সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চিন ও ভারতের সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষাপট : বামপন্থীদের অবস্থান

ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষাপট: বামপন্থীদের অবস্থান

ভারত-চীন সীমান্ত সমস্যার প্রেক্ষাপট

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর তা হলো বামপন্থীরা চিনের আগ্রাসন নিয়ে মুখ খুলছে না কেন? এখানে আমেরিকা হলে তো কলকাতা শহর কেঁপে উঠতো।

সত্যি কথা বলতে কি কলকাতা কাঁপানো মত ক্ষমতা বা পরিস্থিতি বর্তমানে বামপন্থী কেন কোনো পন্থীরই এখন আর নেই। কিন্তু চিন নিয়ে বামপন্থীদের অবস্থান স্পষ্টই আছে। বামপন্থীরা চিনের এই আগ্রাসনের বিরোধিতা করছে। আমার মনে হয় সাধারণ মানুষের কাছে সে খবরগুলো পৌঁছাচ্ছে না।

না পৌঁছানোই স্বাভাবিক। কারণ, ডানপন্থী মিডিয়াগুলো বামপন্থীরা আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বললে, সেটা ফলাও করে খবর করে এবং বামপন্থীদের ভাবনা ভুল - এটা প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। আজকের পরিস্থিতিতে চিনের বিরুদ্ধে বলা বক্তব্য তারা গুরুত্ব দিয়ে খবর করছে না। এটা ডানপন্থী মিডিয়ার একটা রাজনৈতিক কৌশল।

কারণ, চিন নিয়ে বামপন্থীদের অবস্থান পরিষ্কার হলে এরা বামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাতে পারবে না। বামপন্থীদের বিরুদ্ধে এদেশের মিডিয়া যে প্রোপাগান্ডা চালায়, তার প্রধান ভিত্তি হচ্ছে পৃথিবীর কমিউনিস্ট দেশগুলির সম্পর্কে এদেশের বামপন্থীদের ধারণাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা। তাই এই দেশগুলির কোন সমালোচনা বামপন্থীরা করলেও তা ফলাও করে এরা ছাপে না। কারণ তা ছাপালে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করা আর সম্ভব হবে না। মানুষ বুঝে ফেলবে যে বামপন্থীরা যা বলে, তার যথাযত ভিত্তি আছে।

আসলে আমি যে কথাগুলো বললাম এই কথাগুলো বুঝতে গেলে আমাদের বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে এবং তারই প্রেক্ষিতে বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। যদি সেটা থাকে, তাহলেই ছোট্ট যে কথাগুলো বললাম, সেগুলো বোঝা যাবে। যদি সেখানে কোন ঘাটতি থাকে তাহলে বোঝা একটু কঠিন হবে।

আসলে পৃথিবীতে যত যুদ্ধ-বিগ্রহ হচ্ছে তার মূল ভিত্তি হচ্ছে পৃথিবীতে কোন অর্থনীতি চালু থাকবে তা নিয়ে মতপার্থক্য এবং মতবিরোধ। পৃথিবীতে অর্থনীতির মূল কাঠামো আছে দুটি। একটা সমাজতান্ত্রিক, অন্যটি ধনতান্ত্রিক। তবে তার রূপ এক এক দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন চেহারায় যে লড়াই চলছে তা মূলত এই দুটি অর্থনৈতিক কাঠামোর মধ্যে লড়াই।

এই দুটো অর্থনীতির একটি গুণগত পার্থক্য আছে। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি সমাজে ধনবৈষম্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। তাতে ব্যক্তির হাতে ইচ্ছামত ধনসম্পদ সঞ্চয় করা যায়। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ধন বৈষম্য ধ্বংস করতে চায়। তারা চায় ধন-সম্পদের সামাজিক মালিকানা তৈরি হোক এবং ধনসম্পত্তি সমস্ত মানুষের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হোক। আর এটা হলে একজন ব্যক্তি লাগামহীনভাবে তার সম্পত্তি বাড়াতে পারবে না এবং গরীব ও মধ্যবিত্তকে তার প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।

আজকের পৃথিবীতে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আমেরিকা। আর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পৃষ্ঠপোষক ১৯৯০ দশকের আগে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর সেই জায়গায় আস্তে আস্তে নিয়ে নিয়েছে চিন। তাই আজকের পৃথিবীতে মূল যে লড়াই তা মূলত আমেরিকার সঙ্গে চিনের।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, এর সাথে চিনের ভারতের ভূখণ্ড দখলের সম্পর্ক কোথায়? প্রশ্নটা খুব স্বাভাবিক এবং সহজ। কিন্তু উত্তরটা স্বাভাবিক হলেও মোটেই সহজ নয়।

আজকে যে দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতি তা ভারত এবং চিন দুই দেশের পক্ষেই মারাত্মক ক্ষতিকর। এটা দুদেশেরই বোদ্ধা মানুষেরা খুব সহজেই বুঝতে পারে। দু দেশের সরকারও জানে সে কথা। তা সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

কেন? এটা সাধারন মানুষ সহজে বুঝতে পারবেন না।

আসলে এখানেও রয়েছে সেই আমেরিকা এবং চিনের বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল। আমেরিকা ভয় পাচ্ছে চিনের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে এবং চিন যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, আটকাতে না পারলে, আগামী দিনে চিনই হবে পৃথিবীর দাদা। তাই তাকে আটকাতেই হবে। চিনকে আটকাতে গেলে তার হাতের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে ভারত। ভারতের বড় বাজার রয়েছে, রয়েছে সস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা। ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির জন্য যা খুবই দরকারি। তাই ধনতন্ত্রের প্রসারের জন্য ভারতে চিনের প্রভাব বাড়তে দিলে চলবে না।

আর এই প্রেক্ষিতেই আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের বাজারে চিনের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। ভারতের বাজারের ৭৫% থেকে ৮০% ভোগ্য পণ্যের বাজার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চিনের দখলে। যেহেতু চিনের প্রোডাক্ট সস্তা (এবং সেই সস্তা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সেদেশের সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনীতি) সেহেতু আমেরিকা বা অন্য ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বেশি দামী পণ্য ভারতের বাজারে চলছে না। এটা ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর পক্ষে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঠিক এই কারণে আমেরিকা এবং চিনের দ্বন্দ্ব ভারত-চিন সীমান্তে নতুন চেহারায় হাজির হয়েছে।

কিভাবে?

আমেরিকা চাইছে -
১) ভারত চিনের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া বন্ধ করুক।
২) ভারতের বাজার চিনের জন্য বন্ধ হোক। কারণ চিনের সস্তা জিনিসের সঙ্গে আমেরিকা তথা ধনতান্ত্রিক দেশগুলির দুর্মূল্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।

ফলে ধণতন্ত্র পৃথিবীজুড়ে গভীরতর সংকটের মধ্যে পড়েছে। আর ধনতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমেরিকা পড়েছে মহাসঙ্কটে। তার দরকার ভারতকে পাশে পাওয়া।

আমাদের দেশও পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে। তাই এখানেও সেই সংকট গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। সেটা সারা ভারতবর্ষই জানে। এই সংকট থেকে বেরোতে চাইছে দুটি দেশই। আমেরিকা এবং ভারত।

এক্ষেত্রে ভারতের পাশে যখন চিন দাঁড়িয়েছে, তখনই তা আমেরিকার কাছে শিরো পীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। এবং আমেরিকা ভারতের উপর একের পর এক চাপ সৃষ্টি করেছে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলোকে দ্রুত বেসরকারিকরণ করে দেওয়ার। অর্থাৎ ভারতে যেটুকু সম্পদের সামাজিকীকরণ আছে তাও তুলে দাও। এবং সেজন্য দেখা যাচ্ছে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানা দ্রুত বেসরকারি মালিকদের হাতে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে জলের দরে। এগুলো বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রশক্তি অর্থের জন্য পুরোপুরি ধনতন্ত্রের মূল শক্তি দেশি এবং বিদেশি পুঁজিপতিদের অর্থের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এবং সেই দেশ তখন বাধ্য হবে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে।

আমাদের দেশের বর্তমান সরকার, তার যে প্রধান পৃষ্ঠপোষক আরএসএস, এই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক। তারাও চায় সরকার দ্রুত রাষ্ট্রায়াত্ত সম্পত্তিগুলো ধনতান্ত্রিকদের হাতে বিক্রি করে দিক।

সুতরাং ভারত সরকারের উপর বাইরের (আমেরিকার) এবং ভিতরের (আরএসএস) প্রচন্ড চাপের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমান সরকার যেহেতু আরএসএস দ্বারা পরিচালিত সেহেতু সে আগেভাগেই মাথা নত করে বসে আছে। আর এই কারণেই আমেরিকার মতই ভারতের অর্থনীতির হাল খুবই খারাপ।

খারাপ অর্থনীতির প্রভাব সবচেয়ে বেশি কাদের উপর পড়ে? হ্যাঁ, গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের উপরে এই চাপ ভয়ঙ্কর ভাবে পড়ে। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি সেটা কী ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে।

এটা যে ভয়ঙ্কর চেহারা নেবে, তা ধনতান্ত্রিক মতাদর্শের বোদ্ধা মানুষরা জানে। আমাদের সরকারও জানে। তারা জানে, মানুষ এতে ক্ষুব্ধ হবে। আর তাই ধনতান্ত্রিকদের এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র ধর্ম। ধর্মীয় ভেদাভেদ করে গরিব ও মধ্যবিত্তকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। তারা যাতে একত্রিত হয়ে বিদ্রোহী হয়ে না ওঠে, তার সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হচ্ছে ধর্মীয় ভেদাভেদ।

দ্বিতীয় যে অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে, তা হলো জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে উগ্রতার মোড়কে উপস্থাপন করে উগ্র জাতীয়য়তাবাদের জন্ম দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে অখন্ড ভারতের নতুন মানচিত্র তৈরী করে যুব সমাজের মধ্যে প্রচার করা। একাজ আগেও করা হয়েছে। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, যা আগে হাত না। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মানচিত্রে দেখানো হচ্ছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, তিব্বত, ভুটান, বাংলাদেশ, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা মিলে গঠিত হবে অখন্ড ভারতবর্ষ।


শুধু ভারতে নয় সারা বিশ্বজুড়ে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এই অস্ত্র ব্যবহার করে চলেছে। সেই ধর্ম কখনও খ্রিষ্টান, কখনো ইসলাম, কখনো হিন্দু। যেখানে যে নামে আছে, সেই নামেই ভেদাভেদ করে ধনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। বর্তমান ভারত সরকারও তা-ই করছে।

আর এটা করতে গিয়ে ভারত অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যেও পড়েছে। এককথায় পরিস্থিতি একেবারে লেজে গোবরে। একই পরিস্থিতি পাকিস্তানেরও। আর এই কারণেই মাঝে মাঝে, মানে ভোট আসলেই, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় জিগির তুলে ভেদাভেদ তৈরি করে ভোটে জেতার চেষ্টা করে। সেটা করতে গেলে মাঝে মাঝে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়, ভারত পাকিস্তানকে আক্রমণ করে আবার পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করে। এভাবেই সংকট গভীর হয়েছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে এই খেলা করতে গিয়ে ভারত ফেঁসেছে। যখনই কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনগণকে খেপানো হচ্ছে, তখনই প্রশ্ন উঠছে কাশ্মীরের একটা অংশ চিনও তো দখল করে রেখেছে। সেক্ষেত্রে ভারত কেন চুপ রয়েছে? তাহলে ভারত কী চিনকে ভয় পায়? কাগুজে বাঘ পাকিস্তানকে নিয়ে যত আস্ফালন আর রাজনৈতিক ফায়দা তোলা?

পার্লামেন্টে এই ধরণের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই অমিতজি বলে ফেলেছেন, আমরা কাশ্মীরের সমগ্র অংশই আমাদের দখলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখি। আর আমরা মুখে যা বলি, তা করে দেখাই। এবং সত্যি সত্যিই অমিতজি যা বলেন, তা করে দেখান। বর্তমান কাশ্মীর নীতি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ফলে ধণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা পাকিস্তান আর ভারত শুরু করেছিল, তা শুধুই যে খেলা, এই বিশ্বাস আর প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সব সময় রাখতে পারছে না। বিশেষ করে চীন ও পাকিস্তান বর্তমান ভারত সরকারের কার্যকলাপকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখছে। আর এই সন্দেহ থেকেই দুটো দেশই যৌথভাবে ভারতের উপর চাপ তৈরি করার কৌশল নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এবং সেই কৌশলেরই একটি অঙ্গ চিনের ভারতের ভূখণ্ডে জবরদখল। লক্ষ্য, দখলের পর আলোচনা এবং আলোচনায় শর্ত সাপেক্ষে একটু পিছিয়ে যাওয়া।

প্রকৃতপক্ষে চিন চাইছে না, ভারত ট্রাম্পের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করুক। তার জন্য ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রচুর ইনভেস্ট করেছে এবং সহজ শর্তে ঋণও দিয়েছে। শুধু ভারত নয়, ভারতের প্রত্যেকটা প্রতিবেশী দেশকে আর্থিক সহযোগিতা করে এবং ঋণ দিয়ে তাদের আমেরিকাপন্থী হওয়া থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে চলেছে। নেপাল ও শ্রীলংকার অবস্থান নিশ্চয়ই আমাদের নজরে আছে।

এখানেই ভারতের পররাষ্ট্রনীতির আর একটা বড় ভুল ধরা পড়েছে। ভারত বরাবরই জোট নিরপেক্ষ নীতি নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ধনতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মধ্যে সম-দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। ফলে কোন পক্ষই ভারতের উপর অন্যায্য চাপ তৈরি করতে চায়নি এবং পারেও নি। কিন্তু বর্তমান সরকার আমেরিকার সঙ্গে অত্যধিক মাখামাখি করার কারণে চিনের সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে। আর এ কারণেই চিন ভারতীয় দখলে থাকা ভূখণ্ডে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ভারতকে চাপে রাখতে চাইছে।

বামপন্থীরা চিনের এই আগ্রাসনকে সমর্থন করছে না এবং একই রকমভাবে ভারতের জোট নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সরে আসাকেও পছন্দ করছে না। এবং সেইজন্যে বামপন্থীদের অবস্থান হলো, চিনের সঙ্গে আলোচনায় বসে, যদি সম্ভব হয়, অসামরিক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে ন্যায্য মীমাংসা করা উচিত।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে। ...

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ ...

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল...

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে...

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত...

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প...

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন আলী হোসেন বিচার একটি যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। বিচারক কখনই সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না, যদি না এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা ও তার কর্মকর্তারা উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করতে এবং বিচারককে তা সরবরাহ করতে পারেন। আর বিচার ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি শক্তির আধার; তা যার হাতে থাকে, তিনিই বিচারক। এই শক্তি ন্যায়বিচার তখনই দিতে পারে, যখন বিচারক নিরপেক্ষ থাকার সৎ সাহস দেখান এবং সাংবিধানিক আইন এবং তার প্রয়োগ বিষয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। তবে তাঁর সফলতা নির্ভর করে তথ্য সংগ্রহকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং আইনজীবীরা কতটা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই তথ্য বিচারকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তার উপর। তাই একজন বিচারক বা বিচার ব্যবস্থা যা বিধান দেয়, তা সব সময় একশ শতাংশ সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত হবে - এমন কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো একটি পক্ষ যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে ন্যায় বিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, ...

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা...

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ...

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই ...