বিজেপি ও আরএসএসের রাষ্ট্রচিন্তার অসারতা
The futility of BJP and RSS nationalism
যে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের মুক্তির জন্য, সেই ধর্মই যখন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে,তখন বুঝতে হবে সে-ধর্ম ধর্মব্যবসয়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
ধর্মব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল ধর্মপ্রাণ মানুষদের ধর্মগুরু বা ধর্মীয় নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, যা আসলে একধরণের অন্ধত্ব। আধুনিক শিক্ষার আলোয় যারা আসতে পারেনি, তারাই এই অন্ধত্বের শিকার। ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের এই অন্ধত্বকে খুব সহজে কাজে লাগাতে পারে। কারণ, ধর্মপ্রাণ মানুষ অলৌকিক শক্তির উপর ভরসা ও বিশ্বাস করে। সঙ্গে এও বিশ্বাস করে যে, ধর্মগুরুদের অনুসারী হয়ে চললে এবং ধর্মের অনুষ্ঠানিকতা, আচার-বিচার অনুসরণের সাথে সাথে ধর্মীয় নেতা ও সংগঠনে দান-ধ্যান করলেই ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবনে সাফল্য অর্জন সহজ হয়ে যাবে। এদের এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করে।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক বড় বড় ধর্মই কিন্তু সূচনালগ্নে ধর্মচর্চার বিধান হিসেবে এবং জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠি হিসাবে সৎকর্ম ও মানবিক মূল্যবোধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। মূল ধর্মগ্রন্থগুলো খুঁটিয়ে পড়লেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় অন্য যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয় তা হল সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিঃশর্ত বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ। সেই সঙ্গে, বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের প্রমাণ হিসেবেই দাবি করা হয়, সৎকর্ম ও মানুষের পরস্পরের প্রতি শর্তহীন ভালোবাসাকে। খ্রিস্টান, ইহুদি এবং ইসলাম ধর্ম-সহ বড় বড় শাস্ত্রীয় ধর্মের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই শক্তিশালী রূপ পেয়েছে।
ধর্মের এই মানবিক মুখের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যখন সাধারণ মানুষ দলে দলে সেই বিশেষ ধর্মের প্রতি সমর্থন দিতে শুরু করে,তখনই ছদ্মবেশী ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা ধার্মিক সেজে সেই দল বা সম্প্রদায়ের দন্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে বসে। উদ্দেশ্য, এই ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদের উপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। একজন মানুষের ওপর যখন আর একজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ বা সম্মোহনী ক্ষমতা কার্যকরী হয়,তখন প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির নিজস্ব ভাবনাচিন্তা ও শ্রমের উপর আধিপত্য কায়েম করতে সক্ষম হয়। এবং নিজেকে খুব সহজেই তাদের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা বা গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে।
যুগ যুগ ধরেই ধর্মব্যবসায়ীদের দুটো রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। একটা ধর্মগুরু হিসাবে, অন্যটা রাষ্ট্রগুরু হিসাবে। মনে রাখতে হবে, এরা সব সময়ই পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলি বিশেষত ইরান, সৌদি আরব, কাতার আফগানিস্তান সহ বহু দেশে এখনও এই ধরণর ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।
অন্যদিকে মিশ্র জনগোষ্ঠীর দেশগুলোতে ধর্মগুরুরা থাকেন একটু ভিন্ন রূপে। ইহলৌকিক লাভ ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পারলৌকিক বা স্বর্গীয় সুখের লোভ দেখিয়ে মানুষকে নিজের সমর্থনে সংগঠিত করে। এই সংগঠিত জনগণের ভোট প্রদানের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুকৌশলে রাজনীতিকদের কাছে হস্তান্তরিত করে, নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিতে। কোন কোন রাষ্ট্রনেতাও একইভাবে এই মানুষগুলোকে অন্ধভক্তে পরিণত করে। ধর্মের নামে বিভাজনকে উস্কে দিয়ে নির্বাচনের সময় তাদের ভোট নিজেদের ভোটবক্সে ফেলার মরিয়া চেষ্টা চালায়। অর্থাৎ ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল অথবা দখলে সাহায্য করাই এই ধরনের রাষ্ট্রনেতা বা ধর্মীগুরুদের প্রধান উদ্দেশ্য।
স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার পথ চলা শুরু হয়। আজ আমরা সেখান থেকে অনেকটাই পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছি। কেননা, বর্তমান শাসকদল মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশগুলোর ধাঁচে ধর্মীয় ভাবাবেগকে পুঁজি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের এবং তাকে স্থায়ীকরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর অবশ্যম্ভবী পরিণতি হিসেবে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশের মর্যাদাহানি ঘটছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে মর্যাদার আসনে ভারত পৌঁছেছিল, তা এখন প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্ম এবং রাষ্ট্র পৃথক সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে রাজনীতি ধর্মমুক্ত থাকে। ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস (ধর্ম বিশ্বাস নয়) ও কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে আধুনিক রাষ্ট্রদর্শন ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ সাধারণ মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করে।
পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ এই ধরনের রাষ্ট্রদর্শন দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তারাই দ্রুত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মান উন্নয়নে সফল হয়েছে। যুক্তিবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় দ্রুত সাফল্য অর্জন করেছে। সামগ্রিকভাবে একটি সফল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে তারা পৃথিবীতে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন-সহ বেশ কিছু দেশ ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক নীতিতে বিশ্বাসী হলেও রাষ্ট্রীয় ঐক্যকে সুদৃঢ ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছে এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রদর্শনের জোরেই। এভাবেই পৃথিবীতে এখন তারা প্রথম সারিতে উঠে এসেছে।
ধর্মব্যবসায়ীরা যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন তাদের প্রথম কাজ হয়ে ওঠে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে অন্ধ করে ফেলা। এই লক্ষ্যেই তারা সমাজে ধর্মান্ধতার প্রচার ও প্রসার ঘটায়। কারণ, ধর্মের মোড়কে অন্ধত্বের ক্যাপসুল জনগণকে খাওয়াতে পারলেই খুব সহজে তাদের ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে পারা যায়। তাই তারা রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও ধর্মশিক্ষার নামে অন্ধবিশ্বাসের চাষ শুরু করে। বিজ্ঞানের নাম করে অবিজ্ঞান বা অপবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়। পৃথিবীর যে যে দেশে ধর্মগুরুরাই রাষ্ট্রনেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে আছে, সেখানেই এই ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।
বিজেপি শাসিত দেশ ভারতবর্ষও আজ সে পথেই হাঁটার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভারতবর্ষের ভাষাগত জনবিন্যাস, নানান ধর্মীয় মতবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নামক বিশেষ রাজনৈতিক দর্শন - যার ওপর ভিত্তি করে ভারতীয় সংবিধান রচিত - এই পথে হাঁটার ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। পৃথিবীর দুটি বৃহৎ শাস্ত্রীয় ধর্মের (ইসলাম ও খ্রিষ্টান) সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তাদের প্রত্যেকের একটি করে নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ এবং একজন প্রফেট আছেন যারা একাধারে ধর্মতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক চরিত্র। এবং তাকেই তারা অনুসরণ করে নিষ্ঠার সঙ্গে। এটা তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘটিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সাংস্কৃতিক বা মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য তাদের দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এক অলিখিত আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ধর্মীয় নেতারা এই মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখে।
তবে মনে রাখতে হবে, এই ঐক্যবোধ কিন্তু রাজনৈতিক চেতনার আধারে আধারিত নয়। সে কারণেই, সমগ্র ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় খ্রিস্টান ও ইসলাম প্রধান দেশগুলোর জনগণ যথাক্রমে খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের অনুষঙ্গে নিজেদের মধ্যে নৈকট্য অনুভব করলেও তারা রাজনৈতিক চেতনার ভিন্নতার কারণে অসংখ্য ছোট ছোট জাতি-রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আধুনিক যুগে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কখনোই বহু ভাষা, বর্ণ ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যে ভরা দেশে রাজনৈতিক ইউনিটি আনতে পারছে না। কারণ, এক্ষেত্রে ধর্মতত্ত্বের চেয়ে জাতিতত্ত্ব অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ তার নিকটতম ও উৎকৃষ্টতর উদাহরণ।
ভারতের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন ধর্মগ্রন্থ বা কোন প্রফেট নেই, যাকে সবাই তাদের ‘এক’ এবং‘একমাত্র’ বলে একবাক্যে স্বীকার করে নেবে। ফলে ধর্মীয় পরিচয়-এর মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জনগোষ্ঠী এখানে গড়ে ওঠা সহজ নয়। প্রাক-ঐতিহাসিক বা ঐতিহাসিক - কোন কালেই তা গড়ে ওঠেনি। ‘হিন্দু’ শব্দটি বর্তমানে ‘ধর্ম’ অর্থে ব্যবহার করে সেই চেষ্টা করছে বিজেপি ও আরএসএস। কিন্তু সমস্যা হল, হিন্দু তো আদৌ কোন ধর্ম নয়। এটা একটা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় বহনকারী ভৌগলিক বা রাজনৈতিক শব্দ । এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একদিকে যেমন সনাতন (ব্রাহ্মণ্য ধর্ম) ধর্মাবলম্বী বা বৈদিক ধর্মের অনুসারীরা আছে, ঠিক তেমনি বৌদ্ধ, জৈন ও মুসলিমরাও আছে। আছে অসংখ্য অঞ্চলভিত্তিক লৌকিক ধর্মের ( বাউল,সহজিয়া, বৈষ্ণব, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম, এবং মতুয়া ইত্যাদি ) অনুসারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এদের মধ্যে মুসলিমকে বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত ধর্মের অনুসারীকে ‘হিন্দু’ হিসেবে এবং তাদের প্রফেট হিসেবে ‘রামচ্ন্দ্র’কে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে আর এস এস এবং বিজেপি, তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠিত প্রচারের মাধ্যমে। লক্ষ্য, সমগ্র ভারতীয়কে একই ধর্মীয় পরিচয়-এর মধ্যে এনে এক অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।
কিন্তু এই কাজ করতে কৌশল হিসেবে ভারতবর্ষের সমগ্র জনসমষ্টিকে হিন্দু ও মুসলিম - এই দুই ভাগে বিভক্ত করার যে চেষ্টা হচ্ছে, তা ইতিহাসসম্মতও নয়, বাস্তব সম্মতও নয়। এই কাজ করতে গিয়ে তারা যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নীতি অনুসরণ করছে তাতে আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের সূত্রে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যে অসংখ্য লৌকিক ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ রয়েছেন তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আইডেন্টিটি হারানোর ভয় পাচ্ছে। এছাড়া,সারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে শ্রীরামচন্দ্রের যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে তা অস্বীকার করে কেবলমাত্র গো-বলায়ের ‘রামচন্দ্র’কে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে অনিহা; এই সমস্ত এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে। ফলে দেশের ইউনিটি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
সুতরাং ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে ভারতবর্ষকে একসুতোয় বাঁধা এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক দর্শনই একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে যা এই বৃহৎ ভূখণ্ডের নানা ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষকে এক সুতোয় বেধে ফেলতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন