সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খিল্লি করা বামপন্থী সংস্কৃতি নয়

বামপন্থা খিল্লি শেখায় না, শেখায় গঠনমূলক সমালোচনা। সমালোচনা সৃষ্টিশীল আর খিল্লি ধ্বংসাত্মক ও বিকারগ্রস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। জন্ম দেয় অপসংস্কৃতির, যা বামপন্থার পক্ষে অস্বাস্থ্যকর।

যে প্রক্রিয়ায় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে একাদেমির পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, তা হয় তো সমালোচনার উর্ধে নয়। ‘হয় তো’ বলছি এই কারণে যে, তাঁর এই গ্রন্থটি আমি পড়িনি। অথবা কেউ পড়ে তার কোন রিভিউ লিখেছেন বলে আমি শুনিনি। পুরস্কার পাওয়ার জন্য মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের রিভিউ গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমি জানি না তা হয়েছে কিনা। অন্যদিকে, কারও সমালোচনা করতে হলে তাঁর সম্পর্কে গভীরভাবে জানা প্রয়োজন, তাঁর লেখার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় থাকাও দরকার, যা এক্ষেত্রে আমার নেই। তার লেখা একটিমাত্র বই পড়ার সুযোগ এ পর্যন্ত আমার হয়েছে। ‘বিপন্ন ভারত’ নামে যে বইটি তিনি লিখেছেন, তা পড়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। কিন্তু তার কবিসত্তা নিয়ে কোন লেখা এখনো আমার নজরে আসেনি। তাই সে বিষয়ে কথা বলার এক্তিয়ার আমার নেই বলেই আমি মনে করি।

রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আদর্শগত পার্থক্য আছে যাদের (আমিও তাদের একজন), তারা রাজনৈতিক ইস্যুতে সমালোচনা করবেন আপোষহীন আন্দোলন করবেন- সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লেখক হিসাবে তাঁর সমালোচনা করার সময়, তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় উপেক্ষণীয় না হলেও তা কখনই প্রধান বা একমাত্র বিষয় হিসাবে বিবেচিত হয় না - একথা মনে রাখা প্রয়োজন।

যে কাব্য গ্রন্থের জন্য তিনি পুরস্কার পেয়েছেন, বা বলা ভাল, দেওয়া হয়েছে সেই গ্রন্থটি কি আমরা পড়েছি? উত্তর যদি হয় ‘না’, তবে আমাদের সমালোচনা মানায় না। খিল্লি তো নয়ই। আমরা যারা লেখালেখি করি, তাদের সব লেখা কি উচ্চমানের হয়? হয় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশের অনেক লেখাই তো তারা নিজেরাই পরবর্তীকালে বাতিল করে দিয়েছেন। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার ফসলও শেষমেশ গ্রহনযোগ্যতার মান অর্জন করতে পারে না। কিন্তু তার মনে তো এটা নয় যে, তার হাতে ভালো মানের সৃষ্টি সম্ভব নয়। তাই মূল গ্রন্থ না পড়ে কোন ব্যক্তির কোন নিম্নমানের লেখাকে সামনে এনে তার নামে খিল্লি করলে খিল্লিকারির যোগ্যতা, সামর্থ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে প্রশ্নচিহ্ন উঠে যায়।

কোন গ্রন্থ বা লেখক পুরস্কৃত হলে তার পর্যালোচনা বের হয়। লেখার বিষয় নিয়ে যার পাণ্ডিত্য আছে এমন ব্যক্তি গ্রন্থটি পড়েন এবং তারপর রিভিউ রেব করেন। সেটাই নিয়ম, সেটাই রীতি। এক্ষেত্রে সেই অবকাশ কি আমরা পেয়েছি?

তাই, যেভাবে এই বিষয়টি নিয়ে খিল্লি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে আমার মনে হয়েছে।। আসলে সমালোচনার নামে বিষয়টি নিয়ে  খিল্লি করাই যেন প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। খিল্লি করার এই সংস্কৃতি চেতনার ক্ষেত্রে সুস্থতা নয়, এক ধরনের অসুস্থতারই লক্ষণ।

তাই পুরস্কার দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য কিনা তা আমারা সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা উদ্দিষ্ট গ্রন্থটি পড়িনি, করতে পারি না; খিল্লি তো নয়ই।

আসলে খিল্লি করা, পরনিন্দা পরচর্চা করা আমাদের মজ্জাগত সমস্যা। বিশেষ কিছু রাজনৈতিক দলের কাছে এটা কালচার। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই তা হামেশাই নজরে আসে। কিন্তু একজন বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষ হিসাবে আমি মানতে পারি না এই ধরণের কালচারের চর্চাকে।

সজন-পোষণ ভারতীয় সংস্কৃতিতে আইনসিদ্ধ অপরাধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ এটা অনিয়ম জেনেও আমরা মুখ বুঁজে থাকি। নিজে নির্দ্বিধায় সে কাজ করে থাকি। আবার গলা উচুঁ করে তার সমালোচনাও করি। কোনও রকম লজ্জাবোধ আমাদের মধ্যে কাজ করে না। অফিস আদালতে নিজের কাজটা অবৈধভাবে আগে ভাগে করে নেওয়ার জন্য নির্দ্বিধায় ঘুষ দেই। আর বাড়ি ফিরেই সমালোচনা করি সরকারি কর্মচারীরা ঘুষ খান। কেউ যদি ঘুষ না দেই, ঘুষ খাওয়ার সুযোগই তৈরি হয় না, বেমালুম ভুলে যাই এই সত্যকে। ঘুষ নামক অপরাধের জন্ম যে উপভোক্তার অনৈতিকভাবে অগ্রিম সুবিধা আদায়ের ইচ্ছার গর্ভগৃহে তা আমরা হয় জানি না, অথবা জেনেও না জানার ভান করি।

এই অনৈতিক ইচ্ছাই জন্ম দেয়, তোষামোদি মানুষিকতার, জন্ম হয় মোসাহেবি মানুষের। আমার মধ্যে কি এই প্রবনতা নেই? যদি না থাকে, তবে আমি সমালোচক হওয়ার যোগ্য এবং খিল্লি করা আমার কাজ না। যে গ্রন্থের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পুরস্কার পেয়েছেন তা পড়া এবং সমালোচনামলক নিবন্ধ প্রকাশ করার অধিকার অবশ্যই আমার আছে। পড়ার পর যদি তা পুরস্কার পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, তবে তা নিয়ে খিল্লি নয়, গঠনমূলক সমালোচনা করা, এমন কি প্রতিবাদ করাও আমার অধিকার। এটাই সুস্থ সংস্কৃতির চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাস করি, সমস্ত বামপন্থী মানুষ এটার উপর ভিত্তি করেই নিজের পরিচয় উপস্থাপন করেন। 

এ কাজে যারা ব্যর্থ হন, তারা আর যাই হোন, বামপন্থী হতে পারেন না। কারণ, বামপন্থা কারো সম্পত্তি নয়, যেটা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। এটা অর্জন করতে হয়। শিক্ষিত এবং রুচিবান সমস্ত মানুষই এ কারণেই বামপন্থী মানুষদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। এই শ্রদ্ধার জায়গা বামপন্থীদের ধরে রাখতে হবে এবং তা যদি হারিয়ে থাকে তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। তবেই মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে, হিংসা দিয়ে যেমন হিংসাকে জয় করা যায় না, তেমনি খিল্লি করে খিল্লির পাত্রকে শিক্ষা দেয়া শোভন হয় না।

আপনি যদি এ ধারণায় বিশ্বাস না করেন এবং জীবনে চলার পথে তা মেনে না চলেন, তবে আপনি সাধারণ মানুষের কাছে মেকি বামপন্থী বা ক্ষেত্র বিশেষে ‘রামপন্থী’ হিসাবে বিবেচিত হবেন এ কথা হলফ করে বলা যায়। তাই আসুন, বামপন্থাকে একটি সংস্কৃতি হিসাবে আমরা আমাদের জীবনে ও মননে জায়গা করে দেই। খিল্লি ছেড়ে সুস্থ এবং একজন সচেতন সমালোচক ও সুনাগরিক হয়ে উঠি।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে