সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অখণ্ড ভারত, মন্দির ধ্বংস ও তার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি কতটা যুক্তি ও ইতিহাস সম্মত?

নব্বইয়ের দশকে বিজেপির একটি বহু চর্চিত স্লোগান ছিল ‘অযোধ্য তো ঝাঁকি হ্যায়, কাশি মথুরা বাকি হ্যায়’। স্লোগানটি আবার চর্চায় আসে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর। এই রায়ে বিতর্কিত জমিতে মন্দির বানানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে উল্টো (বলা ভালো, সময়োপযোগী) পথে হাঁটছে পাকিস্তান। সম্প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মস্থান ও ধর্মীয় ভাবাবেগকে সম্মান জানিয়ে সেখানকার সুপ্রিম কোর্ট সেদেশে মন্দির ভাঙার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছে। এবং মন্দির পুনর্নির্মাণের আদেশ দিয়েছে। সরকার সেই আদেশকে সমর্থন জানিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিষয়টি সামনে আসতেই বিজেপির সমর্থক ও আইটি সেল উঠেপড়ে লেগেছে এই রায়কে সুকৌশলে তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণের কাজে লাগাতে। তাদের যুক্তি হল, অখন্ড ভারতবর্ষে, এই রায় অনুযায়ীই পদক্ষেপ করা উচিত। কারণ, বাইরের দেশের জঙ্গিরা এসে এদেশের রাজা বা সম্রাটদের হঠিয়ে নিজেরা সম্রাট সেজে বসেছিল। আর এদেশের হিন্দু মন্দিরগুলো ধ্বংস করে ইসলাম ধর্মের উপাসনালয় বানিয়েছিল। তাই পাকিস্তানী আদালতের এই রায় মেনে আবার অখন্ড ভারতের সর্বত্র, যেখানে যত হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়েছে, সকল মন্দিরের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হোক। তাদের সিদ্ধান্ত, পাকিস্তান আদালতের এই রায় সাধুবাদ প্রাপ্য, এবং তা ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়েরই (রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতি সংক্রান্ত) অনুসারী।

এখন প্রশ্ন হলো এই মতামত কতটা যুক্তিবিজ্ঞান এবং ইতিহাস সম্মতও? আসুন যুক্তির কষ্টিপাথরে ফেলে ইতিহাসের তথ্যের আলোকে একটু কাটা-ছেঁড়া করা যাক।

হিন্দু পুরাণ মতে, ব্রহ্মা হলো বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড এবং মানুষের সৃষ্টিকর্তা। এই তথ্য মানলে সারা পৃথিবীর মানুষ এক ব্রহ্মার থেকেই জন্ম নিয়েছে। আর ব্রহ্মা হচ্ছেন একজন ভারতীয় দেবতা। তাহলে বিষয়টা দাঁড়ালো, শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বই অখন্ড ভারত। তবে কি সবদেশের অন্য সব ধর্মের উপাসকরা হিন্দু ধর্মের মন্দির ধংস করে তাদের উপাসনালয় বানিয়েছে? বিজেপি প্রচারকদের অখণ্ড ভারতের যুক্তি মানলে শুধু পাকিস্তান নয়, সমগ্র বিশ্বের উপাসনালয়গুলি ভেঙে মন্দির বানানো উচিত। এই চেষ্টা কী আকাশ-কুসুম কল্পনামাত্র নয়?

তাদের অভিযোগ, বাইরের দেশের জঙ্গিরা এদেশের শাসকদের হটিয়ে সম্রাট হয়ে এদেশের মন্দির ভেঙেছে। প্রশ্ন হলো, এই 'জঙ্গি' শব্দটার জন্ম কবে হয়েছে? ইতিহাস বলছে, এই শব্দটি জাতিরাষ্ট্রের ধারণা জন্ম নেওয়ার আগে ছিলই না। আবার গণতন্ত্র নামক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা জন্ম হওয়ার আগেও এর অস্তিত্ব থাকার প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, গণতন্ত্র নামক রাষ্ট্রীয় মানদণ্ডের ঠিক বিপরীত মেরু হলো এর গর্ভগৃহ। গণতন্ত্রই যে সময় জন্মায় নি, তখন এই বিপরীত মেরুর ‘জঙ্গি’র (শব্দটির) জন্ম হয় কীভাবে? সুতরাং জঙ্গি নয়, এটা আইটি সেলের মন গড়া একটি শব্দমাত্র, মানুষ ক্ষেপাতে যা দারুণ কার্যকরী। তাই জেনে বুঝেই এই অযৌক্তিক শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতিতে, যে অর্থে জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করা হয়, সেই দিক থেকে বিচার করলেও এর জন্ম আধুনিক যুগে। তাহলে মানতে হবে, এদেশের আক্রমনকারীরা জঙ্গি নয়, ভাগ্যান্বেষী রাজনীতিকমাত্র। কারণ, সময়টা ছিল মধ্যযুগ। জঙ্গি শব্দের জন্মই হয় নি তখন। এবং গণতন্ত্র নয়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও ধ্বংসের মাধ্যমেই ক্ষমতার হাত বদল ছিল তখন বৈধ রীতি। এই কারণে কখনও মন্দির, আবার কখনও মসজিদ কিংবা গির্জা রাজনৈতিক ভাগ্যান্বেষীদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। এটা শুধু ভারতে ঘটেছে তা নয়। বিশ্বব্যাপী অহরহ ঘটত এই ঘটনা। প্রাচীনকালে ভারতীয় শাসকরাও এই ধরণের অভিযানে লিপ্ত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সেখানকার আদিম অধিবাসীদের ধর্ম ও সংস্কৃতির ধ্বংসস্তূপের ওপরই ভারতীয় সংস্কৃতির জয়ধ্বজা উড়িয়েছিলেন। যার সাক্ষ্য ইন্দোনেশিয়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখনও মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। বিজেপির প্রচারকদের দাবি মানলে ওই এলাকার মন্দিরগুলো ভেঙে সেখানকার আদিবাসীদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী ভাঙাগড়ার খেলায় নামতে হবে। বিষয়টি কতটা যুক্তিযুক্ত, এবং বাস্তবসম্মত?

উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার ৮৭.২ শতাংশ মুসলমান ও ১.৭ শতাংশ হিন্দু। অথচ এখানকার টাকায় স্থান পায় গণেশের ছবি। সরকারী বিমান সংস্থার নাম হয়, পুরাণ বর্ণিত পবিত্র পাখি গরুড়ের নামেই। দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মাস্কট তৈরি হয় হনুমানের ছবি দিয়ে। ভাঙাভাঙি যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের সংস্কৃতি হয়, কী হবে ইন্দোনেশিয়ার এই সমন্বয়ী সংস্কৃতির?

আজ আধুনিক যুগ, গণতন্ত্রের যুগ। এই যুগে মধ্যযুগীয় রীতিনীতি চলে না। চলে না বলেই পাকিস্থানের বর্তমান সুপ্রিমকোর্ট ওই রায় দিয়েছে। এবং ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয় রাজাদের কীর্তি এখনও অক্ষত রয়েছে। তাই গণতন্ত্রের কথা যারা বলবে, তাদেরও এই রীতি মানার বাধ্যবাধকতা থাকবে। না হলে আধুনিকতা ও গণতন্ত্রের কথা তাদের মুখে হাস্যকর শোনাবে।

যে সময় বাইরের দেশ থেকে মুসলিম শাসকরা এদেশে এসেছিল, সেটা ছিল মধ্যযুগ। যদিও প্রাচীন যুগেও বহু বিদেশি এদেশে এসেছিল এবং রাজত্ব কায়েম করেছিল। এদেশ শাসনের সাথে সাথে তারা নিজেদের উপাসকদের উপাসনাও চালু করেছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হল আর্য জাতি। তারা এদেশের আদিম অধিবাসীদের ধর্ম-সংস্কৃতিকে প্রায় ধংস করে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রচার করেছিল। এই আর্য জাতির ধর্ম হল বৈদিক ধর্ম। বৈদিক ধর্মই আজ সনাতন ধর্ম নামে পরিচিত। তাকেই হিন্দুত্ববাদীরা বলেন হিন্দু ধর্ম। আদতে হিন্দু শব্দটাই ভারতীয় নয়। হিন্দু ধর্ম বলেও যে কিছু হয় না, তা হয় তো এরা জানেন না। ইতিহাস বলছে, এই সনাতন ধর্মের মানুষরাও আসলে বিদেশি। কীভাবে?

এখনও পর্যন্ত নৃবিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদরা যা জানাচ্ছেন, তাতে মানব জাতির আদিমতম পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল আফ্রিকায়। ভুগোলবিদদের মতে, ভারত এই আফ্রিকার সঙ্গেই যুক্ত ছিল সভ্যতার আদিলগ্নে। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ভারতীয় ভুখন্ড আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে। তাই আফ্রিকার মানুষের নৃতাত্বিক গঠনে অর্থাৎ ভারতের আদিবাসীদের গায়ের রঙ ও গড়নে রয়েছে (জিনগত) প্রচুর মিল। এদের সাথে সনাতন ধর্মের ধারক ও বাহকদের সেই মিল প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, এরা আফ্রিকা থেকে ইউরোপ হয়ে বহুযুগ ধরে বহু বিবর্তনের (আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই বিবর্তন হয়) পরে ভারতে প্রবেশ করে। এবং এরাই ভারতের আদিম অধিবাসীদের (আফ্রিকার সঙ্গে যাদের আবহাওয়া ও জলবাহুগত বিশেষ পার্থক্য না থাকায় তাদের তেমন বিবর্তন হয় নি) হঠিয়ে এদেশে দখলদারিত্ব কায়ের করে। তাহলে কী দড়লো? এদেশের আদিবাসীরাই হলো মুলনিবাসী। আর্যরা ইউরোপ ঘুরে আসা একটি বিবর্তিত জনজাতি, যারা সিন্ধু সভ্যতার শাসকদের যুদ্ধে হারিয়ে, তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ধ্বংস করে এদেশের দখল নিয়েছিল।

মজার ব্যাপার হল এদেরই অপর একটি গোষ্ঠী মধ্যযুগে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভারতে প্রবেশ করে সেখানে রাজনৈতিক অধিকার কায়েম করে। তাহলে পার্থক্য কোথায়? সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রাচীন যুগে এদেশে ঢুকে এদেশের আদিম অধিবাসীদের হটিয়ে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতির চাষ শুরু করেছিল অস্ত্রের বলে। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মধ্যযুগে ভারতে এসে তাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরসূরিকে হটিয়ে ভারত দখল করেছিল।

কী দাঁড়ালো? মধ্যযুগে ভারতে আসা ইসলাম ধর্মাবলম্বী শাসকরা যে অর্থে বিদেশি, সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও সেই একই অর্থে বিদেশি। পার্থক্য হল কেউ আগে এসেছে, কেউ পরে। আসলে ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের (এক প্রজন্মের সঙ্গে অন্য প্রজন্মের) ক্ষমতা দখলের লড়াই ছাড়া এটা অন্য কিছুই নয়। শুধুমাত্র ধর্মটা তারা পরিবর্তন করে নিয়েছে সময়, সুবিধা, প্রয়োজনমত।

তাহলে কাদের কী ভাঙ্গা হবে এবং কোন যুক্তিতে ভাঙ্গা হবে? যুক্তিবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যুগে সে প্রশ্ন উঠবেই। পাকিস্থানের বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তিবাদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মান্যতা দিয়েছে মাত্র। আর তার অনেক আগেই ভারতীয় রাজনীতিকরা এই সত্য ও তথ্যকে মান্যতা দিয়ে ভারতীয় সংবিধান তৈরি করে আমাদেরকে ভারতীয় হিসাবে গর্বিত করে গেছে। আজ আমরা যদি সেই মান্যতাকে ভাঙি, তা ভারতীয় হিসাবে কী লজ্জাজনক হবে না?

আইটি সেলের ভাবনাকে মান্যতা দিতে হলে তো মসজিদগুলোর সাথে সাথে মন্দিরগুলোও ভেঙে দিয়ে এদেশের আদিম অধিবাসীদের (আদিবাসীদের) প্রকৃতি পূজার জন্য যে ব্যবস্থা ছিল, যা তারা আজও বজায় রেখেছে, কায়েম করা উচিত। এদেশ তো আদতে তাদেরই। শুধু ঐতিহাসিক ভাবে নয়, অজয় রোয়ুরুর জিনতত্বের গবেষণাসহ নৃতাত্বিকদের গবেষণাও এই দাবির মান্যতা দিচ্ছে। মানবেন?

আসলে, বিদেশি তকমা দিয়ে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বী শাসকদের অভিযুক্ত করার মধ্যে কোনো যুক্তি ও ইতিহাস সম্মত তথ্য নেই। সবই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকদের মনগড়া কাহিনীমাত্র।

আসুন আর একটা দিক থেকে বিচার করে দেখি। আর্যরা বা পরবর্তীকালে মুসলিমরা যখন ভারতে এসেছে তখন ছিল যথাক্রমে প্রাচীন ও মধ্যযুগ। সেসময় অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করাই ছিল রাজকীয় নীতি এবং সেটাই ছিল সেযুগে বৈধ। শুধু মুসলিম শাসকরা মন্দির ভেঙেছে তা নয়, হিন্দু রাজারাও এসময় ক্ষমতা দখলের প্রয়োজনে মন্দির কিম্বা বৌদ্ধ বিহার ভেঙেছে। আবার মুসলিম শাসকরাও প্রয়োজনে শুধু মন্দির নয়, মসজিদও ভেঙেছে। মুসলিম শাসকরা মন্দির তৈরির জন্য জমি ও অর্থ প্রদান করেছে এমন দলিলও মহাফেজ খানায় এখনও বর্তমান। যদিও সে খবর আইটি সেল ইচ্ছাকৃতভাবেই চেপে যান, রাজনীতি করার স্বার্থে।

কিন্তু আজ গণতন্ত্রের যুগ। অস্ত্র নয়, ব্যালটই ক্ষমতা দখলের বৈধ হাতিয়ার। মানুষের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতার স্বীকৃতিই এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ। মধ্যযুগের রীতিনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন কায়েম করলে তো আমাদের মধ্যযুগে ফিরে যেতে হয়। তাহলে আর গণতন্ত্রের কথা বলবো কীভাবে?

এবারে ভাবুন। মুসলিম শাসকরা এদেশে এলো। ক্ষমতা দখল করলো। আট’শ বছরের মত বিরাট সময় ধরে রাজত্ব করলো। সবই বাস্তব সত্য। এটা যদি বাস্তব সত্য হয় এবং মুসলিম শাসকরা যদি হিন্দু বিদ্বেষী হত, আর মন্দির ভেঙে যদি মসজিদ গড়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য হত, তবে আজও সারা ভারতে কীভাবে হাজার হাজার প্রাচীন মন্দির ও মধ্যযুগীয় মন্দির রয়ে গেল? উত্তর রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ৮৭.২ শতাংশ মুসলমান ও ১.৭ শতাংশ হিন্দু জনগোষ্ঠীর মানুষ নিয়েও প্রাচীন সনাতন ধর্মের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার সাংস্কৃতিক তাগিদের মধ্যেই। আমাদের দেশেরও এই ঐতিহ্য ছিল। সেই ঐতিহ্য আজ বিপন্ন হতে বসেছে, একটি রাজনৈতিক দলের ভুল এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক মতাদর্শের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে।

তাই অখণ্ড ভারতের অলীক কল্পনায় না ভেসে, ধর্মীয় বিদ্বেষ দূরে রেখে বাস্তবসম্মত ও ধর্মনিরপেক্ষ অখণ্ড ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবনাকে শক্তিশালী করতে হবে। রাজনীতিকদের দাবার বড়ে হিসেবে নয়, প্রত্যেক ভারতবাসীর নিজেকে রাজনীতির সত্যিকারের কিংমেকার ভাবতে হবে। তবেই গণতন্ত্রের ফসল জনগণের হাতে পৌঁছবে। না হলে 'হোঁচার মাছ বগায় খেয়ে' যাবে, আর ধর্মের মায়াজাল নামক খাঁচায় বন্ধী হয়ে হিংস্র সিংহের মত গর্জাতে গর্জাতে, স্বজাতিকে আঁচড়ে খামচে শক্তিক্ষয় করতে হবে। সেই ফাঁকে লাভের গুড় খেয়ে যাবে চিড়িয়াখানার মালিকরূপী রাজনৈতিক নেতা ও তাদের প্রভু কর্পোরেট পুঁজির কারবারিরা।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে। ...

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ ...

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল...

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে...

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত...

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প...

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা...

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ...

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ...

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই ...