সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিজেপি ও আরএসএসের রাষ্ট্রচিন্তার অসারতা

বিজেপি ও আরএসএসের রাষ্ট্রচিন্তার অসারতা 

The futility of BJP and RSS nationalism

যে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের মুক্তির জন্য, সেই ধর্মই যখন মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে,তখন বুঝতে হবে সে-ধর্ম ধর্মব্যবসয়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।

ধর্মব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল ধর্মপ্রাণ মানুষদের ধর্মগুরু বা ধর্মীয় নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, যা আসলে একধরণের অন্ধত্ব। আধুনিক শিক্ষার আলোয় যারা আসতে পারেনি, তারাই এই  অন্ধত্বের শিকার। ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের এই অন্ধত্বকে খুব সহজে কাজে লাগাতে পারে। কারণ, ধর্মপ্রাণ মানুষ অলৌকিক শক্তির উপর ভরসা ও বিশ্বাস করে। সঙ্গে এও বিশ্বাস করে যে, ধর্মগুরুদের অনুসারী হয়ে চললে এবং ধর্মের অনুষ্ঠানিকতা, আচার-বিচার অনুসরণের সাথে সাথে ধর্মীয় নেতা ও সংগঠনে দান-ধ্যান করলেই ইহলৌকিক ও পরলৌকিক জীবনে সাফল্য অর্জন সহজ হয়ে যাবে। এদের এই বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই ধর্মব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করে।

উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক বড় বড় ধর্মই কিন্তু সূচনালগ্নে ধর্মচর্চার বিধান হিসেবে এবং জীবনে সাফল্য লাভের চাবিকাঠি হিসাবে সৎকর্ম ও মানবিক মূল্যবোধকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। মূল ধর্মগ্রন্থগুলো খুঁটিয়ে পড়লেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় অন্য যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয় তা হল সৃষ্টিকর্তার প্রতি নিঃশর্ত বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ। সেই সঙ্গে, বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণের প্রমাণ হিসেবেই দাবি করা হয়, সৎকর্ম ও মানুষের পরস্পরের প্রতি শর্তহীন ভালোবাসাকে। খ্রিস্টান, ইহুদি এবং ইসলাম ধর্ম-সহ বড় বড় শাস্ত্রীয় ধর্মের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই শক্তিশালী রূপ পেয়েছে।

ধর্মের এই মানবিক মুখের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যখন সাধারণ মানুষ দলে দলে সেই বিশেষ ধর্মের প্রতি সমর্থন দিতে শুরু করে,তখনই ছদ্মবেশী ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা ধার্মিক সেজে সেই দল বা সম্প্রদায়ের দন্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে বসে। উদ্দেশ্য, এই ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদের উপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা। একজন মানুষের ওপর যখন আর একজন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক নিয়ন্ত্রণ বা সম্মোহনী ক্ষমতা কার্যকরী হয়,তখন প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তির নিজস্ব ভাবনাচিন্তা ও শ্রমের উপর আধিপত্য কায়েম করতে সক্ষম হয়। এবং নিজেকে খুব সহজেই তাদের ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতা বা গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে।

যুগ যুগ ধরেই ধর্মব্যবসায়ীদের দুটো রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। একটা ধর্মগুরু হিসাবে, অন্যটা রাষ্ট্রগুরু হিসাবে। মনে রাখতে হবে, এরা সব সময়ই পরস্পর পরস্পরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলি বিশেষত ইরান, সৌদি আরব, কাতার আফগানিস্তান সহ বহু দেশে এখনও এই ধরণর ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।

অন্যদিকে মিশ্র জনগোষ্ঠীর দেশগুলোতে ধর্মগুরুরা থাকেন একটু ভিন্ন রূপে। ইহলৌকিক লাভ ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পারলৌকিক বা স্বর্গীয় সুখের লোভ দেখিয়ে মানুষকে নিজের সমর্থনে সংগঠিত করে। এই সংগঠিত জনগণের ভোট প্রদানের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুকৌশলে রাজনীতিকদের কাছে হস্তান্তরিত করে, নানা রকম রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আদায় করে নিতে। কোন কোন রাষ্ট্রনেতাও একইভাবে এই মানুষগুলোকে অন্ধভক্তে পরিণত করে। ধর্মের নামে বিভাজনকে উস্কে দিয়ে নির্বাচনের সময় তাদের ভোট নিজেদের ভোটবক্সে ফেলার মরিয়া চেষ্টা চালায়। অর্থাৎ ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল অথবা দখলে সাহায্য করাই এই ধরনের রাষ্ট্রনেতা বা ধর্মীগুরুদের প্রধান উদ্দেশ্য।

স্বাধীনতা লাভের পর ভারতবর্ষে জাতীয় কংগ্রেসের হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার পথ চলা শুরু হয়। আজ আমরা সেখান থেকে অনেকটাই পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছি। কেননা, বর্তমান শাসকদল মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশগুলোর ধাঁচে ধর্মীয় ভাবাবেগকে পুঁজি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের এবং তাকে স্থায়ীকরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর অবশ্যম্ভবী পরিণতি হিসেবে আধুনিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেশের মর্যাদাহানি ঘটছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে মর্যাদার আসনে ভারত পৌঁছেছিল, তা এখন প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।

আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্ম এবং রাষ্ট্র পৃথক সংগঠন হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে রাজনীতি ধর্মমুক্ত থাকে। ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস (ধর্ম বিশ্বাস নয়) ও কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে আধুনিক রাষ্ট্রদর্শন ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ সাধারণ মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করে।

পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ এই ধরনের রাষ্ট্রদর্শন দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, তারাই দ্রুত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের মান উন্নয়নে সফল হয়েছে। যুক্তিবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় দ্রুত সাফল্য অর্জন করেছে। সামগ্রিকভাবে একটি সফল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হিসেবে তারা পৃথিবীতে মাথা তুলে দাড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন-সহ বেশ কিছু দেশ ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক নীতিতে বিশ্বাসী হলেও রাষ্ট্রীয় ঐক্যকে সুদৃঢ ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছে এই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রদর্শনের জোরেই। এভাবেই পৃথিবীতে এখন তারা প্রথম সারিতে উঠে এসেছে।

ধর্মব্যবসায়ীরা যখন রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয় তখন তাদের প্রথম কাজ হয়ে ওঠে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে অন্ধ করে ফেলা। এই লক্ষ্যেই তারা সমাজে ধর্মান্ধতার প্রচার ও প্রসার ঘটায়। কারণ, ধর্মের মোড়কে অন্ধত্বের ক্যাপসুল জনগণকে খাওয়াতে পারলেই খুব সহজে তাদের ভোট নিজেদের অনুকূলে আনতে পারা যায়। তাই তারা রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও ধর্মশিক্ষার নামে অন্ধবিশ্বাসের চাষ শুরু করে। বিজ্ঞানের নাম করে অবিজ্ঞান বা অপবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়। পৃথিবীর যে যে দেশে ধর্মগুরুরাই রাষ্ট্রনেতা হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে আছে, সেখানেই এই ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।

বিজেপি শাসিত দেশ ভারতবর্ষও আজ সে পথেই হাঁটার চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভারতবর্ষের ভাষাগত জনবিন্যাস, নানান ধর্মীয় মতবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা নামক বিশেষ রাজনৈতিক দর্শন - যার ওপর ভিত্তি করে ভারতীয় সংবিধান রচিত - এই পথে হাঁটার ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। পৃথিবীর দুটি বৃহৎ শাস্ত্রীয় ধর্মের (ইসলাম ও খ্রিষ্টান) সবচেয়ে বড় সুবিধা হল তাদের প্রত্যেকের একটি করে নির্দিষ্ট ধর্মগ্রন্থ এবং একজন প্রফেট আছেন যারা একাধারে ধর্মতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিক চরিত্র। এবং তাকেই তারা অনুসরণ করে নিষ্ঠার সঙ্গে। এটা তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘটিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এই সাংস্কৃতিক বা মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য তাদের দেশকালের গণ্ডি পেরিয়ে এক অলিখিত আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ধর্মীয় নেতারা এই মনস্তাত্ত্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নেয় এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রাখে। 

তবে মনে রাখতে হবে, এই ঐক্যবোধ কিন্তু রাজনৈতিক চেতনার আধারে আধারিত নয়। সে কারণেই, সমগ্র ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় খ্রিস্টান ও ইসলাম প্রধান দেশগুলোর জনগণ যথাক্রমে খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের অনুষঙ্গে নিজেদের মধ্যে নৈকট্য অনুভব করলেও তারা রাজনৈতিক চেতনার ভিন্নতার কারণে অসংখ্য ছোট ছোট জাতি-রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ আধুনিক যুগে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কখনোই বহু ভাষা, বর্ণ ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যে ভরা দেশে রাজনৈতিক ইউনিটি আনতে পারছে না। কারণ, এক্ষেত্রে ধর্মতত্ত্বের চেয়ে জাতিতত্ত্ব অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ তার নিকটতম ও উৎকৃষ্টতর উদাহরণ।

ভারতের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন ধর্মগ্রন্থ বা কোন প্রফেট নেই, যাকে সবাই তাদের ‘এক’ এবং‘একমাত্র’ বলে একবাক্যে স্বীকার করে নেবে। ফলে ধর্মীয় পরিচয়-এর মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জনগোষ্ঠী এখানে গড়ে ওঠা সহজ নয়। প্রাক-ঐতিহাসিক বা ঐতিহাসিক - কোন কালেই তা গড়ে ওঠেনি। ‘হিন্দু’ শব্দটি বর্তমানে ‘ধর্ম’ অর্থে ব্যবহার করে সেই চেষ্টা করছে বিজেপি ও আরএসএস। কিন্তু সমস্যা হল, হিন্দু তো আদৌ কোন ধর্ম নয়। এটা একটা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয় বহনকারী ভৌগলিক বা রাজনৈতিক শব্দ । এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একদিকে যেমন সনাতন (ব্রাহ্মণ্য ধর্ম) ধর্মাবলম্বী বা বৈদিক ধর্মের অনুসারীরা আছে, ঠিক তেমনি বৌদ্ধ, জৈন ও মুসলিমরাও আছে। আছে অসংখ্য অঞ্চলভিত্তিক লৌকিক ধর্মের ( বাউল,সহজিয়া, বৈষ্ণব, আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম, এবং মতুয়া ইত্যাদি ) অনুসারীরা। সাম্প্রতিক সময়ে এদের মধ্যে মুসলিমকে বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত ধর্মের অনুসারীকে ‘হিন্দু’ হিসেবে এবং তাদের প্রফেট হিসেবে ‘রামচ্ন্দ্র’কে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে আর এস এস এবং বিজেপি, তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠিত প্রচারের মাধ্যমে। লক্ষ্য, সমগ্র ভারতীয়কে একই ধর্মীয় পরিচয়-এর মধ্যে এনে এক অখণ্ড ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করা।

কিন্তু এই কাজ করতে কৌশল হিসেবে ভারতবর্ষের সমগ্র জনসমষ্টিকে হিন্দু ও মুসলিম - এই দুই ভাগে বিভক্ত করার যে চেষ্টা হচ্ছে, তা ইতিহাসসম্মতও নয়, বাস্তব সম্মতও নয়। এই কাজ করতে গিয়ে তারা যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নীতি অনুসরণ করছে তাতে আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনের সূত্রে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যে অসংখ্য লৌকিক ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষ রয়েছেন তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আইডেন্টিটি হারানোর ভয় পাচ্ছে। এছাড়া,সারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে শ্রীরামচন্দ্রের যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে তা অস্বীকার করে কেবলমাত্র গো-বলায়ের ‘রামচন্দ্র’কে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে অনিহা; এই সমস্ত এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে। ফলে দেশের ইউনিটি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

সুতরাং ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে ভারতবর্ষকে একসুতোয় বাঁধা এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক দর্শনই একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে যা এই বৃহৎ ভূখণ্ডের নানা ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষকে এক সুতোয় বেধে ফেলতে পারে।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে