Goutam Ray হ্যাঁ। এবার বুঝলাম।
কিন্তু সম্পূর্ণ একমত হতে পারলাম না। দুঃখিত। কারণ,
১) ভারত ধর্মীয় বা রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্রের দেশ নয়। খাঁটি কথা।
কিন্তু বর্তমান সরকার কি সেকথা মনে রেখেছে?
২) সব সময় সঠিকভাবে প্রতিবাদ চলে। এটাও খাঁটি কথা।
কিন্তু বর্তমান সরকার এই ধরণের আন্দোলন করতে দিচ্ছে? আন্দোলন করার কারণে কতজন এখন জেলের ঘানি টানছেন গুনে দেখেছেন?
৩) ঘুরেফিরে আরব দেশ বা চিনকে টেনে আনেন কেন? কী প্রমাণ করার জন্য?
শিক্ষিত মানুষ মাত্রেই জানেন আরবের দেশগুলোতে রাজতন্ত্র চলছে। সেখানে গণতন্ত্র নেই? তো তাতে কি প্রমাণ হয় আমার দেশের গণতন্ত্র না থাকলেও চলে?
৪) আপনার আমার মতে চিনে আমাদের দেশের মতো গণতন্ত্র নেই। এটাও খাঁটি কথা।
কিন্তু খাঁটি গণতন্ত্র কোনটা? আমাদেরটা না চিনেরটা? এটা কীভাবে প্রমাণ হয়? এর মানদন্ড কী? মানে, খাঁটি গণতন্ত্র কাকে বলে?
হ্যা, সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে বহুদলীয় ব্যবস্থা নেই। এটা ঠিক কথা। কিন্তু গণতন্ত্র নেই একথা ভুল। সমাজতন্ত্রের গণতন্ত্র একরকম আর ধনতন্ত্রের গণতন্ত্র আর একরকম। এটা ভুললে চলবে না।
আমাদের দেশের গণতন্ত্র ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র। চিনের গণতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র। পলিটিক্যাল সায়েন্স পড়লেই এই দুটো শব্দের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুটোই পড়ানো হয়। সারা পৃথিবীতেই পড়ানো হয়। দুটোর বৈশিষ্ট্য দু'রকম। ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রে ভোট কেনা হয়। কারণ, তা কেনা যায়। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের বহু দল নেই। তাই সেখানে সে সুযোগ নেই। সেখানে একটি দল। সেই দলের মধ্যেই আছে বহু মত। যখন যে মত সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়, তখন তারাই ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
খেয়াল করে দেখুন ধানতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে মূলত দুটো দলই ঘুরেফিরে দেশ শাসন করে। সেখানে অন্য কোন দলের কোন গুরুত্বই নেই।
তাহলে কি দাঁড়ালো? দাঁড়ালো এই যে, ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দেশে ঘুরেফিরে দুটো দল ক্ষমতায় আসে। আর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে একটা দলের বিভিন্ন গোষ্ঠী ঘুরেফিরে ক্ষমতায় আসে। এই দুই ধরনের দেশেই তাদের নিজস্ব সংবিধান আছে। সেই সংবিধানের মধ্যে থেকেই তারা তাদের দেশ পরিচালনা করে। প্রয়োজনে তারা প্রত্যেকেই সেই সংবিধানের সংশোধন পরিমার্জন করে। যখন যারা ক্ষমতায় যায়, তাদের মতো করে তারা এই পরিবর্তন আনে। চিন তাই আগের সেই চিন নেই।
তাহলে কি দাঁড়ালো আলখাল্লা মুড়ি দিয়ে যে যাই বলুক না কেন, আসলে সব রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক কাঠামো আছে। কিন্তু সেগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা আলাদা।
তাহলে কোন মানদণ্ডে আপনি মানবেন বা মাপবেন সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের চেয়ে ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র ভালো?
আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে। আমরা গর্ব করে বলি, আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক দেশ। ঠিক। কিন্তু এই গণতন্ত্রের মানেটাকি? জনগনের তন্ত্র। জনগণের কত শতাংশ ভোট পেয়ে এখানকার সরকার ক্ষমতায় বসে? বর্তমান সরকার বসে আছেন 37 এর কিছু বেশি শতাংশ ভোট নিয়ে। তাহলে বাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কিভাবে গণতন্ত্র ভোগ করছে? যাদের সংখ্যা কম তারাই তো ক্ষমতায়। এটা কীভাবে কোন যুক্তিতে খাঁটি গণতন্ত্র হলো?
তার ওপরে ভোট কেনাও যায়। এমপি কেনা যায়, বিধায়ক কেনা যায়। এসব কেনাবেচা তো প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে দেশে।
এবার ভাবুন তো, এই কেনাবেচার ক্ষমতা কাদের আছে? গরিব মধ্যবিত্ত জনগণের? না পুঁজিপতিদের? আপনি বলতে বাধ্য বা স্বীকার করতে বাধ্য যে, পয়সাওয়ালা পুঁজিপতিরাই এই কাজ করার ক্ষমতা রাখে। মধ্যবিত্তের বা গরিবের এ কাজ করার ক্ষমতা নেই। তাই গণতন্ত্রের নাম করে যারা ক্ষমতায় যায়, তারা আসলে পুঁজিবাদের দালাল পুঁজিপতিদের এজেন্ট। তাই পুঁজিপতিদের কোটি কোটি টাকা মকুব হয়, আর গরিব না খেয়ে মরে। আজকের ভারতবর্ষের পরিস্থিতিই তার প্রমান।
তাই এখানে যে সরকার ক্ষমতায় যায় সে সরকার পুঁজিবাদীদের সরকার। আপনি মানলেও পুঁজিবাদী সরকার। না মানলেও পুঁজিবাদীদের সরকার। যেখানে গরীব মধ্যবিত্তের কোন কথা চলে না।
এবার সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কথায় আসুন। আপনি কথায় কথায় চিনকে টেনে আনেন । তাই চিন সহ অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কথা মাথায় রেখে আপনার সঙ্গে আলোচনা শেষ করি ।
চিনে একদলীয় সরকার। আপনি সমালোচনা করবেন, আমি সমালোচনা করব। করতেই পারি। কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু একথা কি অস্বীকার করতে পারবেন ভারতের মতো গণতন্ত্রের দেশেগুলোতে যত গরিব মানুষ বর্তমান পরিস্থিতিতে মারা গেছেন, অনাহারে আছেন, দূর্ভোগে আছেন, সেই সংখ্যা আপনি সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের দেশগুলোতে দেখাতে পারছেন না। এমনকি এই দেশের কেরালা রাজ্যও না? মানুন আর না মানুন, এটাই সত্যি।
এবার বলুন, দেশের জনগণকে যদি কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, কোন শাসন ব্যবস্থা কোন সরকার মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই গণতন্ত্র কীভাবে সঠিক গণতন্ত্র হয়? সে যতই বহুদলীয় হোক আর একদলীয় হোক।
মোদ্দাকথা চিন সহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকার যে ধরনের গণতন্ত্রই হোক না কেন, তারা পেরেছে। আর আমার দেশের সরকার সহ ভালো তান্ত্রিক গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী সরকারগুলো পারল না। তার কারণ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এখানে ধনতান্ত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে আছে। তাই।
হ্যাঁ একদলীয় গণতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও তারা পেরেছে। পৃথিবীর মানচিত্রে তাকিয়ে দেখুন যে যে দেশগুলোতে এই একদলীয় সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র আছে সেই সেই দেশে করোনা এই রকম ভয়ংকর ছোবল বসাতে পারেনি। পারেনি তার কারণ সেখানকার সরকারের ধরনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সরকারের কর্মকর্তারা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার পরিচালনা করে। পুঁজিপতিদের দালালি করে না। তাদেরকে মানুষের জন্য কাজ করতে বাধ্য করে। এক কথায় সেদেশের পুঁজিপতিদের সরকার নিয়ন্ত্রণ করে আর আমাদের মতো দেশগুলোকে দেশগুলোতে পুঁজিপতিরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার জন্য জনগণকে তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মান্ধ এবং অশিক্ষার মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। আর আমার পোষ্টের, আজকের পোস্টের, এটাই ছিল মর্মকথা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন