সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে শিক্ষক বা অভিভাবকের ভূমিকা

ভালো রেজাল্ট করার নেপথ্য : সমস্যা কোথায়, সমাধানই বা কীভাবে?


ছেলেমেয়েদের ভালো রেজাল্ট করার ক্ষেত্রে শিক্ষক বা অভিভাবকের ভূমিকা কী এবং কতটা - এটা বহুল আলোচিত একটি বিষয়। এবিষয়ে অভিভাবক দোষেন শিক্ষকদের আর শিক্ষক দোষেন অভিভাবকদের। পরস্পর দোষারপের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে শিক্ষার আঙিনায় আসা ছাত্রছাত্রীদের যে কী হাল হয়, তা সচেতন মানুষ মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। প্রশ্ন হল, এই সমস্যার উৎস কোথায়, সমাধনই বা কী?

এই সমস্যার সমাধান খোঁজার আগে, মাথায় রাখা দরকার, শিক্ষা নামক দুর্মূল্য রত্ন শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য করে তোলার কারিগর কারা এবং এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কার কতটা এবং কীরকম?

এই কারিগর আসলে তিন তরফে বিভক্ত। অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী। প্রসঙ্গত বলে রাখি, যাদের আর্থিক সামর্থ একেবারেই নেই, সেই শ্রেণিকে এই আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।

অভিভাবকের ভূমিকার প্রধানত দুটো দিক আছে। একটা বৌদ্ধিক, অন্যটা আর্থিক। এছাড়া তাদের আর কোনো বিশেষ ভূমিকা, মোটা দাগে, থাকে না। প্রকৃতপক্ষে পড়াশোনায় সাফল্যের ক্ষেত্রে আর্থিক ভূমিকার চেয়ে বৌদ্ধিক ভূমিকার গুরুত্ব অনেক বেশি। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে, আর্থিক ভূমিকা পালন করতে পারলেও অধিকাংশ অভিভাবক বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন। তার পরিণতিতে অসংখ্য ছেলেমেয়ে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার যে সুযোগ, তা থেকে বঞ্চিত হয়, কাংখিত সাফল্য তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়।

বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণ :

অধিকাংশ পরিবারে পিতামাতার মধ্যে শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে অনেক ক্ষেত্রেই পার্থক্য থাকে। এই পার্থক্য মত ও পথের পার্থক্য। ফলে ছেলেমেয়েরা কার মত ও পথ অনুসরণ করবে, সে বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। বয়স, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার অসম্পূর্ণতার কারণে তারাও উপলব্ধিই করতে পারে না যে, তাদের কার মত ও পথ অনুসরণ করা উচিৎ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ভুল পথকেই সঠিক পথ বলে বেছে নেয়।

প্রশ্ন হতে পারে বাবা-মায়ের মধ্যে মতপার্থক্য যতই থাক, ছেলেমেদের পড়াশোনা করানোর বিষয়ে তাদের তো কোন দ্বিমত থাকে না। কথাটা শতভাগ ঠিক। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। ১) মত ও পথ বিষয়ে মতপার্থক্য জনিত কারণে একটা পারিবারে প্রায়শই সুস্থ চিন্তন প্রক্রিয়ায় অস্থিরতা তৈরি হয়। এই অস্থিরতা ছেলেমেয়েদের আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ নষ্ট করে দেয়। ২) কীভাবে কতটা সময় পড়াশোনায় দেওয়া উচিত, পড়াশোনার পরিবেশ তৈরিতে কোন কোন পদক্ষেপ কীভাবে নেওয়া দরকার, এক্ষেত্রে পিতামাতার কীভাবে কতটা আত্মত্যাগ করা দরকার - এমন হাজারও প্রশ্নে মতপার্থক্য থেকেই পরিবারের মধ্যে তৈরি হয় এক অদৃশ্য টানাপোড়েন। অপরিণত বুদ্ধি, অভিজ্ঞতার অভাব এবং এই অদৃশ্য মানসিক টানাপোড়েন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় নিবিষ্ট হওয়ার তাগিদ অনুভবে বাধা তৈরি করে।

কেন এমন হয়?

আসলে সঠিক মত ও পথ নিজের মধ্যে তৈরি করা কিংবা তা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেগুলো হল - শিক্ষা, বয়স, এবং অভিজ্ঞতা। স্বাভাবিক কারণেই এই তিনটি ক্ষেত্রেই ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে থাকে। অন্যদিকে আর্থ সামাজিক কারণে অধিকাংশ বাবা-মায়ের মধ্যেও এই বিষয়গুলোর উপস্থিতির মাত্রায় ব্যপক তারতম্য থাকে। ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে এবং মত ও পথের পার্থক্য গুরুতর সংকটের জন্ম দেয় ।

এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা তাকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করে, যার সঙ্গে তাদের মত ও পথের নৈকট্য-বোধ অনুভূত হয়। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি যে, বাবা ও মায়ের মধ্যে যার অপেক্ষাকৃত শিক্ষা, বয়স ও অভিজ্ঞতা কম থাকে তার সঙ্গেই ছেলেমেয়েরা বেশি নৈকট্য অনুভব করে। এটাই স্বাভাবিক প্রবণতা এবং সেকারণেই তার দ্বারা তারা বেশি প্রভাবিত হয়। এখন, মা যদি কমের বিভাগে পড়েন, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে দাড়ায়। কারণ, ছেলেমেয়েরা দিনের বেশিরভাগ সময় মায়ের সঙ্গেই কাটায়। মায়ের জীবন দর্শন, তার মত ও পথ তাদের কাছে বেশি গ্রহণীয় মনে হয়।

তাই সংসারে বাবার চেয়ে মায়ের শিক্ষিত হওয়া অনেক বেশি জরুরী। এখানেও দুর্ভাগ্যের স্বীকার আমরা। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষই মেয়েদের লেখাপড়া শেখান একটি ভালো ঘর ও বর পাওয়ার আশায়, যাতে জীবনে খাওয়া-পরার অভাব না হয়। এজন্য যেকোন প্রকারে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করাটাই চোখের মনি করা হয়। অনেক সময় পাত্রপাত্রীর বয়সের বিস্তর ব্যবধানকেও খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এই ভাবনাই আমাদের ঘরের মেয়েদের বৌদ্ধিক দুর্বলতার কারণ, যার দ্বারা সিংহভাগ পরিবার আক্রান্ত।

সুতরাং এই মেয়ে যেদিন মা হবেন, সেদিন তিনি কোনভাবেই তার সন্তানকে উপযুক্ত বৌদ্ধিক সাপোর্ট দিতে পারবেন না। এমনকি পিতার মধ্যে সেই গুণ থাকলেও তা কার্যকারিতা হারাবে তার সঙ্গে সন্তানের মানসিক নৈকট্যের অভাব থাকার কারণে। অর্থাৎ তথ্য ও যুক্তি সহকারে ভালো রেজাল্ট করার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি তুলে ধরতে তারা উভয়ই ব্যর্থ হবেন। (উল্টে অনেক সময় এমনও শুনতে হয়, এইটুকু লেখাপড়া শিখে অথবা না শিখে তোমাদের যদি চলে, আমাদের চলবে না কেন?) লক্ষ-কোটি অর্থ ব্যয় করেও এই ভাবনা থেকে সরিয়ে আনার মত বৌদ্ধিক সাপোর্ট তারা যোগাড় করতে পারবেন না। আসলে অর্থ দিয়ে এই ঘাটতি কখনই  পূরণ করা সম্ভব নয়। এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় সাফল্য কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে না।

একজন সন্তানের কাছে বাবা-মা হচ্ছেন প্রথম আদর্শ শিক্ষক। ছোট থেকেই তারা তাদের কাছ থেকে জগৎ ও জীবনের পাঠ নেয় এবং নিতে থাকে একটা নির্দিষ্ট বয়স অবধি। এই পর্বে গড়ে ওঠা ধ্যান-ধারণাও তাদের চিন্তা ও চেতনার জগতে গভীর দাগ কেটে যায়। এই দাগ এবং  বাবা-মায়ের মধ্যে থাকা মত ও পথের পার্থক্য জনিত অস্থিরতা এক ধরণের নেতিবাচক ধ্যান-ধরণার জন্ম দেয়, যা তাঁকে পড়াশোনায় অমনযোগী ও অনুৎসাহিত করে তোলে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ন্যূনতম এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  ভ্রান্ত ধরণার অধিকারী মা কিংবা বাবা তাই, শত চেষ্টা করেও সন্তানের বৌদ্ধিক সাপোর্ট দেওয়ার ভূমিকা, ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও, যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না।

সর্বপরি, বাবা-মায়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থান যে অতিক্রম করা যায়,  এবং নতুন অবস্থানে পৌছানো সম্ভব, এই সত্যও যৌক্তিকভাবে তুলেধরতে পারেন না অধিকাংশ অভিভাবক। ফলে, বর্তমান অবস্থান তাদের জন্য ঈশ্বর দ্বারা পূর্ব নির্ধারিত, এই বিশ্বাস ভেঙে বের হওয়ার মত বৌদ্ধিক সাপোর্ট তারা (সন্তানরা) পায় না।

উল্টো দিকে আর্থিক দিক থেকে বেশি স্বচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও একটু অন্যরকম। এই স্বচ্ছলতা যে কোনভাবেই দীর্ঘস্থায়ী কিংবা চিরস্থায়ী নয়, সেটাও তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হন অভিভাবকরা। মুক্ত হস্তে দান করার মত সন্তানের চওয়া-পাওয়া, আদর-আবদার মেটানোর কারণে ছেলেমেয়েরাও বুঝতে পারে না, জগৎ কতটা কঠিন জায়গা এবং সেখানে টিকে থাকার লড়াইটা আরও কত বেশি কঠিন।

নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ধারণা এই সংকটকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাত-রাজার-ধন-এক-মানিকের মত একমাত্র পুত্র বা কন্যা সন্তানের বাবা-মা সন্তান হারানোর আতংকে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে পড়েন। ফলে ভালোবাসা ও  আদর-আবদারের মধ্যে তারা পার্থক্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ভালোবাসার মোড়কে আদর-আবদার পূরণ করতে গিয়ে সন্তানকে নিজের অজান্তেই এক ভয়ংকর খাদের ধারে পৌঁছে দেন।  অর্থাৎ সন্তান লালনের জন্য প্রয়োজনীয় বৌদ্ধিক সাপোর্ট খুব দুর্বল ও নাজুক জায়গায় পৌছে যায়। এই পরিস্থিতে ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার  প্রতি মনোযোগ হারায় এবং তাদের কাছে সাফল্য এক ধরণের দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়।

শিক্ষকের ভূমিকা:

এক্ষেত্রে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভূমিকা খুবই কম। তারা একমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্ভর বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হন। কারণ, তারা শ্রেণি কক্ষের মধ্যে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর ( যারা ভিন্ন ভিন্ন রুচিবোধ, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিন্যাস ও বিশ্বাস নিয়ে বিদ্যালয় আসে ) ভারে ভারাক্রান্ত থাকেন সারা বছর।

সত্যি কথা বলতে কি, এক্ষেত্রে শিক্ষকদের সামর্থের চেয়েও সুযোগ কম। উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকাটাই সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায়।

একটা ক্লাসে সামর্থের চেয়ে প্রায় দুই-তিনগুণ বেশি ছেলেমেয়ে নিয়ে একজন শিক্ষক কখনই বৌদ্ধিক দায়িত্ব যথযথভাবে পালন করতে পারেন না। কারণ, শুধুমাত্র বিষয় বুঝিয়ে দিলেই তো তাঁর বৌদ্ধিক কাজ শেষ হয় না। বৌদ্ধিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষককে বিষয় বুুুুুঝিয়ে দেওয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন, ১) বোঝানো বিষয়টা শিক্ষার্থীরা কতটা বুঝলো তা যাচাই করা, ২) বোঝা বিষয়টি কীভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করলে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে,তা বুঝিয়ে দেওয়া এবং ৩) এই শিক্ষা তাদের ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কীভাবে কাজে লাগবে তার আলোচনা ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তাত্বিক পদ্ধতিতে যাচাই করা।

দুঃখের হলেও সত্যি, এই কাজ করার মত সময় ও পরিকাঠামো আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ ভাবে নেই। স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই সেদিকে সেভাবে নজর দেয় নি।

ফলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও ছাত্রছাত্রীদের বৌদ্ধিক সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

তাহলে, ছেলেমেয়ের সাফল্যের মূল কারিগর কে? এ কারিগর আসলে তারা নিজেরাই। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। যারা এক্ষেত্রে সাফল্য পাচ্ছে, তারা আসলে তাদের নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির জোরেই পাচ্ছে। তাই বর্তমানে শিক্ষায় সাফল্য অর্জনে শিক্ষার্থীর ভূমিকাই মুখ্য। অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা পরোক্ষ এবং কার্যত অনেকটাই গৌণ হয়ে পড়েছে। ফলে সংখ্যায় বাড়লেও গুণগত মানের দিক থেকে শিক্ষায় সাফল্য আসছে না।

সুতরাং পরিবারের দুই কাণ্ডারি পিতা ও মাতার মধ্যে  পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব এবং উভয়ের মধ্যে বৌদ্ধিক সামর্থের ব্যবধান থাকায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ বৌদ্ধিক সাপোর্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষায় সাফল্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সোনার-পাথর-বাটি হয়ে থেকে যাচ্ছে।

মনে রাখা দরকার, নৌকার হাল ও দাঁড় যদি লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ভিন্নমুখী নীতি ও পথ (মত) অনুসরণ করে, তবে মাঝি যেমন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নৌকাকে সময় মত পৌঁছে দিতে পারে না, তেমনই সন্তানদের এই ইচ্ছাশক্তি (থাকেলেও) যথাযথ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না, যদি সংসারের হাল ও দাঁড়ের ভূমিকায় থাকা পিতামাতার মধ্যে মত, পথ ও বৌদ্ধিক সামর্থের মধ্যে গুরুতর পার্থক্য থাকে।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে