দেশ ভাগ ও উদ্বাস্তু সমস্যা
সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান
সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে।
এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তরও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)।
'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই সমস্যার বর্তমান যে চেহারা আমরা দেখছি, তার বেশির ভাগটাই বানানো। দুই বাংলার সাধারণ মানুষ এই বিভেদ চাননা। দুই সম্প্রদায়ের যে সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব সেখানে উভয়ের প্রায় অবাধ বিচরণ ও অংশগ্রহণ। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে পরিকল্পনামাফিক এই মেলবন্ধনের মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া তৈরি করা হচ্ছে।
সীমান্ত আখ্যান' যে ইউনিক বিষয়ে বাঙালির ভাবনাকে আলোড়িত করবে তা হল নেপাল, ভুটান ইত্যাদি দেশগুলিতে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হয়নি কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে দিতে হয়েছে। কেন? অথচ এই দুই দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আত্মিক মেলবন্ধন অনেক বেশি থাকার কথা এবং আছে।
এর কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, রাজনৈতিক সুবিধাবাদের নতুন পাটিগণিত ও তার সূত্রের উপস্থিতির কথা। মনে হয়েছে, অন্যদেশগুলির জনগনের সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অবস্থান এবং ভারতে তাদের সমগোত্রীয় মানুষের সংখ্যার উপস্থিতির হারের বিশাল পার্থক্য। বিশেষ করে ধর্মীয় ভাবধারার পার্থক্য আছে এমন মানুষের সংখ্যাধিক্য ভারতে খুবই স্পষ্ট। এই সংখ্যার আধিক্যকে ভারতের সংখ্যাগুরু মানুষের কাছে 'সংখ্যালঘু-ভীতি' তৈরি করতে খুবই কার্যকরী। অন্য উল্লেখিত প্রতিবেশী দেশগুলির ক্ষেত্রে যা একেবারেই কার্যকরী হবে না। তাই এই বিষয়টিকে কাজে লাগানোর সুযোগ বেশি এবং একধরনের কাল্পনিক ও বানোয়াট গল্প তৈরি অনেক বেশি সুবিধাজনক। আর এই সুবিধা ভারতের মত তার অন্য প্রতিবেশী দেশগুলির রাজনৈতিক দলগুলিও সুকৌশলে গ্রহণ করছে। যার ভয়ংকর কুফল ভোগ করছে নিরিহ জনগন।
'সীমান্ত আখ্যান' আর যে বিষয়ে বাঙালিকে নতুন করে ভাবাবে তা হল অনুপ্রবেশ সমস্যা। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় উঠে এসেছে। এক, এর পিছনে রয়েছে ভারত সরকারের
উৎবাস্তু নীতি। এই নীতিতে বলা হয়েছে যদি কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশ ত্যাগ করে ভারতে আসে তবে তাকে উসবাস্ত হিসাবে গণ্য করা হবে।
পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেখুন এখানে ক্লিক করে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন