সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল।

কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল।

রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং তথাকথিত শিক্ষিত মানুষ না বুঝলেও কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা তা ভালই বোঝে। তাই ভোটের সময় দুই হাতে তারা অর্থ দান করে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী তহবিলে। বিনিময়ে সরকারে এসে সেই রাজনৈতিক দলগুলিই দেশের সম্পদ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সংস্কারের নামে নতুন নতুন আইন করে সেই পথ তৈরি করে দেয়। এভাবেই আজ একের পর এক লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প, কারখানা ও সংস্থাগুলো জলের দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমারা অধিকাংশ মানুষই জানিনা, এই সংস্থাগুলো থেকে আয় হওয়া অর্থই অনুদান হিসাবে ফিরে আসে সাধারণ গরিব ও মধ্যবিত্তদের হেশেলে, যা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এখন সেগুলোই যাবে কর্পোরেট পুঁজির লকারে আর তার একটা অংশ ফিরে আসবে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে। ২০১৯-২০ সালের হিসাব অনুযায়ী কর্পোরেট অনুদান হিসাবে বিজেপি পেয়েছে ৭২০.৪০৭ কোটি টাকা, যা মোট জমা পড়া অর্থের ৭৮ শতাংশ। কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের এই গলাগলির সুচারু প্রদর্শনী দেখতে দেখতে মানুষের গলার ফাস ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
অথচ সাধারণ মানুষ একেবারেই নির্বিকার। কিন্তু কেন?

কর্পোরেট পুঁজির নিজস্ব ডিজিটাল সংবাদ (টেলিভিশন) মাধ্যম তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার ও প্রপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে রাতদিন চব্বিশ ঘণ্টা। মানুষ গোগ্রাসে গিলছেন সেই মিথ্যার পাহাড় সুস্বাদু বৌদ্ধিক আহার হিসাবে। এবং নিজেকে বোদ্ধা হিসাবে জাহির করছেন সোশাল মিডিয়ায়। ফলে সাধারন মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন চলে যাচ্ছে এই কর্পোরেট পুঁজির সমর্থন পুষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে।

এই প্রপাগান্ডারই এক নয়া ব্রান্ড হচ্ছে কাশ্মীর ফাইলস, যেখানে অর্ধসত্যের সঙ্গে একগাদা মিথ্যা জুড়ে সত্যের বেসাতি করা হয়েছে। এবং মজার ব্যাপার হল এখানে বিনিয়োগ করেছে কর্পোরেট পুঁজির মালিকরা, এবং প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছে তারই ছোটভাই, সেই বিশেষ রাজনৈতিক দল ও তার শাখা সংগঠনগুলো। লক্ষ্য একটাই, পুকুর চুরির খবর যেন কানে না যায়, অথবা গেলেও যেন মরমে তা প্রবেশ করতে না পারে। যদি চেষ্টা করে, তবে প্রবেশের আগেই হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদের দেওয়াল তুলে এবং চিনের পরাশক্তি হয়ে ওঠার কাহিনিকে ঢাল করে তার প্রচারের মাধ্যমে মরমে ঢোকার আগেই তাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সত্যিই কোন অন্যায় হয়নি কাশ্মিরি পণ্ডিতদের ওপর? অস্বীকার করলে সত্যের অপলাপ হবে। আসলে এই সিনেমাটি কাশ্মিরে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর একটা একমুখী এবং একপেশে প্রলাপ গাথা। যদিও, রাহুল পণ্ডিতা তাঁর ‘আওয়ার মুন হ্যাজ ব্লাড ক্লটস’ গ্রন্থে অভিযোগ তুলেছেন, এতদিন কাশ্মীরে নিপীড়ন বলতে আমরা সেখানকার মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকেই শুধু বুঝে এসেছি। তুলনায় কাশ্মীরের হিন্দু পণ্ডিতদের উপর উপত্যকার সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাবাদ এবং জঙ্গীবাদের নিপীড়ন বিশেষ আলোচিত হয় নি। কিন্তু সত্যি কি তা-ই? বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে কি এই বিষয়ে লাগাতার কথা বলে আসছে না? আসছে। আসলে এবার শিল্প ও বিনোদনের মাধ্যমকে সুচারু রুপে ব্যবহার করে একে একটা বিশেষ শৈল্পিক মাত্রায় পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করছে মাত্র, যাতে এই অর্ধসত্যকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়।

তথ্য বলছে, এখানে যাকে সত্য বলে তুলে ধরা হচ্ছে, তা আসলে অর্ধসত্য। কাশ্মিরি পণ্ডিতরা নিপীড়িত হয়েছেন, কিন্তু সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয়েছে তা মোটেই পক্ষপাতহীন ভাবে হয়নি। দুই, এখানে শুধুমাত্র পণ্ডিতরাই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে যা দেখানো হচ্ছে, তাও একমাত্র নয়। অসংখ্য নিরিহ কাশ্মিরি মুসলমান মারা গেছেন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই পর্বে। তা কখনও স্বজাতি ও ধর্মের বিপথগামী মানুষের দ্বারা এবং কখনও বা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। এই সত্য সচেতন ভাবেই পরিচালক এড়িয়ে গেছেন।

১৯৯০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত উগ্রবাদীদের দ্বারা অসংখ্য খুন এবং গণহত্যার কালপঞ্জী দেখালেও, এখানে উল্লেখ নেই ঐ পর্বে রাষ্ট্র কর্তৃক বেশ কিছু গণহত্যার কথা, যেমন গাওকাদাল গণহত্যা বা বিজবেহেরা গণহত্যার মত ঘটনা। এর মধ্যে প্রথমটি ঘটেছিল রাষ্ট্রপতি শাসনে রাজ্যপাল হিসেবে জগমোহন কাশ্মীরের দায়িত্ব নেওয়ার পর, যিনি এখন বিজেপির বিশিষ্ট নেতা। এই পর্বেই কাশ্মিরি পণ্ডিতরা যখন দেশ ছাড়ছেন তখন দেশে রয়েছে বিজেপি সমর্থিত ভিপিসিং সরকার। ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি কোন প্রতিবাদের পথে হাটেনি, এবং সরকারের থেকে সমর্থনও তুলে নেয়নি। তারা সমর্থন তুলেছিল মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ কার্যকরীর করার সময়। আসলে তারা চেয়েছিল এমন ঘটনা ঘটুক। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার এটা ছিল একটি হিসেবি পদক্ষেপ। এ দ্বায় বিজেপি এড়াতে পারে? প্রশ্ন তোলা হয়েছে এ বিষয়ে এই সিনেমায়?

অন্যদিকে লক্ষ্য করুন, কাশ্মিরি পণ্ডিতরা যখন নিজের বাসভুমি ছাড়ছেন, সেই সময় তৈরি একটি ডকুমেন্টারি (www.wildfilmsindia.com) দেখাচ্ছে,
১) পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে, কাশ্মির হয় স্বাধীন হয়ে যাবে, অথবা পাকিস্থানের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। আর এর পরিণতি হল হয় কাশ্মিরি পণ্ডিতদের মুসলমান হতে হবে, না হলে মৃত্যুবরণ করতে হবে। ফলে দলে দলে মানুষ কাশ্মির ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ভাবুন, জগমোহন তা আটকানোর চেষ্টা করেননি কেন?
২) অন্য দিকে দেখুন, এই সময় কট্টরপন্থি সংগঠনগুলিও চাইছিল না যে, কাশ্মিরি পণ্ডিতরা কাশ্মির ছাড়ুক। কারণ, তাদের কাছে খবর ছিল, কাশ্মিরি পণ্ডিতদের ভয় দেখিয়ে এখান থেকে সরানোর পরই বিজেপি সমর্থিত রাজ্যপাল জগমোহন রাষ্ট্রপতি শাসনের আওতায় কাশ্মিরি জনগণের বিরুদ্ধে ক্রাকডাউন চালাবে। তাদের কাছে থাকা এই খবর যে ভুল ছিল না তা প্রমাণ হয় উপরে উল্লেখিত গাওকাদাল গণহত্যা বা বিজবেহেরা গণহত্যার ঘটনা ঘটার মাধ্যমে।

এই একই সত্য উঠে আসে বাশারাত পীরের বই ‘কার্ফুড নাইট’-এ, যেখানে ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে গাওকোদাল গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ইঞ্জিনীয়ার ফারুক ওয়ানির হাড় হিম করা বিবরণ রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, একটি সেতুর উপর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে আসা একটি মিছিলের উপর কিভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল সি আর পি এফ এবং কিভাবে পুলিস-ট্রাকে মৃতদেহ চালান করা হয়েছিল।

 এই সময় পাকিস্তানপন্থী জঙ্গীদের হাতে নিহত হন শ্রীনগরের প্রধান মৌলবী ফারুক। অবাক করা বিষয় হল, তাঁর মৃতদেহ নিয়ে যে শোকমিছিল বের হয় তার উপর ভারতীয় বাহিনী গুলি চালায়। মৌলবীর মৃত্যুশোক ভুলে মানুষ ভারত বিরোধিতায় ফুঁসে ওঠে।

বাশারাত লেখেন পারভীনা আহাঙ্গারের কথা, ১৯৯০ সালের সামরিক রেইডের সময় যাঁর বোবা ছেলে জাভেদকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং যে আর ফিরে আসেনি কোন দিন। নব্বইয়ের দশকে কাশ্মীরের কুখ্যাত অন্তরীণ তথা নির্যাতন কেন্দ্র পাপা—২ থেকে বেঁচে ফেরা শফি, আনসার বা হুসেনের জবানবন্দী এবং মুবিনা ঘানির কথা, যিনি ১৯৯০ সালের মে মাসে বিয়ের কয়েক ঘন্টা পরে আধা সামরিক বাহিনীর হাতে ধর্ষিতা হন, তা কাশ্মির ফাইলসের থেকে কম নৃশংস ছিল না। লেখক যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন ঘটনার প্রায় বারো বছর পর, তখনও তিনি এবং তাঁর পরিবার গ্রামের প্রতিবেশীদের কাছে ব্রাত্য। কারণ মুবিনা তাদের কাছে দুর্ভাগ্যের বাহক। কেননা ঐ আক্রমণে শুধু মুবিনা এবং তাঁর পরিচারিকা ধর্ষিতা হন তাই নয়, বরযাত্রী দলের একজন প্রাণ হারান এবং আহত হন দশজন। কাশ্মিরি ফাইলসে এব্যাপারে খরচ করা হয়েছে কি এক চিলতে সেলুলয়েড?

শুধু তাই নয়, কাশ্মিরি পণ্ডিতদের জন্মভুমি ছেড়ে যাওয়ার পিছনে কতটা গুজব এবং তা পরিকল্পিত ছিল তার কিছু নিদর্শন মেলে ১৯৯০ সালে পালিয়ে যাওয়া এবং ১৯৯২ সালে নিজ বাড়িতে ফিরে আসা Bijoy Dhar (Pro-vice chairman of the Delhi public school at Srinagar)-এর কথায়। তিনি বলেন, I left with my family in 1990 and came back in 1992 because my mother wanted to be back in Kashmir. Believe me, for five weeks, our Muslim neighbours were bringing us breakfast every day.’
ইকোনমিক এন্ড পলিটিকাল উইকলি (৮ অক্টোবর ১৯৯৪) একটি বিস্ফোরক তথ্য উপস্থাপন করেছে সমসাময়িক হানাহানি ও অস্থিরতার বিষয়ে। তারা লিখছে, Militants are not a homogeneous category. There are ‘fake’ militants, lumpen and anti-social elements who use the movement as cover for their activities. There are government-sponsored militants, counter-insurgency measures to infiltrate the movement by recruiting Kashmiri defectors.

এই সিনেমা দেখায়নি এই পর্বে অসংখ্য কাশ্মিরি নাগরিক পাকিস্তানে শরণার্থী শিবিরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তার খোঁজে। কাশ্মিরি পণ্ডিতদের মত তারাও ফিরতে পারেনি এখনও।
কী প্রমাণ করে এই সব ঘটনা, সচেতন মানুষ মাত্রই তা অনুমান করতে পারেন। কিন্তু আমাদের অধিকাংশের নিদারুন একপেশে সহনশীলতা আমাদের স্নায়ুকে অবশ করে রেখেছে। বৃহৎ দুই জনগোষ্ঠী (হিন্দু-মুসলিম) যখন এর বিচার করতে বসে এই সমস্ত ঘটনার, তখন প্রকৃত ভারতীয় জাতিস্বত্তাকে ডিঙিয়ে ধর্ম ভিত্তিক জাতিস্বত্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং একপেশে সহনশীলতার জন্ম হয়।

সুতরাং কাশ্মির ফাইল একপেশে এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে তৈরি বিজেপি পরিকল্পিত ন্যারেটিভ। আর এর লক্ষ্য হল বিভাজনের রাজনীতির মাধ্যমে কর্পোরেট সার্থকে সুনিশ্চিত করা। একাজে ইতিমধ্যেই তারা হাত পাকিয়ে ফেলেছে। কখনও তারা ধর্ম রক্ষার দোহাই, আবার কখনও ইসলামোফোবিয়া কিম্বা আজান, হিজাব ইত্যাদি বিষয়ে অহেতুক ও হাস্যকর বিতর্ক তুলে জনগণের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও তা ধরে রাখার খেলায় টিকে থাকার মরিয়া প্রয়াস চালাচ্ছে। ইতিহাস বলছে, এই খেলার অর্থ হল ভারতীয় জাতিসত্তার অবনমন বা বিশ্বমঞ্চে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া।
---------##---------

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে