সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রসঙ্গ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধামিক পরীক্ষা : অতিমারী পর্বে শিক্ষার্থীদের লাভ-ক্ষতির হিসাব ও প্রাসঙ্গিক বিতর্ক

করোনা অতিমারী বিশ্বের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছে। তার অভিঘাত এখনও কাটিয়ে ওঠা যায় নি। বিশেষ করে আমাদের দেশে তা গভীর সংকটজনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। একথা সত্য যে, এই অতিমারীর মোকাবিলা করতে যে দূরদৃষ্টি ও বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সরকারের (বিশেষ করে কেন্দ্রের) কাজে নামা উচিত ছিল, তা তারা করে নি কিম্বা পারে নি। কেন পারে নি? তা বিশ্লেষণ এই আলোচনার বিষয় নয়। বিষয় হল এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় যে অভূতপূর্ব সংকট তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে একটি সাম্প্রতিক বিতর্ক।

সম্প্রতি শিক্ষা-দপ্তর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষা (শিক্ষা বিজ্ঞানের ভাষায় মূল্যায়ন) বাতিল ঘোষণা করেছে। প্রত্যাশিতভাবেই এতে ছাত্রছাত্রীদের লাভ-ক্ষতির হিসাব নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে দানা বেধেছে নানা বিতর্ক। বলা বাহুল্য, লাভ নয়, ক্ষতির পরিমাণটাই বিতর্কের বিষয় হওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়েছে। কেননা, সাধারণ অবস্থায় পরীক্ষা না হলে লাভের চেয়ে, ক্ষতিই যে বেশি হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

বর্তমান অতিমারী পরিস্থিতিতে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি আমরা আটকাতে পারছি না। সরকারও বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের জন্য তা পারে নি। তাই পরীক্ষা না হওয়াটা এমনই একটা ক্ষতি, যেটা মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প আমাদের সামনে নেই। তাই, লাভ নয়, ক্ষতি কীভাবে কতটা কমানো যায়, বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত সেটাই। এই প্রেক্ষাপটেই বিচার করতে হবে, ‘পরীক্ষা নেওয়া উচিত কিংবা উচিত নয়’- এই বিষয়টির।

প্রথমেই উঠে আসে যে প্রশ্নটি তা হলো, পড়ালেন না, বা পড়াতে পারলেন না যখন, তখন পরীক্ষা নেবেন কোন যুক্তিতে?

একথা ঠিক যে, অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেমেয়েরা অনলাইনে স্কুল (বেসরকারি) কিম্বা প্রাইভেট টিউশন থেকে কিছুটা পাঠ নিশ্চয়ই পেয়েছে। এবং এক্ষেত্রে তারা প্রায় সবাই সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ড নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া। বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের কোনো পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই তারা পরের ক্লাসের পড়াশুনা শুরু করেছে।

অন্যদিকে গরিব, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা, তারা তেমন কোনো সুবিধাই পায় নি। কিন্তু তাদেরকে পরীক্ষা দিতে বলছি। ভেবে দেখুন, আমরা নানা কারণে এদের অনলাইন ক্লাস হয় নিই নি অথবা নিতে পরি নি। যুক্তি ছিল, গরীব-নিম্নবিত্তদের কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোন ও তাতে ডাটা  (ইন্টারনেট) প্যাকেজ ভরার সমর্থ নেই।

যুক্তিটা অনেকটাই সংগত। কিন্তু পুরোপুরি নয়। কারণ, সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তারা প্রধানত মধ্যবিত্ত (বিশেষত, গ্রামীণ এলাকায়), নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র পরিবাবেরর ছেলেমেয়ে। অস্বীকার করা যাবে না যে, তাদের অনেকেরই সেই ক্ষমতা নেই। কিন্তু খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এদের একটা অংশের হাতে কম দামের হলেও স্মার্ট ফোন ছিলো এবং আছে। যাদের আছে, তারা কিছুটা হলেও অনলাইনের সুবিধা নিতে পারতো। কিন্তু অধিকাংশ সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল সার্কুলার নেই এই অজুহাতে দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়েছে। সুতরাং যাদের ক্লাসই নিলাম না, তাদের পরীক্ষায় বসানোর যুক্তিটা কতটা যুক্তিবিজ্ঞান সম্মত সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

এক্ষেত্রে আরও একটি সংগত প্রশ্ন উঠেছে, ক্লাস রুমের পঠন-পঠনের সুবিধা কী অনলাইনে পাওয়া সম্ভব? উত্তর হলো, না। তাহলে এই ক্লাস করে লাভ কী? এখানেও সেই একই ভুল। লাভের কথার চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমানোটাই এখানে আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত। অতিমারী পর্বে কেবলমাত্র হাতে গোনা গুটিকতক কর্পোরেট সেক্টর ছাড়া লাভের মুখ দেখে নি কেউই। দেখার মত পরিস্থিতি তৈরি করার সামর্থ ও ইচ্ছা কোনটাই আমাদের সরকারের মধ্যে তেমনভাবে চোখে পড়ে নি। সুতরাং লাভ নয়, ক্ষতি কমানোটাই এখানে লাভ হিসাবে ধরতে হবে।

দু’ভাবে ক্ষতি কমানো যেতো। এক. যাদের সামর্থ আছে, তারা কিছুটা হলেও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেতো । দুই. একেবারে বাড়িতে বসে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা পড়াশোনা সংক্রান্ত কাজ পাওয়ার কারণে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারতো। এতে তিনটি লাভ হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। প্রথমত, তাদের পড়াশোনার মধ্যে যুক্ত রাখা যেতো। ফলে পড়াশোনা-ছুট থেকে স্কুল-ছুট হওয়ার সম্ভাবনার বা প্রবণতার গতিকে কিছুটা হলেও মন্থর করা যেতো। দ্বিতীয়ত, এতে চুপচাপ বসে থেকে ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের আখড়া’ হওয়াজনিত সমস্যা, যা ছাত্রছাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি করে, কিছুটা হলেও তা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার সুযোগ পেতো। তৃতীয়ত, বাড়তি পাওনা হিসাবে পড়াশোনার কাজটা খানিকটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেত। যেটা ‘নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’র মতো ধরাই যায়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা একটা অংশকে (যাদের অনলাইনের সুবিধা নেই) বাদ দিয়ে অন্যের কথা ভাববো কোন যুক্তিতে?

এই যুক্তিটি আপাত দৃষ্টিতে বেশ শক্তিশালী, কিন্তু অকাট্য ও প্রশ্নাতীত নয়। কারণ, প্রশ্ন উঠবে, স্বাভাববিক পরিস্থিতিতেও কী আমরা সব ছেলেমেয়েরদের শিখন-সমর্থের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারি? সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো, এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কি ওই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পক্ষে যথেষ্ট? উত্তর হলো, না। আর সে কারণেই একটা ক্লাসের সমস্ত ছেলেমেয়েকে সমানভাবে সময় ও মনোযোগ দিতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রায়শই পারেন না। সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় যখন পারা যায় না, তখন এই অতিমারীর সময় তা পারা যাবে আশা করি কীভাবে? এবং সেটাকে ইস্যু করে কিছু লাভের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করি কোন যুক্তিতে?

অস্বীকার করার উপায় নেই যে, শিখন সমর্থের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌছনটা খুবই কঠিন একটি কাজ। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এক শতাংশের কাছে পৌঁছানো গেলেও সেটা সমাজের জন্য লাভজনক। এই ভাবনা থেকেই হাজারও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার প্রচুর অর্থ খরচ করে শিক্ষা-ব্যবস্থাকে চালু রাখে।

আসলে এই সমস্যা থেকে মুক্তির রসদ ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র-কাঠামোর কাছে নেই। বিশেষ করে আমাদের দেশে। অর্থই যেখানে সবকিছু প্রাপ্তির মূল চাবিকাঠি, ব্যক্তির জন্য সম্পদের পুঞ্জীভবন যেখানে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রিত নয়, উল্টে নিয়ন্ত্রিত ধনবৈষম্যকেই যেখানে অর্থনীতির চালিকা শক্তি ভাবা হয়, শিক্ষাহীনতা, দুর্নীতিপরায়ণতা, দুষ্কৃতী ও দুর্বৃত্তায়ণ যেখানে রাজনীতিকদের অলিখিত যোগ্যতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখে এই সমস্যার সমাধান আশা করা বাতুলতা কিংবা বাচালতামাত্র। তাই, এখানেও সেই ক্ষতি কমানোর হিসাবটাই আমাদের একমাত্র রক্ষা-কবজ ভাবা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

সুতরাং, পুরো অংশকে সম্ভব নয় বলে, কিছু অংশের ক্ষতি না আটকে, পুরটাকেই ক্ষতির খাতায় ফেলে দেওয়াটা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত মনে করা যায় না। তাছাড়া, এই ‘পুরো অংশ’ তো আসলে সম্পূর্ণ অংশ নয়। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত, যারা শত কষ্টের মধ্যেও সন্তানের শিক্ষার কোনও সুযোগ থাকলে তা থেকে বঞ্চিত হতে দিতে চায় না, তারা তো বাইরে থাকছেই। অর্থাৎ তারা তো অনলাইন ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। সুতরাং কোনভাবেই সম্পূর্ণ অংশকে নিজের ভাবনার আঙিনায় ধরে রেখে(শিক্ষা সুযোগ আটকে) শিক্ষাপ্রাপ্তির সমতাবিধান করতে যাওয়াটা অযৌক্তিক। তাই এই প্রশ্ন অনেকটাই অবান্তর এবং কোনভাবেই বিকল্পহীন নয়।

ঠিক একই কারণে এই প্রশ্নটিই অন্য আর এক কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আর তাহল, কোন যুক্তিতে সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করতে পরি? যখন সবাইকে আনতে পারা যাবে না বলে, অনলাইলে পড়ানো থেকে বিরত থাকছি, তখন সেই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার বেঞ্চে ডেকে আনার কোনও নৈতিক ও যৌক্তিক দাবি কি করা যায়?

প্রশ্ন উঠতে পারে। আর্থিক দিক থেকে অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেমেয়েদের (দিল্লি বোর্ডের) কোন পরীক্ষাই দিতে হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও তারা একটা মোটামুটি যুতসই গড় রেজাল্ট হাতে পাবে। অথচ গরীব-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার দাবি করছি। হিসাবের এই নিরিখে দাবিটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এরা সারা বছর কোনো পড়ার সুযোগ পেল না। স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষকরাই ছিলো এদের একমাত্র ভরসার জায়গা। তা থেকে তারা বঞ্চিত হলো। উপযুক্ত প্রাইভেট টিউশন নিতে গেলে যে অর্থ দরকার হয়, তা তাদের এমনিতেই থাকে না। তার ওপর লকডাউনের কারণে অভিভাবকদের কর্মহীন হয়ে পড়া তো রয়েছেই। এই অবস্থায়, এই সব অভাবী ঘরের ছেলেমেয়েদের জোর করে পরীক্ষায় বসানোর সত্যিই কি কোনও যুক্তি আছে? এরা কীভাবে আশানুরূপ রেজাল্ট করবে? যদি না পারে, পরীক্ষা তবে কীভাবে সুবিচারের মাপকাঠি হয়?

তাই, যারা পরীক্ষা ব্যবস্থাকে সুবিচারের মাপকাঠি ভাবছেন, তাদের ভাবনায় যুক্তি ও তথ্যের অপ্রতুলতাজনিত দুর্বলতা আছে। যুক্তি ও তথ্য বলছে, পরীক্ষা নিলে কোনোভাবেই ছেলেমেয়েদের ওপর সুবিচার করা হত না। সব বাবা-মা সন্তানের জন্য সাধ্যমত ভাবলেও বর্তমান পরিস্থিতি তাদের জন্য মোটেও অনুকূল নয়। এটা সবাই হয়তো বুঝবেন না। কিন্তু ভুক্তভোগীমাত্রই বুঝবেন এবং বুঝছেন।

তাছাড়া, শুধুমাত্র আমাদের রাজ্যেই পরীক্ষা বাতিল হয়েছে এমন তো নয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে অধিকাংশ রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবজার্ভেশনও পরীক্ষা বন্ধের পক্ষে।

সুতরাং তর্কের জন্য তর্ক করাই যায়। তাতে যুক্তির অভাব না থাকলেও বাস্তবতার নিরিখে অনেক সময় সেই যুক্তি বৈধতার মানদন্ড পেরতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতি সেরকমই।

সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয় হলো, যারা পরীক্ষা বাতিলের বিরুদ্ধে, পারলে বিপ্লব করে ফেলেন, তাদের ছেলেমেয়েরা অধিকাংশই দিল্লি বোর্ডে (সিবিএসই কিম্বা আইসিএসই) পড়ে। এবং এই বোর্ডগুলো অনেক আগেই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সময় কিন্তু তাদের অধিকাংশই চুপচাপ থেকেছেন। অথচ এখন যুক্তির জল বুনছেন বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যত অন্ধকার ভেবে। জানিনা এই দ্বিচারিতার কী যুক্তি এবং ব্যাখ্যা আছে তাদের কাছে।

কেন্দ্র সরকারের অবৈজ্ঞানিক নীতি ও সিদ্ধান্ত এবং রাজ্য সরকারের আরও মনোযোগী না হওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

মোদ্দাকথা হলো, ধৈর্য ধরা ছাড়া কোনও বিকল্প জনগণের হাতে নেই। ‘আশায় মরে চাষার মত’ বুকে ভরসা নিয়ে তাই আসুন ভাবি, নিশ্চয়ই সময় পাল্টাবে এবং সরকার বিকল্প পথের সন্ধানে এগিয়ে আসবে। আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াবো এই বিশ্বাসে বুক বেঁধে ডুব সাতারে হলেও চলুন কিছুটা এগিয়ে ভাবার ও যাওয়ার চেষ্টা করি।

 --------------------//----------------------

পড়ুন দিনদর্পণ দৈনিক পত্রিকায়

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে। ...

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ ...

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল...

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে...

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত...

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প...

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা...

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ...

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ...

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই ...