শিক্ষা আনে চেতনা আর চেতনা আনে বিপ্লব। এটা যে শুধু স্লোগান নয়, পরম সত্য তা আরও একবার প্রমানিত হল। প্রামাণ করলো ছোট্ট মেয়ে মালালা ইউসুফজাই। পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মেয়ে মাত্র এগার বছর বয়সেই বুঝে ফেলেছে চেতনাহীন মানুষ পূর্ণ-মানুষ নয়; মানুষের রূপ পাওয়া একটা সাধারণ জীব-মাত্র। মানুষের সঙ্গে এইসব জীবের প্রধান পার্থক্যই নিহিত রয়েছে চেতনা থাকা আর না-থাকার মধ্যে। বস্তুত, চেতনা-রহিত মানুষ হিংস্র পশুর চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় হল, হিংস্র পশু ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে মুলতঃ দুটো কারণে। এক. ক্ষুন্নিবৃত্তি দুই. আত্মরক্ষা; যা প্রত্যেক জীবের সহজাত প্রবৃত্তি। আর চেতনাহীন মানুষের ভয়ঙ্কর ও হিংস্র হওয়ার পিছনে এদুটো প্রবৃত্তির কোনটারই কোন ভুমিকা থাকে না। ২৬/১১য় আজমল কাসবরা যা করেছিল কিম্বা মালালাকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে তা ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য নয়, আত্মরক্ষার জন্যও নয়। এক্ষেত্রে চেতনার মৃত্যুই একমাত্র কারণ। অন্যদিকে এই চেতনার সরব উপস্থিতিই মালালাকে করেছে বিপ্লবী। চেতনার খোঁজে তার লড়াই শুরু মাত্র এগার বছর বয়সেই। নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে তালিবানরা যখন হুঙ্কার তুলেছে, একফোটা মেয়েও সমান স্বরে গর্জে উঠেছে এই চেতনার জোরেই।
বস্তুতপক্ষে নারী শিক্ষার প্রসার ছাড়া সম্পূর্ণ ও প্রগতিশীল আধুনিক সমাজ গড়ে উঠতে পারেনা। আর এক্ষেত্রে একজন পুরুষের চেয়ে একজন নারীর ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং বেশি। কেননা, একজন নারী যখন মা হয় তখন সে-ই হয়ে ওঠে সন্তানদের প্রথম শিক্ষক। তার সহচর্যেই শিশুরা অধিকাংশ সময় কাটায়। প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম পাঠ পেয়ে থাকে মায়ের কাছে। শিশুর মনস্তত্ত্বের ভিত্তি তৈরী হয় মায়ের দ্বারাই। তাই মা যদি শিক্ষিত হয়, তবে শিশুর মনস্তত্ত্ব শিক্ষা গ্রহণের অনুকুলে চালিত হয় সহজেই। অধিকাংশ সময় বাড়ির বাইরে থাকার কারণে পিতার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ে যায়। তাই একজন পুরুষ শিক্ষিত হলে একটি পরিবারের একজন সদস্য শিক্ষিত হয়ে ওঠে, অন্যদিকে একজন নারী শিক্ষিত হলে একটা পুরো পরিবার শিক্ষিত হয়ে ওঠা সহজতর হয়ে যায়। সুতরাং মালালার বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক এটাই আমাদের একান্ত ইচ্ছা। আসুন, আমরা মালালার পাশে থাকি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন