সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির অধীনে আমরা

আমরা কি সত্যি স্বাধীনতা পেয়েছি

ছিলাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে, আছি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির অধীনে।

ব্রিটিশ শাসনে আমরা:
১৯৪৭ সালের আগে প্রায় ২০০ বছর দেশ শাসন করেছে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টররা সরাসরি এই শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন না। তারা তাদের সমর্থক রাজনীতিকদের দেশ শাসনের দায়িত্বে বসাতেন। তাদের দিয়েই কোম্পানি ভারত, চিন-সহ পৃথিবীর অন্যান্য উপনিবেশগুলোতে নীতি নির্ধারণ ও তার প্রয়োগ ঘটাতেন।

ব্রিটিশ শাসনের উদ্দেশ্য - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক লাভই মুখ্য:
বলা বাহুল্য, এই নীতি নির্ধারণ ও প্রয়োগের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক লাভ। ভারতীয় অর্থনিতির সঙ্গে সম্পর্কিত সব ক্ষেত্র - যেমন শিল্প নীতি, কৃষি নীতি, বাণিজ্য নীতি - সবই নির্ধারিত ও পরিচালিত হত ইস্ট ইন্ডিয়ার কোম্পানির স্বার্থকে সামনে রেখে।

কোম্পানির সঙ্গে তৎকালীন ভারত সরকারের এই অশুভ আঁতাতের ভুরিভুরি উদাহরণ রয়েছে । মাত্র একটি উদাহরণ দেখুন। ১৮৩২ সাল। ভারতে রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব উঠলো। কেন? ব্রিটিশ পুঁজির বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা এবং বিদ্রোহ দমন-সহ অন্যান্য সামরিক প্রয়োজন মেটানো। ভারতের সাধারণ মানুষের ভালোমন্দের বিষয় এখানে একরত্তিও গুরুত্ব পায়নি।

ইচ্ছা করলেই সরকার রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নিজে নিতে পারত। কিন্তু  সরকার তা নেয় নি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পুঁজিপতিদের চাপে এই দায়িত্ব বেসরকারি কোম্পানির হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রস্তাব আসে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিন্সুলার রেল কোম্পানি’র নামে। সিদ্ধান্ত হওয়ার পর প্রশ্ন তোলা হয়, ভারতে রেলপথ নির্মাণ যে লাভজনক হবে, তার গ্যারান্টি কোথায়? কোন শর্তে তারা পুঁজি বিনিয়োগ করবে?

ভারতীয় জনগণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ট্যাক্সের টাকায় চালু হল ‘গ্যারান্টি ব্যবস্থা’। শর্তগুলো দেখুন -
  • ১) সরকার বিনামুল্যে জমি দেবে। মানে, ভুমিপুত্ররা জমি হারাবে।
  • ২) কোম্পানির বিনিয়োগ করা মূলধনের ওপর সরকার ৫ শতাংশ হারে সুদ দেবে কোম্পানিকে।
  • ৩) এর পরও যদি লাভ না হয়, ভারত সরকার কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেবে।
আসল কথা হল, ভারতীয় জনগণকে শোষণের আরও একটা উপায় বের করে দেওয়া হল এই তিন নম্বর শর্তে। লাভের গ্যারান্টি থাকায় রেল কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে খরচ বাড়িয়ে দেখিয়ে যথেচ্ছভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে থাকে।

ভারতীয়রা প্রতিবাদ করলে বাধ্য হয়ে সাময়িক পিছু হটলো ব্রিটিশ সরকার। রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নিজ হাতে নিল। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো এটা মানতে পারেনি। না পারাই স্বাভাবিক। নিশ্চিত মুনাফালাভের এমন দরজা যদি বন্ধ হয়, মাথা কীভাবে ঠিক রাখা সম্ভব? ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ঝড় উঠল। সরকারি উদ্যোগে রেলপথ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। সখা বললে, সখি কীভাবে ফেলবে কথা। স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানির চাপে সরকার রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব পুনরায় কোম্পানির হাতেই তুলে দিল।

ব্রিটিশ পুজির স্বার্থ ও ভূমিপুত্রদের অবস্থা
অন্যদিকে ভুমিপুত্ররা জমি হারালো। অথচ ক্ষতিপূরণ নেই। তাদের মতামত দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, দেশকে ভালোবেসে আত্মত্যাগ করতে হবে। না করতে চাইলে তুমি দেশদ্রোহী। সিধু-কানু-বিরসা মুন্ডারা তাই দেশদ্রোহী হল। খেয়াল করুন, আজও 'সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলিতেছে'। যারা হুড়োহুড়ি করে সিধু-কানু-বিরসাদের গলায় মালা পরাচ্ছেন, শহিদের মর্যাদা দিচ্ছেন, তারাই আবার কোম্পানির শাসকদের মত ভুমিপুত্রদের জমি কেড়ে নিচ্ছেন এবং দিচ্ছেন দেশিও কোম্পানিকে, কখনও বিনামুল্যে আবার কখনও নামমাত্র দামে। প্রতিবাদ করলে হয় দেশদ্রোহীর খেতাব, নয় তো পুলিশের গুলি। সচেতন মানুষ প্রতিবাদীদের সমর্থন করলে, তারা আর্বান নকশাল খেতাব নিয়ে যাচ্ছেন জেলে।

ভূমিপুত্রদের দুর্দশায় ভূমিপুত্রদের দায়
আমরা এমনই হতভাগা, তখন যেমন আমাদের পুর্বপুরুষদের বড় অংশের (সাধারণ) মানুষ ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা কোম্পানির সুবিধা করে দেওয়া এবং তার ফলে নিজেদের এই সর্বনাশের কথা বুঝতে পারেনি, তেমনি এখনও তাদের উত্তরসূরি - আমরাও তা বুঝতে পারছি না। মেতে আছি হিন্দু আর মুসলমান পরস্পর পরস্পরের কত বড় শত্রু তার দুর্বুদ্ধ হিসাব নিয়ে। যাবতীয় সমস্যার সমাধান খুঁজছি মন্দির আর মসজিদের ইতিহাস পাল্টে দেয়ার মধ্যে।

এই যে পাচ্ছি না তার কারণ কী? কার দ্বায় কতটা?

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষের কাছে পড়াশোনার সুযোগ কমবেশি তৈরি হয়েছে। নিজেকে জানা বোঝার, নিজেদের অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের উপায় বুঝে নেয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু আমরা তা পারিনি। পারেনি, তার কারণ আমরা পড়াশোনা করতে চাই না। আর ইতিহাসে তো আমাদের গভীর এলার্জি। আবার যারা পড়েন, তারা শুধু নোট মুখুস্থ করেন পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার জন্য। ফলে, ইতিহাসবোধ তৈরি হয় না। কারণ, ইতিহাস পাঠের মূল উদ্দেশ্যই তো তারা জানেন না, তাই সেভাবে পড়েনও না, বোঝেনও না।

ইতিহাস হচ্ছে মানুষের তৃতীয় নয়ন। কারণ, দুই নয়ন দিয়ে শুধু বর্তমানটাই দেখা যায়। কিন্তু বোঝার জন্য তাঁকে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। যার সাহায্য ছাড়া বর্তমানকে বোঝা যায় না, সে হল ইতিহাস। ইতিহাসের আয়নায় বর্তমান ও ভবিষ্যতের আসল রূপ দেখা যায়। পাওয়া যায় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে আগাম ধারণা। তাই ইতিহাস মানুষের তৃতীয় নয়ন।

অথচ সেই নয়নকেই আমরা সবচেয়ে বেশি অবহেলা করি। আমাদের কাছে ইতিহাস নাকি নিছক ‘অতীতের কাহিনি’। মনে রাখা দরকার, শাসকের পক্ষ থেকে ‘কাহিনি’ শব্দের আড়ালে চালানো হয় সবচেয়ে নিকৃষ্টতম এক ষড়যন্ত্র। ‘কাহিনি’ বললেই সেখানে চলে আসে কল্পনা ও মনগড়া কথার উপস্থিতি, যা বৈষয়িক মানুষের কাছে প্রায় মূল্যহীন। তাই সাধারণ মানুষ ইতিহাসের প্রতি আকৃষ্ট হন না। তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন না। কিন্তু ইতিহাস তো তা নয়। ইতিহাস হল মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ধারাবাহিক বিবরণ। বিশ্লেষণ করলে কী দাড়ায়? ‘মানব’ অর্থ মানুষ। ‘সভ্যতা’ কথার মধ্যে থাকে মানুষের জীবনের পাঁচটি চালিকা শক্তি যা, মানুষকে শধু বাঁচিয়ে রাখে না, এগিয়ে নিয়ে যায়। এই পাঁচটি বিষয় হল মানুষের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্ম। এই পাঁচটা বিষয়কে কেন্দ্র করেই মানুষের অস্তিত্বের স্বীকৃতি মেলে, যা ‘মানব সভ্যতা’ নামে পরিচিত।

এই সভ্যতা যুগ যুগ ধরে কীভাবে কাদের দ্বারা একটু একটু করে পাল্টে গেল, কীভাবে এবং কতটা ক্রিতদাসের জীবন থেকে খেটে খাওয়া মানুষের মুক্তি ঘটলো, কীভাবে মানুষ তার ব্যাক্তিস্বাধীনতা ও গতান্ত্রিক অধিকার আদায় করে নিতে পারল, কীভাবে নারী তার সমাজে মানবিক অধিকার ফিরে পেল কিম্বা কতটা পেল না,যুগ যুগ ধরে কারা কীভাবে সাধারণ মানুষের এই অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল, তার ধারাবাহিক বিবরণ ও বিশ্লেষণ থাকে ইতিহাসের পাতায়। সেই ইতিহাস না পড়লে মানুষ কী পেল, কীভাবে পেল এবং তা ধরে রাখার উপায় কী, সে সম্পর্কে কিছুই জানতে বা বুঝতে পারে না; তার সাত দশকের (মানুষের গড় আয়ু) একমাত্র জীবনে। একজন মানুষকে জন্মের পর-পরই যদি কোন বদ্ধ ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়, এই পৃথিবীটা তো তার কাছে একটা চার দেওয়াল ঘেরা ছোট্ট কুঠুরি ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না।

তাহলে কী দাঁড়ালো? কীভাবে আমরা আমাদের নিজেদের এবং নিজেদের পৃথিবীটাকে চিনব? ইতিহাস ছাড়া বিকল্প নেই। তাই ইতিহাস মানুষের তৃতীয় নয়ন। আরে নয়নহীন নিম্নবর্গের মানুষ বুঝতেই পারেন না অধিকার আদায়ে ও তার সংরক্ষণে তার কি করনীয়। তাই এ দায় অনেকটাই ভূমিপুত্রদের।

ভারতীয় পুঁজির দাপট ও ভুমিপুত্রদের দুরবস্থা :
ইতিহাস বুঝে বুঝে পড়লেই জানা যায়, আমাদের দেশে ব্রিটিশ বণিকদের শাসন শেষ হয়েছে; শুরু হয়েছে দেশীয় বণিকদের শাসন। ব্রিটিশ বণিকদের মতই দেশের সরকারকে দেশীয় বণিকরা নিয়ন্ত্রণ করছে। একই রকম ভাবে সাধারণ মানুষের শ্রমকে ফাঁকি দিয়ে ব্রিটিশ বণিকরা যেমন তাদের পুঁজির পাহাড় তৈরি করেছিল, ঠিক সেভাবেই আজকের দেশীয় বণিকরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রেখে খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমকে শোষণ করছে। এর বিরোধিতা করে সিধু-কানুরা যেমন ব্রিটিশ সরকারের কাছে সন্ত্রাসবাদী এবং দেশদ্রোহী তকমা পেত, এখনও সেটাই পায় ভূমিপুত্ররা স্বাধীন (নিজের?) সরকারের কাছ থেকে।

ব্রিটিশ ও ভারতীয় পুঁজির কৌশলগত তুলনা
শাসনের এই যন্ত্রকে চালু রাখতে বৃটিশদের সহযোগিতা করেছিল এ দেশের জমিদার, মহাজনসহ উচ্চবর্গের ( আপনি পড়ুন উচ্চবর্ণের) ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এখনও তারাই (সংখ্যায় গুটিকতক) দেশীয় পুঁজিপতিদের কাছ থেকে উচ্চহারে বেতন নিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের শোষণে সহযোগিতা করছে।

সুতরাং পূর্বের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জায়গায়, স্বাধীন ভারতের শাসন পরিচালনা করছে ভারতীয় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো। মূলত এবং প্রধানত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানিগুলোই এখন সরকার পরিচালনায় সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণের অধিকার কায়েম করেছে। এদের সহযোগিতা করছে একটি পুঁজিবাদী রাজনৈতিক দল, যাদের পরোক্ষভাবে নিয়োগ ও প্রত্যক্ষভাবে অর্থের যোগান দেয় এই সব ইন্ডিয়ান কোম্পানিগুলো। বর্তমান সরকারের পিছনে গুজরাটকেন্দ্রিক পশ্চিম ভারতীয় কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী ভূমিকা রয়েছে।

সাধারণ মানুষ জানেন না, এরাই (এদের পূর্বপুরুষরা) ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের দালালি করেছে। কখনো জমিদার হিসাবে, কখনো মহাজন হিসাবে এবং কখনো ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্রিটিশ সরকারের চাকরিজীবী হিসাবে।

ব্রিটিশ সরকার আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার নাম করে মূলত কেরানি তৈরি করার পাঠক্রম তৈরি করেছিল। কারণ, সাম্রাজ্যবাদী শাসক হিসেবে এ দেশে তাদের শাসন ও শোষণকে কায়েম ও মজবুত রাখার জন্য শুধুমাত্র ‘মাছিমারা কেরানি’ই দরকার ছিল।

আজকের পুঁজি নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝাঁ চকচকে পরিকাঠামো দেখিয়ে সেখানেও মধ্যবিত্ত মানুষকে কর্পোরেট পুঁজির অনুগত কেরানি তৈরির ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। নিতি-নৈতিকতা, সাম্য-অসাম্যের ধারণা সেখানে অলীক বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয়। শেখান হয় চার্লস ডারউইনের যোগ্যতমের উদবর্তন তত্ত্বের সাম্রাজ্যবাদী বিকৃত ব্যাখ্যা,যা ‘যোগ্যতম জাতির শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষা’র তত্ত্ব নামে পরিচিত। বন্য জীবের মত, নিজের নিয়েই বাঁচতে চাওয়াকে ‘প্রকৃত বাঁচা’ বলে ভাবতে শেখানো হচ্ছে। তাই তো নির্দ্বিধায় পিতা পুত্রকে, কিম্বা পুত্র পিতাকে হত্যা করে ফেলছে হর-হামেসাই। পুঁজিবাদী অর্থনীতির এ এক বিষময় ফল।

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির অধীনে ভূমিপুত্র
তাহলে কী দাঁড়ালো? ছিলাম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে, আর এখন আছি ইন্ডিয়ান (পড়ুন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান) কোম্পানির অধীনে। এটাই আমাদের আজকের স্বাধীনতা।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে