ভালো রেজাল্ট করার নেপথ্য : সমস্যা কোথায়, সমাধানই বা কীভাবে?
ছেলেমেয়েদের ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে শিক্ষক বা অভিভাবকের ভূমিকা কী এবং কতটা - এটা বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এবিষয়ে অভিভাবক দোষেন শিক্ষকদের আর শিক্ষক দোষেন অভিভাবকদের। পরস্পর দোষারপের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে শিক্ষার আঙিনায় আসা ছাত্রছাত্রীদের যে কী হাল হয়, তা সচেতন মানুষ মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। প্রশ্ন হল, এই সমস্যার উৎস কোথায়, সমাধনই বা কী?
এই সমস্যার সমাধান খোঁজার আগে, মাথায় রাখা দরকার, শিক্ষা নামক দুর্মূল্য রত্ন শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য করে তোলার কারিগর কারা এবং এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কার কতটা এবং কীরকম?
এই কারিগর আসলে তিন তরফে বিভক্ত। অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যাদের আর্থিক সামর্থ একেবারেই নেই, সেই শ্রেণিকে এই আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।
অভিভাবকের ভূমিকার প্রধানত দুটো দিক আছে। একটা বৌদ্ধিক, অন্যটা আর্থিক। এছাড়া তাদের আর কোনো বিশেষ ভূমিকা, মোটা দাগে, থাকে না। প্রকৃতপক্ষে পড়াশোনায় সাফল্যের ক্ষেত্রে আর্থিক ভূমিকার চেয়ে বৌদ্ধিক ভূমিকার গুরুত্ব অনেক বেশি। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, আর্থিক ভূমিকা পালন করতে পারলেও অধিকাংশ অভিভাবক বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। তার পরিণতিতে অসংখ্য ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার যে সুযোগ, তা থেকে বঞ্চিত হয়, কাংখিত সাফল্য তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।
বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণ :
অধিকাংশ পরিবারে পিতামাতার মধ্যে শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রেই পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্য মত ও পথের পার্থক্য। ফলে ছেলেমেয়েরা কার মত ও পথ অনুসরণ করবে, সে বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। বয়স, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার অসম্পূর্ণতার কারণে তারাও উপলব্ধিই করতে পারে না যে, তাদের কার মত ও পথ অনুসরণ করা উচিৎ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ভুল পথকেই সঠিক পথ বলে বেছে নেয়।
প্রশ্ন হতে পারে বাবা-মায়ের মধ্যে মতপার্থক্য যতই থাক, ছেলেমেদের পড়াশোনা করানোর বিষয়ে তাদের তো কোন দ্বিমত থাকে না। কথাটা শতভাগ ঠিক। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ১) মত ও পথ বিষয়ে মতপার্থক্য জনিত কারণে একটা পারিবারে প্রায়শই সুস্থ চিন্তন প্রক্রিয়ায় অস্থিরতা তৈরি হয়। এই অস্থিরতা ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। ২) কীভাবে কতটা সময় পড়াশোনায় দেওয়া উচিত, পড়াশোনার পরিবেশ তৈরিতে কোন কোন পদক্ষেপ কীভাবে নেওয়া দরকার, এক্ষেত্রে পিতামাতার কীভাবে কতটা আত্মত্যাগ করা দরকার - এমন হাজারও প্রশ্নে মতপার্থক্য থেকেই পরিবারের মধ্যে তৈরি হয় এক অদৃশ্য টানাপোড়েন। অপরিণত বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার অভাব এবং এই অদৃশ্য মানসিক টানাপোড়েন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় নিবিষ্ট হওয়ার তাগিদ অনুভবে বাধা তৈরি করে।
কেন এমন হয়?
আসলে সঠিক মত ও পথ নিজের মধ্যে তৈরি করা কিংবা তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেগুলো হল - শিক্ষা, বয়স, এবং অভিজ্ঞতা। স্বাভাবিক কারণেই এই তিনটি ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে থাকে। অন্যদিকে আর্থ সামাজিক কারণে অধিকাংশ বাবা-মায়ের মধ্যেও এই বিষয়গুলোর উপস্থিতির মাত্রায় ব্যপক তারতম্য থাকে। ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং মত ও পথের পার্থক্য গুরুতর সংকটের জন্ম দেয় ।
এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা তাকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করে, যার সঙ্গে তাদের মত ও পথের নৈকট্য-বোধ অনুভূত হয়। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি যে, বাবা ও মায়ের মধ্যে যার অপেক্ষাকৃত শিক্ষা, বয়স ও অভিজ্ঞতা কম থাকে তার সঙ্গেই ছেলেমেয়েরা বেশি নৈকট্য অনুভব করে। এটাই স্বাভাবিক প্রবণতা এবং সেকারণেই তার দ্বারা তারা বেশি প্রভাবিত হয়। এখন, মা যদি কমের বিভাগে পড়েন, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাড়ায়। কারণ, ছেলেমেয়েরা দিনের বেশিরভাগ সময় মায়ের সঙ্গেই কাটায়। মায়ের জীবন দর্শন, তার মত ও পথ তাদের কাছে বেশি গ্রহণীয় মনে হয়।
তাই সংসারে বাবার চেয়ে মায়ের শিক্ষিত হওয়া অনেক বেশি জরুরী। এখানেও দুর্ভাগ্যের স্বীকার আমরা। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই মেয়েদের লেখাপড়া শেখান একটি ভালো ঘর ও বর পাওয়ার আশায়, যাতে জীবনে খাওয়া-পরার অভাব না হয়। এজন্য যেকোন প্রকারে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করাটাই চোখের মনি করা হয়। অনেক সময় পাত্রপাত্রীর বয়সের বিস্তর ব্যবধানকেও খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ভাবনাই আমাদের ঘরের মেয়েদের বৌদ্ধিক দুর্বলতার কারণ, যার দ্বারা সিংহভাগ পরিবার আক্রান্ত।
সুতরাং এই মেয়ে যেদিন মা হবেন, সেদিন তিনি কোনভাবেই তার সন্তানকে উপযুক্ত বৌদ্ধিক সাপোর্ট দিতে পারবেন না। এমনকি পিতার মধ্যে সেই গুণ থাকলেও তা কার্যকারিতা হারাবে তার সঙ্গে সন্তানের মানসিক নৈকট্যের অভাব থাকার কারণে। অর্থাৎ তথ্য ও যুক্তি সহকারে ভালো রেজাল্ট করার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি তুলে ধরতে তারা উভয়ই ব্যর্থ হবেন। (উল্টে অনেক সময় এমনও শুনতে হয়, এইটুকু লেখাপড়া শিখে অথবা না শিখে তোমাদের যদি চলে, আমাদের চলবে না কেন?) লক্ষ-কোটি অর্থ ব্যয় করেও এই ভাবনা থেকে সরিয়ে আনার মত বৌদ্ধিক সাপোর্ট তারা যোগাড় করতে পারবেন না। আসলে অর্থ দিয়ে এই ঘাটতি কখনই পূরণ করা সম্ভব নয়। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সাফল্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে না।
একজন সন্তানের কাছে বাবা-মা হচ্ছেন প্রথম আদর্শ শিক্ষক। ছোট থেকেই তারা তাদের কাছ থেকে জগৎ ও জীবনের পাঠ নেয় এবং নিতে থাকে একটা নির্দিষ্ট বয়স অবধি। এই পর্বে গড়ে ওঠা ধ্যান-ধারণাও তাদের চিন্তা ও চেতনার জগতে গভীর দাগ কেটে যায়। এই দাগ এবং বাবা-মায়ের মধ্যে থাকা মত ও পথের পার্থক্য জনিত অস্থিরতা এক ধরণের নেতিবাচক ধ্যান-ধরণার জন্ম দেয়, যা তাঁকে পড়াশোনায় অমনযোগী ও অনুৎসাহিত করে তোলে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ন্যূনতম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্রান্ত ধরণার অধিকারী মা কিংবা বাবা তাই, শত চেষ্টা করেও সন্তানের বৌদ্ধিক সাপোর্ট দেওয়ার ভূমিকা, ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও, যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না।
সর্বপরি, বাবা-মায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থান যে অতিক্রম করা যায়, এবং নতুন অবস্থানে পৌছানো সম্ভব, এই সত্যও যৌক্তিকভাবে তুলেধরতে পারেন না অধিকাংশ অভিভাবক। ফলে, বর্তমান অবস্থান তাদের জন্য ঈশ্বর দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত, এই বিশ্বাস ভেঙে বের হওয়ার মত বৌদ্ধিক সাপোর্ট তারা (সন্তানরা) পায় না।
উল্টো দিকে আর্থিক দিক থেকে বেশি স্বচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও একটু অন্যরকম। এই স্বচ্ছলতা যে কোনভাবেই দীর্ঘস্থায়ী কিংবা চিরস্থায়ী নয়, সেটাও তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হন অভিভাবকরা। মুক্ত হস্তে দান করার মত সন্তানের চওয়া-পাওয়া, আদর-আবদার মেটানোর কারণে ছেলেমেয়েরাও বুঝতে পারে না, জগৎ কতটা কঠিন জায়গা এবং সেখানে টিকে থাকার লড়াইটা আরও কত বেশি কঠিন।
নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ধারণা এই সংকটকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাত-রাজার-ধন-এক-মানিকের মত একমাত্র পুত্র বা কন্যা সন্তানের বাবা-মা সন্তান হারানোর আতংকে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে পড়েন। ফলে ভালোবাসা ও আদর-আবদারের মধ্যে তারা পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ভালোবাসার মোড়কে আদর-আবদার পূরণ করতে গিয়ে সন্তানকে নিজের অজান্তেই এক ভয়ংকর খাদের ধারে পৌঁছে দেন। অর্থাৎ সন্তান লালনের জন্য প্রয়োজনীয় বৌদ্ধিক সাপোর্ট খুব দুর্বল ও নাজুক জায়গায় পৌছে যায়। এই পরিস্থিতে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ হারায় এবং তাদের কাছে সাফল্য এক ধরণের দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়।
শিক্ষকের ভূমিকা:
এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভূমিকা খুবই কম। তারা একমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্ভর বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হন। কারণ, তারা শ্রেণি কক্ষের মধ্যে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর ( যারা ভিন্ন ভিন্ন রুচিবোধ, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিন্যাস ও বিশ্বাস নিয়ে বিদ্যালয় আসে ) ভারে ভারাক্রান্ত থাকেন সারা বছর।
সত্যি কথা বলতে কি, এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সামর্থের চেয়েও সুযোগ কম। উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকাটাই সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।
একটা ক্লাসে সামর্থের চেয়ে প্রায় দুই-তিনগুণ বেশি ছেলেমেয়ে নিয়ে একজন শিক্ষক কখনই বৌদ্ধিক দায়িত্ব যথযথভাবে পালন করতে পারেন না। কারণ, শুধুমাত্র বিষয় বুঝিয়ে দিলেই তো তাঁর বৌদ্ধিক কাজ শেষ হয় না। বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে বিষয় বুুুুুঝিয়ে দেওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন, ১) বোঝানো বিষয়টা শিক্ষার্থীরা কতটা বুঝলো তা যাচাই করা, ২) বোঝা বিষয়টি কীভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করলে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে,তা বুঝিয়ে দেওয়া এবং ৩) এই শিক্ষা তাদের ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কীভাবে কাজে লাগবে তার আলোচনা ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তাত্বিক পদ্ধতিতে যাচাই করা।
দুঃখের হলেও সত্যি, এই কাজ করার মত সময় ও পরিকাঠামো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ ভাবে নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই সেদিকে সেভাবে নজর দেয় নি।
ফলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও ছাত্রছাত্রীদের বৌদ্ধিক সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
তাহলে, ছেলেমেয়ের সাফল্যের মূল কারিগর কে? এ কারিগর আসলে তারা নিজেরাই। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। যারা এক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে, তারা আসলে তাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির জোরেই পাচ্ছে। তাই বর্তমানে শিক্ষায় সাফল্য অর্জনে শিক্ষার্থীর ভূমিকাই মুখ্য। অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা পরোক্ষ এবং কার্যত অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে সংখ্যায় বাড়লেও গুণগত মানের দিক থেকে শিক্ষায় সাফল্য আসছে না।
একটা ক্লাসে সামর্থের চেয়ে প্রায় দুই-তিনগুণ বেশি ছেলেমেয়ে নিয়ে একজন শিক্ষক কখনই বৌদ্ধিক দায়িত্ব যথযথভাবে পালন করতে পারেন না। কারণ, শুধুমাত্র বিষয় বুঝিয়ে দিলেই তো তাঁর বৌদ্ধিক কাজ শেষ হয় না। বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে বিষয় বুুুুুঝিয়ে দেওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন, ১) বোঝানো বিষয়টা শিক্ষার্থীরা কতটা বুঝলো তা যাচাই করা, ২) বোঝা বিষয়টি কীভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করলে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে,তা বুঝিয়ে দেওয়া এবং ৩) এই শিক্ষা তাদের ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কীভাবে কাজে লাগবে তার আলোচনা ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তাত্বিক পদ্ধতিতে যাচাই করা।
দুঃখের হলেও সত্যি, এই কাজ করার মত সময় ও পরিকাঠামো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ ভাবে নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই সেদিকে সেভাবে নজর দেয় নি।
ফলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও ছাত্রছাত্রীদের বৌদ্ধিক সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
তাহলে, ছেলেমেয়ের সাফল্যের মূল কারিগর কে? এ কারিগর আসলে তারা নিজেরাই। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। যারা এক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে, তারা আসলে তাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির জোরেই পাচ্ছে। তাই বর্তমানে শিক্ষায় সাফল্য অর্জনে শিক্ষার্থীর ভূমিকাই মুখ্য। অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা পরোক্ষ এবং কার্যত অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে সংখ্যায় বাড়লেও গুণগত মানের দিক থেকে শিক্ষায় সাফল্য আসছে না।
সুতরাং পরিবারের দুই কাণ্ডারি পিতা ও মাতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব এবং উভয়ের মধ্যে বৌদ্ধিক সামর্থের ব্যবধান থাকায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ বৌদ্ধিক সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষায় সাফল্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সোনার-পাথর-বাটি হয়ে থেকে যাচ্ছে।
মনে রাখা দরকার, নৌকার হাল ও দাঁড় যদি লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ভিন্নমুখী নীতি ও পথ (মত) অনুসরণ করে, তবে মাঝি যেমন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নৌকাকে সময় মত পৌঁছে দিতে পারে না, তেমনই সন্তানদের এই ইচ্ছাশক্তি (থাকেলেও) যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না, যদি সংসারের হাল ও দাঁড়ের ভূমিকায় থাকা পিতামাতার মধ্যে মত, পথ ও বৌদ্ধিক সামর্থের মধ্যে গুরুতর পার্থক্য থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন