প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম টিকে থাকার কারণ
Institutional religion is the reason for survival
ধর্ম দু'ধরনের। একটা মানসিক বা মানবিক। অন্যটা প্রাতিষ্ঠানিক। মানবিক ধর্মের জন্ম হয় মানুষের অন্তরে। এর কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই। মানুষের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তার অন্তরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্ম নেয় এই ধর্মবোধ।
অন্যদিকে, পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ তার অন্তরে জীবন ও জগত সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা, ভালোলাগা, ভালোবাসা ইত্যাদির জন্ম হয়, তার উপর ভিত্তি করে তার যে বিশ্বাস গড়ে ওঠে, তা-ই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম। তাই এর প্রতিষ্ঠাতা আছে। আছে প্রচারক সংগঠন।
একজন মানব শিশু যখন জন্মায় তখন তাকে শিখিয়ে দিতে হয় না মানুষকে ভালোবাসার কথা, টিফিন ভাগ করে খাওয়ার কথা। এগুলো তার মানবিক ধর্মের প্রতিফলন। এগুলো নিয়েই সে জন্মায়।
কিন্তু তাকে শিখিয়ে দিতে হয় কে আপন, কে পর। তাকে শিখিয়ে দিতে হয় তার প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম কী। কীভাবে চালাকির আশ্রয় নিয়ে, সত্য গোপন করে, নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে হয়।
অন্যদিকে মানব ধর্মকে তারা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করে। কারণ, তারা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া বিভিন্ন ধর্মীয় বিধি-বিধান না মানলেও প্রকৃতির পাঠশালা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রকৃত ধর্মের (সত্যের) সন্ধান পেয়ে যায়। তারা উপলব্ধি করতে পারে, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছুই কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলছে। এই নিয়মগুলোই প্রাকৃতিক নিয়ম নামে পরিচিত। এই নিয়ম ভাঙ্গলেই ঘটে অঘটন। অন্যের সাথে সাথে নিজেকেও হতে হয় ক্ষতিগ্রস্ত।
আপনার নিরন্তর পড়াশোনার মধ্য দিয়ে জগৎ ও জীবনের এই নির্দিষ্ট নিয়মকানুন খুঁজে বের করাই আপনার ধর্ম এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার নামই হল ধর্ম পালন বা ধর্মচর্চা।
আপনি ঈশ্বর আল্লাহ ভগবান যাকেই মানুন না কেন তারা আসলে প্রাকৃতিক নিয়মের স্রষ্ঠার ভিন্ন ভিন্ন কল্পিত রূপ। তাই তাকে মানার অর্থই হচ্ছে প্রকৃতির আইন মেনে চলা। আপনি যদি এই আইন ভাঙ্গেন, তাহলে আপনি অধার্মিক। আপনি অন্যায়কারী এবং পাপী। পূজা-অর্চনা, নামাজ-রোজা ধ্যান বা আরাধনা কোন কিছুর বিনিময়ে এই পাপ বা অন্যায় ক্ষমার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
আপনি যে ধর্মীয় আচার বিচারেই বিশ্বাস করেন না কেন, এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তা মেনে চলেন না কেন, আগুনে হাত দিলে আপনার হাত পুড়বে। পোড়ানোই আগুনের ধর্ম। আর আগুনের মধ্যে আঙ্গুর না দেয়াই আপনার ধর্ম। আগুনকে নিয়ে খেলা না করাই আপনার কর্তব্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন