MD Mazharul Islam আসাদুদ্দিন ছাড় পায় কেন এই প্রশ্নের উত্তরটা এখনো আপনি পাননি? আমিই তো দিয়েছি। আপনার বক্তব্যকে খন্ডন করে উপযুক্ত যুক্তি এবং তথ্য সহ ব্যাখ্যা করে। একই প্রশ্ন তুলছেন কেন বার বার?
আর ভোটের যে হিসেবটা আপনি দেখালেন ওটা ইলেকশন কমিশনের কোন ওয়েবসাইট থেকে পেলেন তার লিঙ্কটা এখানে দিন। প্রমাণ করুন আপনার কথাটা ঠিক।
আপনি কি জানেন, বিহার সম্পর্কে আপনার দেয়া তথ্য আর আব্বাস সিদ্দিকীর দেওয়া তথ্যের মধ্যে বেশ খানিকটা গরমিল দেখা যাচ্ছে?
আর এই প্রশ্নটা বিহার ভোটের পর নয়, প্রথম উঠেছে মহারাষ্ট্রের ভোটের সময়। এরপর উত্তর প্রদেশ। সবশেষে বিহার। আসাদউদ্দিন এর উপস্থিতি বিজেপির লড়াইকে সহজ করে দিয়েছে। তারা ক্ষমতায় চলে এসেছে।
আসাদউদ্দিন এর প্রধান সমস্যা, তিনি ধর্মকে হিসু করে নিজের সম্প্রদায়ের জন্য ভোট চান। ভোটে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই দাঁড়াতেই পারেন। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। আসাদুদ্দিন কিংবা আব্বাস সিদ্দিকী তাদেরও অধিকার আছে ভোটে দাঁড়ানোর। কিন্তু তাদের সমস্যা হল, তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগান। এটা কৌশলগতভাবে সংখ্যালঘুদের জন্য একটি ভ্রান্ত রণকৌশল। যেটা বিজেপির মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডা চালাতে আরও বেশি সাহায্য করে।
দেশে মুসলিম জনসংখ্যার যে অনুপাত সেই অনুপাতকে সামনে রেখে ভোটে লড়াই করলে কয়টা আসন তিনি পাবেন? আর সেই কটা আসন নিয়ে আপনি বা তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টের আইন বিভাগকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন? হিসাব করে দেখুন, কিছুই করতে পারবেন না। সি এ এ বিলের খসড়া পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আসাদ উদ্দিন ছিড়ে ফেলে ছিলেন। কী হয়েছে তাতে? আইন বাতিল হয়ে গেছে? সারা ভারতবর্ষ থেকে কটা আসনে ভোটে জেতার আশা করেন আপনি মুসলিম হিসেবে? আর সেই কটা আসন নিয়ে আপনি কি করে আইনসভাকে কন্ট্রোল করবেন? একটু ব্যাখ্যা করে বোঝান তো দেখি।
ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে ভোট নেওয়ার রাস্তায় হাঁটলে মুসলিমদের তো কোনো লাভই হবে না, উল্টে বিজেপির হিন্দু ভোট আরো বেশি সংহত হয়ে উঠবে। ভেবে দেখেছেন কখনো?
পৃথিবীর কোন একটা দেশ দেখাতে পারবেন, যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মকে ইস্যু করে আলাদা রাজনৈতিক দল করে, তারা তাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? তাহলে আপনি কীভাবে পারবেন?
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের সংখ্যালঘু মানুষ ধর্মকে ব্যক্তিগত জীবনের পার্ট হিসেবে রেখে দেশে প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে থেকেই রাজনৈতিক ক্ষমতায় সাফল্য লাভ করেছে। দ্বিতীয় কৌশল হিসেবে তারা আধুনিক শিক্ষাকে আপন করে নিয়েছেন। এভাবেই তারা সাফল্যের মুখ দেখেছেন। এটাই প্রকৃত পথ। আমেরিকা, ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ড এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এই কটা প্রশ্নের যথাযথ উত্তর তৈরি করুন। ব্যাখ্যা করুন কীভাবে আপনার ওয়াইসি সাহেব ভারতীয় মুসলমানদের উদ্ধার করবেন।
প্রকৃত অর্থে মুসলিমদের কি করা উচিত তা নিয়া খোলা মনে ভাবুন। ধর্মীয় আবেগটা আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে গোলালে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তিরই বেশি লাভ হবে। কারণ, তারা এখানে সংখ্যাগুরু। এই অস্ত্রের যে লাভালাভ তা তারাই পাবে। সংখ্যালঘুরা তা কোনোভাবেই পেতে পারে না। কারণ তারা সংখ্যালঘু, সংখ্যায় কম। এটা খোলা মনে আগে ভাবার আর বোঝার চেষ্টা করুন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে মুসলিম বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে সমস্যা তার সমাধানের উপায় কি?
শুনে রাখুন, এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটানো। যুক্তিবাদী চিন্তা-চেতনার বিস্তার ঘটানো। এই একটা অস্ত্রই মুসলিমদের ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।
আপনার আসাদুদ্দিন এবং ফুরফুরার আব্বাস সিদ্দিকী, এদের যদি মুসলিম সমাজের জন্য এত দরদ উথলে পড়ে তাহলে আধুনিক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে বলুন। সেখানে বিনা পয়সায় দুস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরি-বাকরি করার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যাতে অর্জন করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে বলুন।
নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, এই কাজগুলো তারা করেছে? বাংলায় আলামিন মিশন সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে আন্দোলন শুরু করেছে সেই আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলার কথা বলুন। যদি মুসলিমদের জন্য দরদ উথলে পড়ে, তাহলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বলুন। আলাদা করে রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, শিক্ষা আন্দোলন জরুরি। এটা যদি আপনার মাথায় না ঢোকে, সেটা আমার দুর্ভাগ্য নয়, আপনার দুর্ভাগ্য। আর এর পরিণতি শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া আর্থিকভাবে দুর্বল মুসলিম সমাজের মানুষদের ভুল নেতার পেছনে ছোটার দুর্ভোগ ভোগ করার অন্তহীন একটি প্রক্রিয়া, যার দায় শুধু তাদের নয়, ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে নিজের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থসিদ্ধি করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে ওঠা মুসলিম ধর্মীয় নেতাদেরও।
মুশকিল হচ্ছে, এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করতে পারেন না ধর্মান্ধ মুসলিমরা। কারণ, তারা নিজেরা ধর্মগ্রন্থ নিজের ভাষায় পড়ে ধর্ম পালন করেন না। তারা ধর্ম পালন করেন তথাকথিত ধর্মগুরুদের পরামর্শ এবং নির্দেশ মত। তারা ভাবেন এটাই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সমস্ত রকম প্রাপ্তির যথাযথ রাস্তা।
এই ভুল থেকে যতদিন মুসলিমরা বেরোতে না পারবেন, ততদিন মুসলিম সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন কখনোই হবে না।
হিন্দু ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা যেমনভাবে হিন্দু সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে ঠকাচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবেই মুসলিম ধর্মব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানকেও ঠকিয়ে চলেছেন এবং যাবেন।
আধুনিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসার যে একমাত্র রাস্তা - এই সত্য, এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা কখনোই সাধারন মুসলমানকে বুঝতে দেন না। বলা ভালো দেবেন না। এবং নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সেই কাজে এগিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থাও তারা করবেন না।
তারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মাদ্রাসা তৈরি করবেন, কিন্তু আধুনিক শিক্ষার জন্য স্কুল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করবেন না। অথচ আসল মুক্তির রসদ রয়েছে এখানেই। স্বাধীনতার এত বছর পরও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনো আধুনিক শিক্ষার বিকল্প শিক্ষাঙ্গণ বাংলায় কেন গড়ে ওঠেনি এ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
স্বাধীনতার পর যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ টোল ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন পাড়ায় পাড়ায়, সেখানে মুসলিম নেতৃত্ব এবং ধর্মগুরুরা কেন আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না তুলে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলেছেন কে দেবে তার উত্তর? শুধুমাত্র সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের প্রতি ধর্মীয় নেতাদের যে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল তা কি তারা করেছেন? কে দেবে তার উত্তর?
প্রসঙ্গ জানতে এখানে ক্লিক করুন
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন