সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নীতির রাজা, না রাজার নীতি - কোন্ পথে নির্বাচনী রাজনীতি?

নীতির রাজা, না রাজার নীতি - কোন্ পথে নির্বাচনী রাজনীতি?

কোন্ পথে নির্বাচনী রাজনীতি?
নীতির রাজা,  না রাজার নীতি -  কোন পথে  নির্বাচনী রাজনীতি

আলী হোসেন

নির্বাচন কেন করা হয় :

এক কথায়, ভোট বা নির্বাচনের উদ্দেশ্য হল, দেশে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য শাসক নির্বাচন করা। এখন এই নির্বাচন প্রক্রিয়ায় শাসক হিসাবে জনগণ কাকে, কেন, কীভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করবেন - এগুলো অত্যন্ত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সদুত্তর জানা না থাকলে, জনগণের কাছে আধুনিক ভোট বা নির্বাচন ব্যবস্থা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা কী :

তাই, এই নির্বাচন উপলক্ষে আগামীতে কোন্ দল কোন্ কোন্ পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং আরও ভালোভাবে সমাজে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার পরিবেশ তৈরি করতে পারবে, তার খতিয়ান মানুষের কাছে উপস্থাপন করার কথা। এটাই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাথমিক কাজ।

আসলে এগুলোই আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এবং তা মেনেই প্রত্যেকটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলকে কাজ করতে হয়। এগুলো বাদ দিলে দেশ আধুনিক ও গণতান্ত্রিক - এ দাবি করা যায় না। বাদ দিলে, তার অর্থ দাঁড়ায়, দেশ মধ্যযুগীয়, কিংবা প্রাচীনযুগীয় মানসিকতা নিয়ে এগোতে চাইছে। বলা বাহুল্য, পিছন দিকে হাঁটলে, মানুষ এগোতে পারে না; পিছিয়েই যায়। ভোটে অংশ নেওয়ার আগে এই ভাবনাও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। অর্থাৎ আধুনিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিক সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করে তোলাও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য :

দেশের নাগরিক সম্প্রদায় নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উপরোক্ত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রধান শর্তগুলো সম্পর্কে জানবেন এবং তার ভিত্তিতে, সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা যাদের ইস্তাহারে আছে, তাদেরকে বেছে নেয়ার সুযোগ পাবেন, ভোটদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এটাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার আসল উদ্দেশ্য। সোজা কথায় : ১) অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতাকে (এগুলো আধুনিকতার ও গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণার প্রধান শর্ত) মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোন্ দল কীভাবে কাজ করবে, তারই আলোচনা, পর্যালোচনা কিংবা সমালোচনা করার সুযোগ করে দেওয়া। ২) এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাগরিক সমাজকে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার সবচেয়ে উপযুক্ত মানুষদের হাতে অর্পণ করার সুযোগ করে দেওয়া হল নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য।

আমাদের দেশে কী হচ্ছে :

কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, আমাদের দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল (কিছুটা ব্যতিক্রম বামপন্থীরা) এগুলোকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যেই আনে না। তাদের এজেন্ডায় থাকে হিংসা, ষড়যন্ত্র, একে অপরের নামে ব্যক্তিগত কুৎসা, ধর্মের নামে বিভাজন, লাগামহীন মিথ্যাচার ইত্যাদি নিম্নমানের ও নিম্নরুচির বিষয়, যা আসলে আধুনিক রাষ্ট্রনীতির ঘোরতর পরিপন্থী। আধুনিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিক সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত করে তোলার এই দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে দক্ষিণপন্থী দলগুলো, সযত্নে এড়িয়ে চলে। বর্তমানে এদের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে জনগণকে ধর্মশিক্ষা দেওয়া, যার সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্য বিষয়ক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের কোন সম্পর্কই নেই। মন্দির-মসজিদ তৈরীর মধ্য দিয়ে যে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হওয়ার নয়, তা তারা জনগণকে বুঝতে দেন না। তাদের মূল লক্ষ্য, জনগণকে যতটা পারো ধর্মান্ধ করে ফেলো এবং তাদের সেই অন্ধকারে রেখে দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাও। আর অভুক্ত জনগণকে ঈশ্বর ও পরকালের লোভ দেখিয়ে তার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে বাধ্য করো।

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক নেতা ও তাদের পৃষ্ঠপোষক কর্পোরেট শ্রেণি যে ধার্মিকের ছদ্মবেশে আমাদের শাসন ও শোষণের রাস্তা পাকা করে নেওয়ার চেষ্টা করছে - এটাই বুঝতে পারিনা। জানতে পারি না, মানব সভ্যতার আদিকাল থেকে শাসকগোষ্ঠী এটাই করে আসছে। প্রাচীন মিশরের রাজা আখেনাটেন (৩৩০০ বছর আগে) থেকে আজকের মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম শাসকগণ - এটাই করে আসছে। আমরাও আবার নতুন করে সেই রাস্তায় হাঁটার শপথ নিচ্ছি। নিচ্ছি কারণ, এটা বুঝতে গেলে, যে শিক্ষার প্রয়োজন, তা আমাদের নেই। রাজনৈতিক দলগুলোও চায় না, জনগণের মধ্যে এই শিক্ষার প্রসার ঘটুক।

মিডিয়ার ভূমিকা কেমন :

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ নামে পরিচিত মিডিয়াগুলো সারাদিন অতীত ঐতিহ্যের নাম করে পিছিয়ে পড়া ও প্রাচীন ধ্যান-ধারণাকে জনগণের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের আলোচনা-পর্যালোচনা বা সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হল এগুলোকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা। ২৪ ঘন্টা জুড়ে যদি মানুষের সামনে নেগেটিভ অ্যাটিটিউট নিয়েই আলোচনা হয়, তাহলে নাগরিক সমাজের মনস্তত্ত্ব থেকে পজেটিভ ও প্রগতিশীল অ্যাটিটিউডগুলো বিলুপ্ত হতে বাধ্য। এভাবে চললে, নতুন প্রজন্মের মধ্যেও দ্রুত এই ধরনের নেতিবাচক ও পিছিয়ে পড়া মনোভাব ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, নতুন প্রজন্মের শিক্ষা এবং রাজনৈতিক চেতনা গঠনে মিডিয়ার গভীর প্রভাব থাকে। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টাই করে চলেছে। অধিকাংশ সাধারণ নাগরিকের মধ্যে তাই নেতিবাচক মনোভাব ভয়ংকর ভাবে বাড়ছে।

পরিবারের পিতা-মাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকার পর নাগরিক সমাজের নৈতিক চরিত্র গঠনে রাজনৈতিক নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে। রাজনৈতিক নেতারা যদি লাগামহীন দুর্নীতির মধ্যে ডুবে থাকে, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে প্রমোট করে, সাধারণ মানুষও দুর্নীতিকে বৈধ এবং কুসংস্কারকে বিজ্ঞান বলে ভাবতে শুরু করে। নিরপেক্ষ, উন্নত ও আধুনিক প্রগতিশীল সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ মিডিয়াই একমাত্র পারে রাজনৈতিক নেতাদের এই লাগামহীন দুর্নীতি রুখতে ও জনগণকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি, মিডিয়াগুলোর অধিকাংশই নিরপেক্ষভাবে এই কাজ করছে না। ধর্মের নামে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে প্রমোট করে যাচ্ছে অবলীলায়। মিডিয়ার কর্পোরেট মালিক সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের জন্য সরকার পক্ষের দুর্নীতিকে অবলীলায় আড়াল করে, নিম্নমানের এবং পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্র দর্শনের স্বপক্ষে আলোচনায় ব্যস্ত থাকছে।

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রনীতির অনুসারী হওয়া। রাষ্ট্রদর্শনে এই ধর্মনিরপেক্ষতার দুটো মুখ। একটা পুরনো, অন্যটা আধুনিক। পুরনো ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বৈশিষ্ট্য হলো, রাষ্ট্র সব ধর্মকে সমান চোখে দেখবে এবং সমানভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করবে। প্রয়োজনে তাকে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করবে। এই রাষ্ট্র দর্শন মূলত মধ্যযুগীয়। আমাদের দেশে আকবর থেকে শিবাজী - অধিকাংশ রাষ্ট্রনেতা এই নীতি অনুসরণ করে রাজ্য শাসন করেছেন। কিন্তু আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতার বৈশিষ্ট্য হলো, রাষ্ট্র সমস্ত রকম ধর্মীয় অনুষঙ্গ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখবে। কারণ ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়। তা মানুষ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। সরকার একপক্ষকে সমর্থন করলে, অন্য পক্ষ ক্ষুব্ধ হবেন এবং দেশ সংকটে পড়বে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জহরলাল নেহরুর রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনায় এ ধরনের নীতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু পরবর্তী সময়ের রাজনীতিকরা ধর্মনিরপেক্ষতার এই আদর্শকে কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় রীতিনীতি অনুসরণ শুরু করে। বর্তমানে, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল আরও একধাপ এগিয়ে শুধুমাত্র সংখ্যাগুরুর ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছে। আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার জন্য এটা ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অথচ আমাদের দেশের মিডিয়া এর বিরোধিতা না করে, হিংসা ও বিদ্বেষ ভাষণকে কেন্দ্র করে, প্রাইম টাইমকে ব্যবহার করে, এই অসুস্থ ও পিছিয়ে পড়া চেতনাকেই উৎসাহিত করে চলেছে লাগামহীন ভাবে।

বেশিরভাগ মিডিয়া এবং তাদের উপস্থাপকদের কথা বলার টোন শুনলে এবং বাচনভঙ্গি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে, যাত্রাপালার হিরো কিংবা সঙদের কথা মনে পড়ে যায়। কখনো পাড়ায় পাড়ায় গুজব ছড়িয়ে বেড়ানো, হল্লা মাচানোর স্বভাব নিয়ে ছোটাছুটি করে বেড়ানো যে সব অকাম্মাক দেখা যায়, কেন জানিনা, (সত্যিই কি জানিনা?) তাদের কথাও মনে পড়ে। শান্ত ও নম্র ভাবে, ভদ্র ও পরিশীলিত শব্দচয়নে এবং বুদ্ধিদীপ্ত বাচনভঙ্গি দিয়ে নিরপেক্ষভাবে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপস্থাপন করার বিষয়টি প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। কে, কত জোরে চেঁচিয়ে সত্যকে মিথ্যার আর মিথ্যাকে সত্যের সঙ্গে গুলিয়ে দিতে পারে, যেন তারই ট্রায়াল চলে স্টুডিও জুড়ে। আর তারা যাদের বক্তা করে নিয়ে আসে, তারা এতই অসহিষ্ণু যে, আলোচনা করার বিজ্ঞানসম্মত বিধি ও নীতি না মেনে, অশিক্ষিত মানুষের মত ঝগড়ায় নেমে পড়ে। নিরপেক্ষতা শব্দটা তো মিডিয়ার অভিধান থেকে আগেই বিদায় নিয়েছে।

এসবের পরিণতি :

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যদি সারাদিন ধরে এইভাবে এ ধরনের কাজই করে চলে এবং রাজনৈতিক দলগুলো যদি সারাদিন ধরে এই হিংসা, ষড়যন্ত্র, কেচ্ছা নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তবে সাধারণ মানুষ রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তা তো ভুলে যাবে! দেশে যারা নতুন নাগরিক হিসেবে উঠে আসছে, তাদের কাছে এটাই প্রতিষ্ঠিত হবে যে, রাজনীতি মানেই হচ্ছে হিংসা, ষড়যন্ত্র ও বিদ্বেষ ভাষণ দিয়ে যেনতেনও প্রকারণে ক্ষমতা দখল করার লড়াই। ভাববে, এটাই রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং ন্যায় সঙ্গত পদ্ধতি। রাজনীতি তাদের কাছে ‘নীতির রাজা’ না হয়ে, ‘রাজার নীতি’ হয়ে দেখা দেবে। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার প্রসার ঘটবে, যা একমাত্র প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। দুঃখের হলেও সত্যি, ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রথম ১০টি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।

দেশের ভবিষ্যৎ :

সুতরাং এভাবে যদি একটা দেশের নেতারা এবং মিডিয়াগুলো রাজনীতি করে, লিখে নিন, সে-দেশ কখনো আধুনিক জগত সভায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। মাথা তুলছি, অনুগত মিডিয়ার মাধ্যমে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হয় তো বলা যাবে, কিন্তু বাস্তবে মাথা হেঁটই হবে। ইতিমধ্যেই আমরা এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। মিডিয়া দেখাচ্ছে, আমরা পৃথিবীর পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হতে চলেছি, আর বৈশ্বিক ক্ষুদার সূচক (২০২৩) দেখাচ্ছে, ১২৫টি দেশের মধ্যে আমরা ১১১ তম স্থান ‘অলংকৃত’ করছি।
--------xx--------

👉প্রবন্ধটি আজ একই সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে দিনদর্পণ দৈনিক পত্রিকায়

পত্রিকাটি সরাসরি পড়ুন :👇

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে