Joyanta Roy Chowdhury সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এগুলো অপপ্রচার। সমাজতন্ত্র কখনো কাউকে কুড়ে করে ফেলে না। বিনা পরিশ্রমে বসে বসে খাওয়ায় না।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চলে। সেখানে কেউ কাউকে শোষণ করে না। প্রত্যেকের মেধা অনুযায়ী এবং সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করতে হয়। এবং সেই অনুযায়ী সে পারিশ্রমিক পায়।
কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ করে পরিষেবার ক্ষেত্রে যেমন স্বাস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। জনগণের এইসব মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সরকার দায় বদ্ধ থাকে।
উৎপাদন ক্ষেত্রে যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে তাদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সবচেয়ে বড় কথা এখানে ব্যক্তি কে লাগামছাড়া হতে দেয় না। সেখানে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে। ফলে দেশের সম্পদ গুটিকতক মানুষের হাতে জমে গিয়ে অসংখ্য মানুষ দুঃখ দারিদ্রতায় ভোগে না।
আমাদের একটা ভুল ধারণা আছে। প্রকৃত শিক্ষার অভাব হলে এই ধারণার জন্ম হয়। যেমন ধরো, একজন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এদেরকে আমরা সমাজের যে জায়গায় স্থান দেই, কৃষক বা শ্রমিককে তা দেই না। কিন্তু এদের ছাড়া সভ্যতা অচল। আমরা বুঝতে পারি না যে সব কাজের জন্য শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। চাষ করতে গেলে বা কারখানায় শিল্প পণ্য উৎপাদন করতে গেলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজন হয়। সেই গানটাও ঠিকঠাক জানা দরকার। কৃষক এবং শ্রমিক কে সেই শিক্ষা দিলে উৎপাদন বাড়ে উন্নত মানের হয় এবং দেশের অর্থনীতি অভূতপূর্ব উন্নতি হয়। তুমি ভেবে দেখো কৃষক এবং শ্রমিক যদি কাজ না করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সহ যাদেরকে আমরা উচ্চ মর্যাদা দিন আর্থিক সুবিধা দিয়ে তারা এ সভ্যতা কে টেনে নিয়ে যেতে পারবে? পারবে না। আসলে আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ পরস্পরের পরিপূরক
। একজনকে ছাড়া আরেকজন কোন ভাবেই চলতে পারেন। একটু চিন্তা করলেই এই সত্য উপলব্ধি করা যায়।
এবার তুমি বলো আমার সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক শ্রমিকের সাথে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের সমান মর্যাদা দেয়া হয়? হয় না।
তুমি যুক্তি দিয়ে দেখাও তো কিভাবে একজন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার যে একজন শিল্প শ্রমিক কৃষক কিভাবে সমাজে বেশি অবদান রাখছে। একজন কৃষকের ঘরের ছেলে যদি বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ পায় একজন বর্তমান মানুষের ছেলে যেভাবে পায় সে কেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবেনা। কৃষক বা শ্রমিকের সন্তানকে ভগবান আল্লাহ কম মেধা দিয়ে পাঠান? না পাঠান না। সুতরাং একজন মানুষকে যদি রাস্ট্র তাকে উপযুক্ত ভাবে শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করে তবে সে নিশ্চয়ই তার মেধা অনুযায়ী সমাজের কোন না কোন কাজে সাফল্যের সঙ্গে অবদান রাখতে পারে। আর এর ফলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর হয়ে একটা সাম্যবাদী সমাজ গড়ে উঠতে পারে।
সেই সমাজে হয়তো 10-12 জন পুঁজিপতির জন্ম হয় না, কিন্তু কোন মানুষ অভুক্ত থাকে না শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের পরিষেবা না পেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে না।
আজকের এই পরিস্থিতিতে আমরা মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করতে পেরেছি? পারিনি। তাই ডাক্তারদের জীবন ও আজকে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখানে যদি একটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকত, যেটা কি উপায় আছে, চিনে আছে, তাহলে এই অসহায় অবস্থার মধ্যে আমাদের এবং ডাক্তারদের পড়তে হতো না।
বেসরকারি হাসপাতালগুলো হাত গুটিয়ে বসে আছে। বিভিন্ন অজুহাতে তারা হাসপাতাল বন্ধ করে রেখেছে। একমাত্র সরকারি হাসপাতালগুলো ই একমাত্র ভরসা। অথচ আমাদের দেশের সরকার এই স্বাস্থ্য খাতে এবং শিক্ষা খাতে ব্যয় সবচেয়ে কম করেন। যার ফলে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো যেভাবে এই ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে পারছে ধনতান্ত্রিক দেশগুলো মোটেই পাচ্ছেনা। তাহলে কোথায় তোমার ওই তত্ত্ব খাটলো। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা কি করেছে এ 70 বছর ধরে। অথচ চীন, আমাদের পরে স্বাধীনতা অর্জন করে, সে এখন বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক এ পরিণত হয়েছে। আমরা পারিনি। তাহলে তোমার ওই তত্ত্ব এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলো না। আমেরিকার মত একটা সাম্রাজ্যবাদী দেশ চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পাচ্ছে না। এবার বলতো কেন পাচ্ছে না? পাচ্ছে না তার কারণ, ওখানে ব্যক্তি কে রাষ্ট্রের অর্থাৎ সমাজের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। পুঁজিপতিরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সম্পর্কে লুট করতে পারেনা। কিন্তু এখানে পারে।
তুমি হয়তো পড়নি যে, আমেরিকা দুশো বছর এবং ইউরোপীয় দেশগুলো প্রায় পাঁচশো বছর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম রেখে এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষণ চালিয়ে যে উন্নতি করতে পারেনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, হাজার 1917 সালে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হবার পর স্ট্যালিন এর নেতৃত্বে রাশিয়া মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকা কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আজ চিন সেই ভূমিকা এসে দাঁড়িয়েছে। আর আমরা এখনো ঢুকছি। 85 শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে। অসংখ্য মানুষের থাকার জায়গা নেই।
আসলে অসাম্য কখনোই উন্নতির চাবিকাঠি হতে পারে না। অসাম্য জন্ম দেয় হিংসা, অশিক্ষা, অজ্ঞানতা। আর কোন দেশে যদি এই সংখ্যা বেশি হয় সে দেশ কখনো উন্নত হতে পারে না।
একটা উদাহরণ দেই, তুমি বড়লোক আর তোমার বাড়ির পাশে একজন হতদরিদ্র মানুষ থাকেন, তুমি রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে? পেটের জ্বালায় সে যে তোমার রাতের ঘুমকে হারাম করবে না অসাম্যের তত্ত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
সুতরাং অসাম্য নয়, সমতায় উন্নতির সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। পুঁজিবাদী রা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে এই তত্ত্বকে বিকৃত করে আমাদের সামনে তুলে ধরে। আমরা বিভ্রান্ত হই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন