সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমরা কি সত্যিই স্বাধীন হয়েছি?

আমরা কি সত্যিই স্বাধীন হয়েছি?

স্বাধীনতা দিবস ও একটি প্রশ্ন : ভারত কতটা স্বাধীন হয়েছে?

স্বাধীনতা সম্পর্কে আলী হোসেনের প্রবন্ধ, আমরা কি সত্যিই স্বাধীন হয়েছি
ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন ছাত্রদের
দেশের ৭৭-তম স্বাধীনতা দিবসে আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা! এই দিনটি আমাদের সকলের জন্য গৌরবময় এবং পবিত্র। ...আমরা সবাই, সমানভাবে, এই মহান দেশের নাগরিক। আমাদের সবার সমান সুযোগ সুবিধা ও অধিকার রয়েছে এবং আমাদের কর্তব্যও অভিন্ন।
গত ১৪ই আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে, রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের ৭৭-তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে — এই কথাগুলো বলেছেন। এখন প্রশ্ন হল, আমাদের সবার সমান সুযোগ সুবিধা সত্যিই কি আছে? আসুন, ইতিহাসের পাতায় চোখ রেখে বোঝার চেষ্টা করি।

১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইংল‍্যান্ডের তৎকালীন রাণী প্রথম এলিজাবেথ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেন। ১৬৯০ সালে এই কোম্পানিটিই কলকাতায় পৌঁছায় বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। এরপর পলাশী, বক্সার সহ একাধিক ষড়যন্ত্র ও নামমাত্র যুদ্ধের সাহায্যে এবং ১৭৬৫ সালে দেওয়ানী লাভের (রাজস্ব আদায়ের অধিকার) মধ্য দিয়ে ভারতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রস্তুত করে। ১৭৭২ সালে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার অজুহাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বেশ কিছু আইন পাস করে নবাবের নিজামতি ক্ষমতা (প্রশাসনিক ও সামরিক) কেড়ে নিলে বাংলায় নবাবী শাসনের পতন ঘটে এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের পত্তন হয়। আইনগতভাবে এভাবেই বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়। এরপর ইঙ্গ-মহীশূর, ইঙ্গ-মারাঠা, ইঙ্গো-শিখ যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের প্রায় অর্ধেক তারা তাদের সরাসরি শাসনে নিয়ে আসে। বাকি অংশ (৬০১টি দেশীয় রাজ্য) স্বাধীন দেশ হিসাবে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।

আমাদের স্বাধীনতা মানে হল, এই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামের বিদেশি বণিক সংস্থা এবং পরবর্তীকালে (১৮৫৮ সালের পর) তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্রিটিশ সরকারের শাসন থেকে মুক্ত হওয়া। এটাকেই আমরা স্বাধীনতা বলে মনে করি। দেশীয় বণিকদের মিডিয়া ও দেশীয় বণিক নিয়ন্ত্রিত সরকার, আমাদের সেটাই শেখায়। আর ঘটা করে তা আমাদের পালন করতে বলে। কিন্তু সত্যিই কি আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি?

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ  করলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ভারতীয় জনগণের একটা ক্ষুদ্র অংশ অবশ্যই স্বাধীনতা পেয়েছে। এই ক্ষুদ্র অংশ ‘আমরা’ অর্থাৎ আম জনতা নয়। এই ‘আমরা’ হল ভারতীয় শিল্প-মালিক ও বণিক সংস্থাগুলোর মালিক সম্প্রদায় এবং নেতা মন্ত্রী হিসাবে পূর্বতন জমিদার ও দেশীয় রাজাদের উত্তরসূরিরা।

ব্রিটিশ আমলে এই ভারতীয় শিল্প মালিক ও বণিক সংস্থাগুলো স্বাধীনভাবে এবং সরকারি আনুকূল্যে শিল্প ও বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারত না। ব্রিটিশ সরকারের শিল্পনীতি ও বাণিজ্য নীতি পরিচালিত হত ইউরোপীয় শিল্পপতি, বিশেষ করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও অন্যান্য বণিক-গোষ্ঠীর অনুকূলে। এই কারণেই স্বাধীনতা-পূর্ব কালে ভারতে দেশীয় মালিকানায় তেমন কোনো ভারি-শিল্প ও বড় কোন বনিকগোষ্ঠী গড়ে উঠতে পারেনি।

১৭৬৫ সাল থেকে ১৮১৩ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একচেটিয়া ভাবে এদেশে বাণিজ্যিক সুবিধা ভোগ করে এসেছে।  আর দেশীয় বণিকরা তা থেকে বঞ্চিত থেকেছে।

অন্যদিকে, উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে পর্যন্ত ভারতীয় উদ্যোগে কোনো শিল্পের বিকাশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত সরকার করতে দেয়নি; তাদের বৈষম্যমূলক শিল্পনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে। দীর্ঘ সময় পর, ১৯০৩ সালে ভূবিদ্যার বাঙালি অধ্যাপক প্রমথনাথ বসু ময়ূরভঞ্জের গরুমহিষানী অঞ্চলে লৌহ খনি আবিষ্কার করলে, তার ওপর ভিত্তি করে ১৯০৭ সালে জামশেদ জি টাটা ‘টাটা আয়রন এন্ড স্টিল কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন। আমার জানা মতে, স্বাধীনতা-পূর্ব কালে এই একটিমাত্র ভারী শিল্পকেন্দ্র ব্রিটিশ সরকারের ছাড়পত্র পায়।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার এদেশ থেকে চলে গেলে ভারতীয় বনিক ও শিল্পপতিদের বঞ্চনার অবসান ঘটে। তারা এদেশের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের অনুকূলে শিল্প ও বাণিজ্য নীতি প্রণয়নের সুযোগ পায়। অর্থাৎ এই নীতির মাধ্যমে তারা শিল্প ও বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার অধিকার লাভ করে।

সুতরাং প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা লাভ করেছে ভারতের এই শিল্প ও বণিক গোষ্ঠীগুলো। তারাই এখন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের মত করে পার্লামেন্টে আইন পাস করিয়ে নেয় এবং পরোক্ষে তারাই দেশ শাসন করে।

অর্থাৎ আগে আমাদের শাসন ও শোষণ করত বিদেশি বণিকরা, তাদের নিয়ন্ত্রিত ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায়। আর এখন স্বদেশী বণিক কোম্পানিগুলো তাদের নিয়ন্ত্রিত সরকারকে দিয়ে তাদের অনুকূলে শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষিনীতি প্রণয়ন করে সাধারণ মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনার কাজ অব্যাহত রেখেছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ আমলে যে তিমিরে ছিল, এখনও প্রায় সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

অর্থাৎ বিদেশি বণিক সংস্থার নিয়ন্ত্রিত সরকার কর্তৃক শোষিত হওয়ার পরিবর্তে দেশীয় বণিক ও শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারের মাধ্যমে শোষিত ও বঞ্চিত হওয়ার ‘অধিকার’ পেয়েছে সাধারণ মানুষ।

এই স্বাধীনতা এসে কাদের কীভাবে লাভ হল?

মুঘল আমলের আগে পর্যন্ত জমির মালিকানা প্রাকৃতিক ভাবেই ছিল কৃষকের হাতে। ১৫৪০ সালে শের শাহ ক্ষমতা দখলের পর ‘পাট্টা’ দলিলের মাধ্যমে রাষ্ট্রের দেওয়া আইনগত মালিকানা লাভ করে। এই সময় থেকে ভূমি রাজস্ব বিভাগের সরকারি কর্মচারী কৃষকের কাছ থেকে শুধুমাত্র রাজস্ব আদায় করার দায়িত্ব পালন করত। এই কর্মচারীদের জমির ওপর কোনো মালিকানা ছিল না। ইংরেজরা এদেশে এসে ১৭৯৩ সালে ভূমি রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য কৃষকের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেয়। জমিদার (পূর্ব ভারতে এরা জমিদার ও পশ্চিম ভারতে পতিদার বা প্যাটেল নামে পরিচিত) নামক একটি অনুগত মধ্যস্বত্তভোগী শ্রেণি তৈরি করে জমির মালিকানা তাদের হাতে দিয়ে দেয়। এভাবে প্রথম ভারতীয় কৃষক জমির মালিকানা হারিয়ে ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়। সেই কৃষক কী জমির মালিকানা আজও ফিরে পেয়েছে? পায়নি। তাহলে ভূমিহীন কৃষক কীসের স্বাধীনতা পেল? খাতায়-কলমে দেশ থেকে জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে ঠিক, কিন্তু কার্যতঃ পূর্বের জমিদার ও তাদের উত্তরসূরীরাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রী হয়ে দেশে কৃষকদের কাছে জমি বন্টনের (ভূমি সংস্কারের কাজ) প্রক্রিয়াটি বন্ধ রেখেছে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে নামে-বেনামে ভারতে এখনো হাজার হাজার বিঘে সম্পত্তি এক একজন ব্যক্তি অধীনে রয়ে গেছে। আর কৃষক ভূমিহীন তকমা নিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিকে জমিতে ফসল ফলিয়ে চলেছে।

আগে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোনীত শাসক কোম্পানির স্বার্থে কাজ করত। তাদের স্বার্থেই শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্য নীতি নির্ধারণ করত। আর এখন আমাদের সরকার, স্বদেশী বণিকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে  এবং তাদের স্বার্থেই শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করছে। ফলে কৃষক, কৃষি-শ্রমিক ও শিল্প-শ্রমিক তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পার্লামেন্টে আইন পাস করে দৈনিক আট ঘন্টা কাজের সময়সীমা বাতিল করে বারো ঘন্টা করা হয়েছে। তাহলে শিল্প শ্রমিকরা কীসের স্বাধীনতা পেল? 

এবার দেখুন, কোন কৌশলে সেই পরাধীনতার নাগপাশ কীভাবে  আজও আমাদের আটকে রেখেছে। স্বাধীনতা-পূর্ব কালে আদিবাসী সম্প্রদায় ইংরেজদের নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার (১৭৯৩ সালে প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বা জমিদারি প্রথা) কারণে জমি হারাচ্ছিল। ফলে চুয়াড়, কোল, সাঁওতাল, মুন্ডা, ভিল প্রভৃতি জনজাতি একের পর এক ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত করে। উচ্চবর্ণের জমিদারদের সহযোগিতায় এই বিদ্রোহ ইংরেজরা নির্মমভাবে দমন করে। ফলে আদিবাসীরা জমির ওপর শত-সহস্র বছরের অধিকার হারিয়ে ফেলে। সেই জমির অধিকার তারা ফিরে পেয়েছে? পায়নি। 

সেই জমির লড়াই আজও চলছে। আগে এদেশীয় জমিদারদের সহযোগিতায় ব্রিটিশ সরকার তাদের জমি কেড়ে নিত, এখন এদেশীয় শিল্প মালিক ও বণিকদের হয়ে দেশীয় সরকার শিল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ করে নিচ্ছে; অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাম মাত্র ক্ষতিপূরণ দিয়ে।

১৭৬৩ সালে সন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ। নেতা দেবী চৌধুরানী, মজনু শাহ। ১৭৮৩ সালে রংপুর বিদ্রোহ। নেতা নুরুল উদ্দিন, সহকারী নেতা দয়ারাম শীল। দুইজনই নিম্নবর্গের মানুষ। কৃষি জমিই তাদের একমাত্র সম্বল। ইংরেজ সরকার নিযুক্ত ইজারাদার দেবী সিং খাজনা আদায়ের নামে জুলুম শুরু করলে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ। সামনে রাখা হয়ছে নেতা হিসাবে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে, দিল্লি ও তার আশপাশের অঞ্চলে যার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ এবং ইংরেজদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সঙ্গে আছেন ঝাঁসি রানী লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, তাঁতীয়াটোপির মত শক্তিশালী হিন্দু রাজা। এটাই প্রথম হিন্দু মুসলমানের যৌথ অভিযান, যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত নড়িয়ে দিয়েছিল। মনে রাখা দরকার, এই বিদ্রোহকে বাংলার উচ্চবর্ণের উচ্চবৃত্ত ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় সমর্থন তো করেননি, উল্টে বৃটিশের পক্ষে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। ১৮৫৯ সালের নীল বিদ্রোহ। নেতা দিগম্বর বিশ্বাস, বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস, কাদের মোল্লা, রফিক মন্ডল প্রমুখ। ১৮৭০ সালে পাবনার কৃষক বিদ্রোহ। জমি বাঁচানোর লড়াই। নেতা ঈশান চন্দ্র রায় ও ক্ষুদি মোল্লা। এভাবে একের পর এক নিম্নবর্গের হিন্দু-মুসলিম কৃষকের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেখে ব্রিটিশ সরকার ও বণিক গোষ্ঠী এবং উচ্চবর্ণের দেশীয় জমিদার গোষ্ঠী প্রমাদ গোনে। শুরু করে বিভাজনের রাজনীতি। হিন্দু ও মুসলমানকে আলাদা জাতি হিসাবে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই উদ্দেশ্যেই ভারতের জন্য নতুন ধারার ইতিহাস রচনায় মন দেয় ব্রিটিশ সরকার, যা ‘সাম্রাজ্যবাদী ধারা’ নামে পরিচিত। এই ধারার ইতিহাস লেখা ও তা প্রচারের মাধ্যমে বিভাজনের রাজনীতর বীজ বোনা হয় সেদিন। একের পর এক মুসলিম শাসককে হিন্দু বিদ্বেষী হিসাবে তুলে ধরে হিন্দু-মুসলমানের যৌথ আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়া হয়।

এই ভাবে বিদেশি বনিকগোষ্ঠি তার সরকারকে টিকিয়ে রেখে শিল্প ও বাণিজ্যিক সুবিধা আদায় করার জন্য বিদ্বেষের রাজনীতির জন্ম দেয়। উচ্চবর্ণের জমিদার শ্রেণী তাদের জমিদারি শাসন ও শোষণ কায়েম রাখার জন্য ইংরেজদের সহযোগিতা করে। কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে এই বিকৃত ইতিহাসের জোরালো প্রচার শুরু হয়।

সেই একই চিত্র, স্বাধীন ভারতে, দেখুন সমানে চলছে। শুধু ব্রিটিশ শিল্প বণিকের জায়গায় দেশীয় শিল্প বণিকের উজ্জ্বল উপস্থিতি। এবং তৎকালীন জমিদার শ্রেণীর জায়গায়, নেতা মন্ত্রী রূপে তাদেরই উত্তরসূরীদের নিরঙ্কুশ উপস্থিতি। ইংরেজরা যে কাজ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ তৈরি এবং সেখানে বিকৃত ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে। স্বদেশী বণিক ও নেতা মন্ত্রীরা সেই কাজটাই করছেন নিজস্ব ডিজিটাল মিডিয়ার (টিভি ও সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদির) মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি ভাগে বিভক্ত হয়ে ধর্মের নামে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। অন্যদিকে অনুগত রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় এনে একের পর এক জনবিরোধী আইন পাশ করে নিজেদের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারছেন না।

লক্ষ্য করে দেখুন, একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ক ও লাভজনক শিল্প সংস্থাগুলো নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নতুন শিল্পনীতি ও শ্রম আইন ঘোষণা করে দেশীয় শিল্প বণিকদের জন্য ওই ক্ষেত্রগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রায়ত্ব সম্পত্তি মানে সাধারণ জনগণের সম্পত্তি। আর তার লাভ মানে, লভ্যাংশ শিক্ষা স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি হিসাবে জনগণের কাছে  ফিরে আসা। বেসরকারি বণিক তার মালিক হলে এই লভ্যাংশ মালিকের পুঁজির পাহাড় গড়তে সাহায্য করে মাত্র। সাধারণ মানুষের কোন লাভ হয় না।

ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে এই সরকারের তাহলে পার্থক্য কোথায়? নেই বললেই চলে । তাহলে কে স্বাধীন হল? স্বদেশী শিল্প-বাণিজ্য সংস্থাগুলি এবং সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীরা, যাদের সিংহভাগ পূর্ববর্তী জমিদার সম্প্রদায়ের উত্তরসূরী ও উচ্চবর্ণের মানুষ। সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্নবর্গের মানুষ কী পেলো? তারা পেল বিদেশি বণিক সংস্থার নিয়ন্ত্রিত সরকার কর্তৃক শোষিত হওয়ার পরিবর্তে দেশীয় বণিক ও শিল্পগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণাধীন ও জমিদারি খেতাব হারানো মন্ত্রীদের  দ্বারা গঠিত সরকারের  মাধ্যমে শোষিত ও বঞ্চিত হওয়ার ‘নতুন’ অধিকার।
----------xx-------

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে