সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সমাজতন্ত্র বনাম ধনতন্ত্র

Joyanta Roy Chowdhury সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এগুলো অপপ্রচার। সমাজতন্ত্র কখনো কাউকে কুড়ে করে ফেলে না। বিনা পরিশ্রমে বসে বসে খাওয়ায় না।

বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চলে। সেখানে কেউ কাউকে শোষণ করে না। প্রত্যেকের মেধা অনুযায়ী এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে হয়। এবং সেই অনুযায়ী সে পারিশ্রমিক পায়।

কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরিষেবার ক্ষেত্রে যেমন স্বাস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। জনগণের এইসব মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকার দায় বদ্ধ থাকে।

উৎপাদন ক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে তাদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সবচেয়ে বড় কথা এখানে ব্যক্তি কে লাগামছাড়া হতে দেয় না। সেখানে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে দেশের সম্পদ গুটিকতক মানুষের হাতে জমে গিয়ে অসংখ্য মানুষ দুঃখ দারিদ্রতায় ভোগে না।

আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে। প্রকৃত শিক্ষার অভাব হলে এই ধারণার জন্ম হয়। যেমন ধরো, একজন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এদেরকে আমরা সমাজের যে জায়গায় স্থান দেই, কৃষক বা শ্রমিককে তা দেই না। কিন্তু এদের ছাড়া সভ্যতা অচল। আমরা বুঝতে পারি না যে সব কাজের জন্য শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। চাষ করতে গেলে বা কারখানায় শিল্প পণ্য উৎপাদন করতে গেলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন হয়। সেই গানটাও ঠিকঠাক জানা দরকার। কৃষক এবং শ্রমিক কে সেই শিক্ষা দিলে উৎপাদন বাড়ে উন্নত মানের হয় এবং দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। তুমি ভেবে দেখো কৃষক এবং শ্রমিক যদি কাজ না করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সহ যাদেরকে আমরা উচ্চ মর্যাদা দিন আর্থিক সুবিধা দিয়ে তারা এ সভ্যতা কে টেনে নিয়ে যেতে পারবে? পারবে না। আসলে আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ পরস্পরের পরিপূরক
। একজনকে ছাড়া আরেকজন কোন ভাবেই চলতে পারেন। একটু চিন্তা করলেই এই সত্য উপলব্ধি করা যায়।

এবার তুমি বলো আমার সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক শ্রমিকের সাথে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের সমান মর্যাদা দেয়া হয়? হয় না।

তুমি যুক্তি দিয়ে দেখাও তো কিভাবে একজন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার যে একজন শিল্প শ্রমিক কৃষক কিভাবে সমাজে বেশি অবদান রাখছে। একজন কৃষকের ঘরের ছেলে যদি বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ পায় একজন বর্তমান মানুষের ছেলে যেভাবে পায় সে কেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেনা। কৃষক বা শ্রমিকের সন্তানকে ভগবান আল্লাহ কম মেধা দিয়ে পাঠান? না পাঠান না। সুতরাং একজন মানুষকে যদি রাস্ট্র তাকে উপযুক্ত ভাবে শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করে তবে সে নিশ্চয়ই তার মেধা অনুযায়ী সমাজের কোন না কোন কাজে সাফল্যের সঙ্গে অবদান রাখতে পারে। আর এর ফলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর হয়ে একটা সাম্যবাদী সমাজ গড়ে উঠতে পারে।

সেই সমাজে হয়তো 10-12 জন পুঁজিপতির জন্ম হয় না, কিন্তু কোন মানুষ অভুক্ত থাকে না শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের পরিষেবা না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে না।

আজকের এই পরিস্থিতিতে আমরা মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পেরেছি? পারিনি। তাই ডাক্তারদের জীবন ও আজকে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখানে যদি একটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকত, যেটা কি উপায় আছে, চিনে আছে, তাহলে এই অসহায় অবস্থার মধ্যে আমাদের এবং ডাক্তারদের পড়তে হতো না।

বেসরকারি হাসপাতালগুলো হাত গুটিয়ে বসে আছে। বিভিন্ন অজুহাতে তারা হাসপাতাল বন্ধ করে রেখেছে। একমাত্র সরকারি হাসপাতালগুলো ই একমাত্র ভরসা। অথচ আমাদের দেশের সরকার এই স্বাস্থ্য খাতে এবং শিক্ষা খাতে ব্যয় সবচেয়ে কম করেন। যার ফলে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো যেভাবে এই ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে পারছে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো মোটেই পাচ্ছেনা। তাহলে কোথায় তোমার ওই তত্ত্ব খাটলো। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কি করেছে এ 70 বছর ধরে। অথচ চীন, আমাদের পরে স্বাধীনতা অর্জন করে, সে এখন বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক এ পরিণত হয়েছে। আমরা পারিনি। তাহলে তোমার ওই তত্ত্ব এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলো না। আমেরিকার মত একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশ চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাচ্ছে না। এবার বলতো কেন পাচ্ছে না? পাচ্ছে না তার কারণ, ওখানে ব্যক্তি কে রাষ্ট্রের অর্থাৎ সমাজের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। পুঁজিপতিরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সম্পর্কে লুট করতে পারেনা। কিন্তু এখানে পারে।

তুমি হয়তো পড়নি যে, আমেরিকা দুশো বছর এবং ইউরোপীয় দেশগুলো প্রায় পাঁচশো বছর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম রেখে এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষণ চালিয়ে যে উন্নতি করতে পারেনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, হাজার 1917 সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হবার পর স্ট্যালিন এর নেতৃত্বে রাশিয়া মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকা কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আজ চিন সেই ভূমিকা এসে দাঁড়িয়েছে। আর আমরা এখনো ঢুকছি। 85 শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। অসংখ্য মানুষের থাকার জায়গা নেই।

আসলে অসাম্য কখনোই উন্নতির চাবিকাঠি হতে পারে না। অসাম্য জন্ম দেয় হিংসা, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা। আর কোন দেশে যদি এই সংখ্যা বেশি হয় সে দেশ কখনো উন্নত হতে পারে না।

একটা উদাহরণ দেই, তুমি বড়লোক আর তোমার বাড়ির পাশে একজন হতদরিদ্র মানুষ থাকেন, তুমি রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে? পেটের জ্বালায় সে যে তোমার রাতের ঘুমকে হারাম করবে না অসাম্যের তত্ত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?

সুতরাং অসাম্য নয়, সমতায় উন্নতির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। পুঁজিবাদী রা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এই তত্ত্বকে বিকৃত করে আমাদের সামনে তুলে ধরে। আমরা বিভ্রান্ত হই।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে। ...

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ ...

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল...

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে...

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত...

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প...

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি : নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা - আলী হোসেন আলী হোসেন বিচার একটি যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। বিচারক কখনই সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না, যদি না এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থা ও তার কর্মকর্তারা উপযুক্ত তথ্য সংগ্রহ করতে এবং বিচারককে তা সরবরাহ করতে পারেন। আর বিচার ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি শক্তির আধার; তা যার হাতে থাকে, তিনিই বিচারক। এই শক্তি ন্যায়বিচার তখনই দিতে পারে, যখন বিচারক নিরপেক্ষ থাকার সৎ সাহস দেখান এবং সাংবিধানিক আইন এবং তার প্রয়োগ বিষয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। তবে তাঁর সফলতা নির্ভর করে তথ্য সংগ্রহকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং আইনজীবীরা কতটা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই তথ্য বিচারকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তার উপর। তাই একজন বিচারক বা বিচার ব্যবস্থা যা বিধান দেয়, তা সব সময় একশ শতাংশ সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত হবে - এমন কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো একটি পক্ষ যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে ন্যায় বিচার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, ...

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা...

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ...

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ...