পেয়েছে ৭২০.৪০৭ কোটি টাকা, যা মোট জমা পড়া অর্থের ৭৮ শতাংশ। কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের এই গলাগলির সুচারু প্রদর্শনী দেখতে দেখতে মানুষের গলার ফাস ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
অথচ সাধারণ মানুষ একেবারেই নির্বিকার। কিন্তু কেন?
কর্পোরেট পুঁজির নিজস্ব ডিজিটাল সংবাদ (টেলিভিশন) মাধ্যম তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা। মানুষ গোগ্রাসে গিলছেন সেই মিথ্যার পাহাড় সুস্বাদু বৌদ্ধিক আহার হিসাবে। এবং নিজেকে বোদ্ধা হিসাবে জাহির করছেন সোশাল মিডিয়ায়। ফলে সাধারন মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন চলে যাচ্ছে এই কর্পোরেট পুঁজির সমর্থন পুষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে।
এই প্রপাগান্ডারই এক নয়া ব্রান্ড হচ্ছে কাশ্মীর ফাইলস, যেখানে অর্ধসত্যের সঙ্গে একগাদা মিথ্যা জুড়ে সত্যের বেসাতি করা হয়েছে। এবং মজার ব্যাপার হল এখানে বিনিয়োগ করেছে কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা, এবং প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে তারই ছোটভাই, সেই বিশেষ রাজনৈতিক দল ও তার শাখা সংগঠনগুলো। লক্ষ্য একটাই, পুকুর চুরির খবর যেন কানে না যায়, অথবা গেলেও যেন মরমে তা প্রবেশ করতে না পারে। যদি চেষ্টা করে, তবে প্রবেশের আগেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদের দেওয়াল তুলে এবং চিনের পরাশক্তি হয়ে ওঠার কাহিনিকে ঢাল করে তার প্রচারের মাধ্যমে মরমে ঢোকার আগেই তাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া।
প্রশ্ন উঠতে পারে, সত্যিই কোন অন্যায় হয়নি কাশ্মিরি পণ্ডিতদের ওপর? অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে। আসলে এই সিনেমাটি কাশ্মিরে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর একটা একমুখী এবং একপেশে প্রলাপ গাথা। যদিও, রাহুল পণ্ডিতা তাঁর ‘আওয়ার মুন হ্যাজ ব্লাড ক্লটস’ গ্রন্থে অভিযোগ তুলেছেন, এতদিন কাশ্মীরে নিপীড়ন বলতে আমরা সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকেই শুধু বুঝে এসেছি। তুলনায় কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতদের উপর উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদ এবং জঙ্গীবাদের নিপীড়ন বিশেষ আলোচিত হয় নি। কিন্তু সত্যি কি তা-ই? বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে কি এই বিষয়ে লাগাতার কথা বলে আসছে না? আসছে। আসলে এবার শিল্প ও বিনোদনের মাধ্যমকে সুচারু রুপে ব্যবহার করে একে একটা বিশেষ শৈল্পিক মাত্রায় পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছে মাত্র, যাতে এই অর্ধসত্যকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়।
তথ্য বলছে, এখানে যাকে সত্য বলে তুলে ধরা হচ্ছে, তা আসলে অর্ধসত্য। কাশ্মিরি পণ্ডিতরা নিপীড়িত হয়েছেন, কিন্তু সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয়েছে তা মোটেই পক্ষপাতহীন ভাবে হয়নি। দুই, এখানে শুধুমাত্র পণ্ডিতরাই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে যা দেখানো হচ্ছে, তাও একমাত্র নয়। অসংখ্য নিরিহ কাশ্মিরি মুসলমান মারা গেছেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই পর্বে। তা কখনও স্বজাতি ও ধর্মের বিপথগামী মানুষের দ্বারা এবং কখনও বা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এই সত্য সচেতন ভাবেই পরিচালক এড়িয়ে গেছেন।
১৯৯০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত উগ্রবাদীদের দ্বারা অসংখ্য খুন এবং গণহত্যার কালপঞ্জী দেখালেও, এখানে উল্লেখ নেই ঐ পর্বে রাষ্ট্র কর্তৃক বেশ কিছু গণহত্যার কথা, যেমন গাওকাদাল গণহত্যা বা বিজবেহেরা গণহত্যার মত ঘটনা। এর মধ্যে প্রথমটি ঘটেছিল রাষ্ট্রপতি শাসনে রাজ্যপাল হিসেবে জগমোহন কাশ্মীরের দায়িত্ব নেওয়ার পর, যিনি এখন বিজেপির বিশিষ্ট নেতা। এই পর্বেই কাশ্মিরি পণ্ডিতরা যখন দেশ ছাড়ছেন তখন দেশে রয়েছে বিজেপি সমর্থিত ভিপিসিং সরকার। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি কোন প্রতিবাদের পথে হাটেনি, এবং সরকারের থেকে সমর্থনও তুলে নেয়নি। তারা সমর্থন তুলেছিল মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকরীর করার সময়। আসলে তারা চেয়েছিল এমন ঘটনা ঘটুক। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার এটা ছিল একটি হিসেবি পদক্ষেপ। এ দ্বায় বিজেপি এড়াতে পারে? প্রশ্ন তোলা হয়েছে এ বিষয়ে এই সিনেমায়?
অন্যদিকে লক্ষ্য করুন, কাশ্মিরি পণ্ডিতরা যখন নিজের বাসভুমি ছাড়ছেন, সেই সময় তৈরি একটি ডকুমেন্টারি (www.wildfilmsindia.com) দেখাচ্ছে,
১) পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, কাশ্মির হয় স্বাধীন হয়ে যাবে, অথবা পাকিস্থানের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। আর এর পরিণতি হল হয় কাশ্মিরি পণ্ডিতদের মুসলমান হতে হবে, না হলে মৃত্যুবরণ করতে হবে। ফলে দলে দলে মানুষ কাশ্মির ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ভাবুন, জগমোহন তা আটকানোর চেষ্টা করেননি কেন?
২) অন্য দিকে দেখুন, এই সময় কট্টরপন্থি সংগঠনগুলিও চাইছিল না যে, কাশ্মিরি পণ্ডিতরা কাশ্মির ছাড়ুক। কারণ, তাদের কাছে খবর ছিল, কাশ্মিরি পণ্ডিতদের ভয় দেখিয়ে এখান থেকে সরানোর পরই বিজেপি সমর্থিত রাজ্যপাল জগমোহন রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় কাশ্মিরি জনগণের বিরুদ্ধে ক্রাকডাউন চালাবে। তাদের কাছে থাকা এই খবর যে ভুল ছিল না তা প্রমাণ হয় উপরে উল্লেখিত গাওকাদাল গণহত্যা বা বিজবেহেরা গণহত্যার ঘটনা ঘটার মাধ্যমে।
এই একই সত্য উঠে আসে বাশারাত পীরের বই ‘কার্ফুড নাইট’-এ, যেখানে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে গাওকোদাল গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ইঞ্জিনীয়ার ফারুক ওয়ানির হাড় হিম করা বিবরণ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, একটি সেতুর উপর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে আসা একটি মিছিলের উপর কিভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল সি আর পি এফ এবং কিভাবে পুলিস-ট্রাকে মৃতদেহ চালান করা হয়েছিল।
এই সময় পাকিস্তানপন্থী জঙ্গীদের হাতে নিহত হন শ্রীনগরের প্রধান মৌলবী ফারুক। অবাক করা বিষয় হল, তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যে শোকমিছিল বের হয় তার উপর ভারতীয় বাহিনী গুলি চালায়। মৌলবীর মৃত্যুশোক ভুলে মানুষ ভারত বিরোধিতায় ফুঁসে ওঠে।
বাশারাত লেখেন পারভীনা আহাঙ্গারের কথা, ১৯৯০ সালের সামরিক রেইডের সময় যাঁর বোবা ছেলে জাভেদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং যে আর ফিরে আসেনি কোন দিন। নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরের কুখ্যাত অন্তরীণ তথা নির্যাতন কেন্দ্র পাপা—২ থেকে বেঁচে ফেরা শফি, আনসার বা হুসেনের জবানবন্দী এবং মুবিনা ঘানির কথা, যিনি ১৯৯০ সালের মে মাসে বিয়ের কয়েক ঘন্টা পরে আধা সামরিক বাহিনীর হাতে ধর্ষিতা হন, তা কাশ্মির ফাইলসের থেকে কম নৃশংস ছিল না। লেখক যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ঘটনার প্রায় বারো বছর পর, তখনও তিনি এবং তাঁর পরিবার গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছে ব্রাত্য। কারণ মুবিনা তাদের কাছে দুর্ভাগ্যের বাহক। কেননা ঐ আক্রমণে শুধু মুবিনা এবং তাঁর পরিচারিকা ধর্ষিতা হন তাই নয়, বরযাত্রী দলের একজন প্রাণ হারান এবং আহত হন দশজন। কাশ্মিরি ফাইলসে এব্যাপারে খরচ করা হয়েছে কি এক চিলতে সেলুলয়েড?
শুধু তাই নয়, কাশ্মিরি পণ্ডিতদের জন্মভুমি ছেড়ে যাওয়ার পিছনে কতটা গুজব এবং তা পরিকল্পিত ছিল তার কিছু নিদর্শন মেলে ১৯৯০ সালে পালিয়ে যাওয়া এবং ১৯৯২ সালে নিজ বাড়িতে ফিরে আসা Bijoy Dhar (Pro-vice chairman of the Delhi public school at Srinagar)-এর কথায়। তিনি বলেন, I left with my family in 1990 and came back in 1992 because my mother wanted to be back in Kashmir. Believe me, for five weeks, our Muslim neighbours were bringing us breakfast every day.’
ইকোনমিক এন্ড পলিটিকাল উইকলি (৮ অক্টোবর ১৯৯৪) একটি বিস্ফোরক তথ্য উপস্থাপন করেছে সমসাময়িক হানাহানি ও অস্থিরতার বিষয়ে। তারা লিখছে, Militants are not a homogeneous category. There are ‘fake’ militants, lumpen and anti-social elements who use the movement as cover for their activities. There are government-sponsored militants, counter-insurgency measures to infiltrate the movement by recruiting Kashmiri defectors.
এই সিনেমা দেখায়নি এই পর্বে অসংখ্য কাশ্মিরি নাগরিক পাকিস্তানে শরণার্থী শিবিরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার খোঁজে। কাশ্মিরি পণ্ডিতদের মত তারাও ফিরতে পারেনি এখনও।
কী প্রমাণ করে এই সব ঘটনা, সচেতন মানুষ মাত্রই তা অনুমান করতে পারেন। কিন্তু আমাদের অধিকাংশের নিদারুন একপেশে সহনশীলতা আমাদের স্নায়ুকে অবশ করে রেখেছে। বৃহৎ দুই জনগোষ্ঠী (হিন্দু-মুসলিম) যখন এর বিচার করতে বসে এই সমস্ত ঘটনার, তখন প্রকৃত ভারতীয় জাতিস্বত্তাকে ডিঙিয়ে ধর্ম ভিত্তিক জাতিস্বত্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং একপেশে সহনশীলতার জন্ম হয়।
সুতরাং কাশ্মির ফাইল একপেশে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তৈরি বিজেপি পরিকল্পিত ন্যারেটিভ। আর এর লক্ষ্য হল বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে কর্পোরেট সার্থকে সুনিশ্চিত করা। একাজে ইতিমধ্যেই তারা হাত পাকিয়ে ফেলেছে। কখনও তারা ধর্ম রক্ষার দোহাই, আবার কখনও ইসলামোফোবিয়া কিম্বা আজান, হিজাব ইত্যাদি বিষয়ে অহেতুক ও হাস্যকর বিতর্ক তুলে জনগণের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও তা ধরে রাখার খেলায় টিকে থাকার মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে। ইতিহাস বলছে, এই খেলার অর্থ হল ভারতীয় জাতিসত্তার অবনমন বা বিশ্বমঞ্চে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া।
---------##---------
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন