আপনার সঙ্গে আমি 99%সহ মত। একটা কথা এখানে মাথায় রাখা দরকার সংখ্যালঘু ভোট দুয়ের অধিক খাতে ভাগ হলেই বিজেপির সাফল্য অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে।
আপনি হয়তো বলবেন সংখ্যাগুরু ভোটও তো ভাগ হবে। এই ভাগ হওয়া মানে মানুষ দল বদল করবে। আগে সিপিএম ছিল বা টিএমসি ছিল এখন তাদের একটা অংশ বিজেপিতে গেছে বা যাবে। এতে সংখ্যাগুরু ভোটারদের তেমন কোনও 'বিশেষ ক্ষতি' হবে না। কারণ, তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ। প্রশাসনে এই গরিষ্ঠতার সুবিধা তারা এখন যেমন পাচ্ছেন, তখনও তেমনই পাবেন।
কিন্তু বিজেপি আসলে এই 'বিশেষ ক্ষতিটা' মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অনিবার্য। এটা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।
তাই হিন্দু অহিন্দু উভয়েরই বিজেপি বিরোধিতায় নৈতিক দায়িত্ব থাকলেও তা পালন না করলে 'বিশেষ ক্ষতি'র বিশেষ কিছুই হবেনা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য।
এক্ষত্রে একটা কথা উল্লেখ খুব জরুরি। আর তা হল সাধারণ ক্ষতির বিষয়টি। এই সাধারণ বা সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণটা উভয় সম্প্রদায়কে সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে অর্থাৎ সমগ্র দেশের জন্য ক্ষতির পরিমাণটা ভয়ংকর ভাবে বেড়ে যাবে একথা বলাই বাহুল্য।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সংখ্যালঘুদের দায়টা একটু নয়, বেশ খানিকটা বেশি এবং অবশ্যই বিশেষ রকমের। এটা সংখ্যাতত্ত্ব ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার কারণেই অনিবার্য। পৃথিবী জুড়েই এর উদাহরণ রয়েছে। দেশ ভেদে কমবেশি হয় এই যা।
এখন প্রশ্ন হলো এই বিশেষ ক্ষতিটা কী?
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দুটি বিষয়।
১) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সে মৃত্যু হার বা সম্পদের ক্ষতি যে দিক থেকেই বিচার করি না কেন।
২) প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা। মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট এখানে বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিতে পারে ভোট মোটামুটি একত্রিত থাকে বলেই। এবং সেই সুবাদে কিছুটা হলেও প্রশাসনিক কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এই বিশেষ ক্ষতির দৃষ্টান্ত বিগত বছরগুলোতে গুজরাট, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনায় সেটা প্রমাণিত।
কিন্তু বিজেপি এলে এই নিয়ন্ত্রণ শূন্যে নেমে আসবে। ফলে বিজেপি ক্ষমতায় এলে যেখানে এই 'বিশেষ ক্ষতি'র বিষয়টির বিশেষ হেরফের হবেনা না সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষজনের কাছে, সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই 'বিশেষ ক্ষতি' বহুগুণ বেড়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে, এই অংকটাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে সংখ্যালঘু তাস হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। এই তাস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ব্যবহার করছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুরা দাঙ্গামুক্ত জীবন ছাড়া তেমন কিছুই পায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আর এখান থেকেই জন্ম নিয়েছে মিম কিংবা অব্বাস সিদ্দিকীর ভোট রাজনীতি।
তাদের প্রশ্ন, আমরা কি যুগ যুগ ধরে সংখ্যালঘু তাস হয়েই জীবন কাটাবো? সহজ প্রশ্ন। কিন্তু সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া ততটা সহজ নয়। এখানেও সেই সংখ্যাতত্ত্ব ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট উত্তর পাওয়াকে জটিল আবর্তে ঠেলে দেবে। কারণ সর্বোচ্চ ৩০% ভোট নিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার কিছুটা নিয়ন্ত্রক হয়তো হওয়া যায়, কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টা নিশ্চিত করতে গেলে সংখ্যালঘু ভোটকে দুইয়ের বেশি ভাগ না হতে দেওয়াকেও নিশ্চিত করতে হবে। এটাই চরম সত্য।
মিম আব্বাস সিদ্দিকী যা বলতে চাইছেন, তাতে সংখ্যালঘু সমস্যার সমাধান কোনো মতেই হবে না। দু'চারজন মুসলিম বিধায়ক হয় তো বাড়বে। কিন্তু সেই সংখ্যা দিয়ে মন্ত্রী সভায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। উল্টে মুসলিম জনগন ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছে এই তথ্য সাধারণ হিন্দু জনমানুষের মধ্যে বিজেপির সাম্প্রদায়িক তাস খেলাকে চেষ্টাকে সহজ করে দেবে।
তাই আবেগ নয়, যুক্তি-বুদ্ধি ও তথ্যদিয়ে বিচার করে দেখতে হবে সংখ্যালঘু ভোট দুয়ের বেশি ভাগ হওয়া উচিত কিনা। মনে রাখা দরকার, আবেগ দিয়ে মানুষের মন জয় কখনও কখনও সম্ভব হলেও একটা জাতি বা সম্প্রদায়ের জীবন সংগ্রামে জয় লাভ কখনই সম্ভব নয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন