সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলিম সম্প্রদায়ের মৌলিক সমস্যা ও তার সমাধান

MD Mazharul Islam আসাদুদ্দিন ছাড় পায় কেন এই প্রশ্নের উত্তরটা এখনো আপনি পাননি? আমিই তো দিয়েছি। আপনার বক্তব্যকে খন্ডন করে  উপযুক্ত যুক্তি  এবং তথ্য সহ  ব্যাখ্যা করে। একই প্রশ্ন তুলছেন কেন বার বার?

আর ভোটের যে হিসেবটা আপনি দেখালেন ওটা ইলেকশন কমিশনের কোন ওয়েবসাইট থেকে পেলেন তার লিঙ্কটা এখানে দিন। প্রমাণ করুন আপনার কথাটা ঠিক।

আপনি কি জানেন, বিহার সম্পর্কে আপনার দেয়া তথ্য আর আব্বাস সিদ্দিকীর দেওয়া তথ্যের মধ্যে বেশ খানিকটা গরমিল দেখা যাচ্ছে?

আর এই প্রশ্নটা বিহার ভোটের পর নয়, প্রথম উঠেছে মহারাষ্ট্রের ভোটের সময়। এরপর উত্তর প্রদেশ। সবশেষে বিহার। আসাদউদ্দিন এর উপস্থিতি বিজেপির লড়াইকে সহজ করে দিয়েছে। তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে। 

আসাদউদ্দিন এর প্রধান সমস্যা, তিনি ধর্মকে হিসু করে নিজের সম্প্রদায়ের জন্য ভোট চান। ভোটে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই দাঁড়াতেই পারেন। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। আসাদুদ্দিন কিংবা আব্বাস সিদ্দিকী তাদেরও অধিকার আছে ভোটে দাঁড়ানোর। কিন্তু তাদের সমস্যা হল, তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগান। এটা কৌশলগতভাবে সংখ্যালঘুদের জন্য একটি ভ্রান্ত রণকৌশল। যেটা বিজেপির মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডা চালাতে আরও বেশি সাহায্য করে।

দেশে মুসলিম জনসংখ্যার যে অনুপাত সেই অনুপাতকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই করলে কয়টা আসন তিনি পাবেন? আর সেই কটা আসন নিয়ে আপনি বা তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টের আইন বিভাগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? হিসাব করে দেখুন, কিছুই করতে পারবেন না। সি এ এ বিলের খসড়া পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আসাদ উদ্দিন ছিড়ে ফেলে ছিলেন। কী হয়েছে তাতে? আইন বাতিল হয়ে গেছে? সারা ভারতবর্ষ থেকে কটা আসনে ভোটে জেতার আশা করেন আপনি মুসলিম হিসেবে? আর সেই কটা আসন নিয়ে আপনি কি করে আইনসভাকে কন্ট্রোল করবেন? একটু ব্যাখ্যা করে বোঝান তো দেখি।

ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট নেওয়ার রাস্তায় হাঁটলে মুসলিমদের তো কোনো লাভই হবে না, উল্টে বিজেপির হিন্দু ভোট আরো বেশি সংহত হয়ে উঠবে। ভেবে দেখেছেন কখনো?

পৃথিবীর কোন একটা দেশ দেখাতে পারবেন, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মকে ইস্যু করে আলাদা রাজনৈতিক দল করে, তারা তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? তাহলে আপনি কীভাবে পারবেন?

পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের সংখ্যালঘু মানুষ ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনের পার্ট হিসেবে রেখে দেশে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে থেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতায় সাফল্য লাভ করেছে। দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে তারা আধুনিক শিক্ষাকে আপন করে নিয়েছেন। এভাবেই তারা সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এটাই প্রকৃত পথ। আমেরিকা, ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ড এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

এই কটা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর তৈরি করুন। ব্যাখ্যা করুন কীভাবে আপনার ওয়াইসি সাহেব ভারতীয় মুসলমানদের উদ্ধার করবেন।

প্রকৃত অর্থে মুসলিমদের কি করা উচিত তা নিয়া খোলা মনে ভাবুন। ধর্মীয় আবেগটা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে গোলালে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিরই বেশি লাভ হবে। কারণ, তারা এখানে সংখ্যাগুরু। এই অস্ত্রের যে লাভালাভ তা তারাই পাবে। সংখ্যালঘুরা তা কোনোভাবেই পেতে পারে না। কারণ তারা সংখ্যালঘু, সংখ্যায় কম। এটা খোলা মনে আগে ভাবার আর বোঝার চেষ্টা করুন।

এখন প্রশ্ন হতে পারে মুসলিম বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে সমস্যা তার সমাধানের উপায় কি?

শুনে রাখুন, এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানো। যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনার বিস্তার ঘটানো। এই একটা অস্ত্রই মুসলিমদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

আপনার আসাদুদ্দিন এবং ফুরফুরার আব্বাস সিদ্দিকী, এদের যদি মুসলিম সমাজের জন্য এত দরদ উথলে পড়ে তাহলে আধুনিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বলুন। সেখানে বিনা পয়সায় দুস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরি-বাকরি করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যাতে অর্জন করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে বলুন।

নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, এই কাজগুলো তারা করেছে? বাংলায় আলামিন মিশন সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে আন্দোলন শুরু করেছে সেই আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলার কথা বলুন। যদি মুসলিমদের জন্য দরদ উথলে পড়ে, তাহলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বলুন। আলাদা করে রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, শিক্ষা আন্দোলন জরুরি। এটা যদি আপনার মাথায় না ঢোকে, সেটা আমার দুর্ভাগ্য নয়, আপনার দুর্ভাগ্য। আর  এর পরিণতি শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া আর্থিকভাবে দুর্বল মুসলিম সমাজের মানুষদের ভুল নেতার পেছনে ছোটার দুর্ভোগ ভোগ করার অন্তহীন একটি প্রক্রিয়া, যার দায় শুধু তাদের নয়, ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে ওঠা মুসলিম ধর্মীয় নেতাদেরও।

মুশকিল হচ্ছে, এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করতে পারেন না ধর্মান্ধ মুসলিমরা। কারণ, তারা নিজেরা ধর্মগ্রন্থ নিজের ভাষায় পড়ে ধর্ম পালন করেন না। তারা ধর্ম পালন করেন তথাকথিত ধর্মগুরুদের পরামর্শ এবং নির্দেশ মত। তারা ভাবেন এটাই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সমস্ত রকম প্রাপ্তির যথাযথ রাস্তা।

এই ভুল থেকে যতদিন মুসলিমরা বেরোতে না পারবেন, ততদিন মুসলিম সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই হবে না।

হিন্দু ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা যেমনভাবে হিন্দু সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে ঠকাচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবেই মুসলিম ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানকেও ঠকিয়ে চলেছেন এবং যাবেন।

আধুনিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসার যে একমাত্র রাস্তা -  এই সত্য, এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা কখনোই সাধারন মুসলমানকে বুঝতে দেন না।  বলা ভালো দেবেন না। এবং নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সেই কাজে এগিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাও তারা করবেন না।

তারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাদ্রাসা তৈরি করবেন, কিন্তু আধুনিক শিক্ষার জন্য স্কুল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করবেন না। অথচ আসল মুক্তির রসদ রয়েছে এখানেই। স্বাধীনতার এত বছর পরও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো আধুনিক শিক্ষার বিকল্প শিক্ষাঙ্গণ বাংলায় কেন গড়ে ওঠেনি এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?

স্বাধীনতার পর যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ টোল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন পাড়ায় পাড়ায়, সেখানে মুসলিম নেতৃত্ব এবং ধর্মগুরুরা কেন আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না তুলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলেছেন কে দেবে তার উত্তর? শুধুমাত্র সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি ধর্মীয় নেতাদের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল তা কি তারা করেছেন? কে দেবে তার উত্তর?

প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে