সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি

#খোলা____ঠিঠি

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ,

আমি আপনার রাজ‍্যের একজন শিক্ষক।
লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে।
আপনার দলের ভরাডুবি হয়েছে বলব না,
তবে যে ধাক্কাটা পেয়েছেন, তাতে বর্তমানের নিরিখে ভরাডুবিই বলা চলে।

চৌত্রিশ থেকে বাইশ!
বিজেপির দুই থেকে আঠারো!
রাজ‍্য রাজনীতিতে বিজেপির নবজাগরণ।

আমার এ চিঠি কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে লেখা নয়। শুধুমাত্র শাসক দল হিসাবে আপনার সরকারের কয়েকটা ভুল নীতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

১) বেকার সংখ্যা বৃদ্ধিঃ -

কয়েকদিন আগেই একটা তথ্য দেখলাম।
দেশের মধ্যে বেকারত্বের দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ অনেক ওপরে বিরাজ করছে।

ভাবতে খুব অবাক লাগে ,
আপনি প্রকাশ‍্য জনসভায় বলছেন
চুপ ভাজুন , চুল কাটা শিখুন , টোটো চালান.... ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি...
সব কাজকে সম্মান জানিয়েই বলছি ,
এই সমস্ত কাজ কাজ করবে বিএ, এমএ বিএড,ডিএড পাশ করা ছেলেরা?

এসব কাজ করার জন্য এত কষ্ট করে ,এত টাকা খরচ করে এত শিক্ষিত হবার প্রয়োজন কি ছিল?
বিভিন্ন জনসভায় দেখেছি আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিটেকনিক, আইটিআই কলেজ গড়ার এবং এইসব কোর্স করার ব‍্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করছেন।
কিন্তু একগাদা টাকা খরচ এইসব কোর্স করার পরের ভবিষ্যত কি?
কর্ম সংস্থান কোথায়? শিল্প কোথায় ?
এসএসসি প্রার্থীরা নিয়োগের জন‍্য অনশন করছে,
আপনার সরকার সহানুভূতি দেখায়নি।
শিক্ষিত যুবকরা আন্দোলন করছে।
আজ বাংলার প্রায় প্রতিটা ঘরে বেকার জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছে কেউ...
বেকারত্ব কি জিনিস তা হয়তো ঠান্ডা ঘরে বসে আপনার মন্ত্রীর বুঝতে পারে না।

অনেকটা জোর গলাতেই বলতে পারি ,
আঠারো বছর থেকে ত্রিশ বছরের ভোটারদের ভোট থেকে আপনি বঞ্চিত হয়েছেন।
যতদিন যাচ্ছে মাধ‍্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে পাশের শতকরা এবং নম্বরের শতকরা বেড়ে চলেছে।
ধরে নিলাম প্রতি বছর দশ লক্ষ ছেলেমেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে।
২০১১-২০১৯ পর্যন্ত নব্বই লাখ ছেলেমেয়ে পাশ করছে।
কতগুলো চাকরি দিয়েছেন?
ভাববেন না আমি বোকার মতো বলছি নব্বই লাখ ছেলেমেয়ে কেই সঙ্গে সঙ্গে চাকরি দিতে।
কমপক্ষে এই বিশ্বাসটা অন্তত দিন যে ,
পড়াশোনা শেষে কিছু না কিছু চাকরি পেতে পারে।
ভবিষ্যত চিন্তায় যুবসমাজ আজ হীনমন্যতায় ভুগছে।

বেকারত্ব বৃদ্ধি ভোট ব‍্যাঙ্কে প্রভাব ফেলেছে।
বিভিন্ন জনসভায় উল্লেখ করেছেন এত লাখ চাকরি দিয়েছেন বলে।
মনে রাখবেন , এটা ২০১৯ সাল। ১৯৯০ নয়।
মানুষ আজ অন্ধ নয়। বর্তমানে আঙুলের টাচে হাতের মুঠোয় গোটা বিশ্ব।
বর্তমান সমাজের সবদিক চোখের সামনে উঠে আসছে মোবাইলের স্ক্রিনে।
প্রাথমিক বা হাই স্কুলের নিয়োগপত্রের জন‍্য কত রেট চলছে তা চায়ের দোকানে যে কাপ ধোয়,
সেও বলে দিতে পারবে।

এবার প্রশ্ন হল ,
মোদী কি প্রচুর কর্মসংস্থান করেছেন?
একটাই উত্তর - না....
তাহলে উনি ১৮-৩০ এর মধ্যে ভোটারদের ভোট পেলেন কি করে?

উনি আপনার মতো বেকারদের নিয়ে চপ,টোটো,চুল কাটা শব্দ ব‍্যবহার করেননি।
পঞ্চাশ হাজার নিয়োগ করে উনি আপনার মতো বলেননি ,
এককোটি বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান করেছেন!

কালকেই দেখলাম  প্রধানমন্ত্রী বলছেন ,
উনি কিছু ভুল করলে যেন শুধরে দেন জনতা।

আর আপনি তো হামেশাই বলেন,
আমাকে জ্ঞান দিতে এসোনা, আমাকে কিছু বোঝাতে এসোনা ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি....

হতে পারেন আপনি পশ্চিমবঙ্গের সর্বময় কর্তা।
কিন্তু সেটা আমাদের দেওয়া ভোটের জন‍্য।

তাই এই অহংবোধ এবং বেকারদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলার প্রভাব ভোট ব‍্যাঙ্কে পড়েছে।

২) শিক্ষকদের তথা সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ‍্য সম্মান না দেওয়াঃ -

প্রথমেই তিনটি কথা বলব।
i ) মাননীয় রাজকুমার স‍্যারের মৃত্যু প্রসঙ্গে -
উনি নাকি সিগারেট খেতে ১৫ কিমি রেললাইন বরাবর হেঁটেছেন ( আপনার সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য )

ii) শিক্ষকরা নাকি অযোগ্য, এতদিন কিছুই পড়াননি বিদ‍্যালয়ে বা আপনারাই দু'মাস ছুটি ঘোষণা করার পর ,,,,
যত গরম কি শুধু মাষ্টারদের লাগছে ( বক্তব্য আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর )

ii ) ঘেউ ঘেউ করবেন না ( এই বক্তব্য আপনার নিজের )

একবার শিক্ষক হিসাবে ভাবুন তো!
কথাগুলো কি খুব সম্মানের???

আমি মনে করি ,
যে শাসকদল শিক্ষকদের সম্মান করতে জানে না ,
তাদের অবলুপ্তি অবশ‍্যম্ভাবী।
বকেয়া ডিএ নেই , পে কমিশন বিশ বাঁও জলে ,
প্রাথমিকে PRT scale নেই, বেশিরভাগ হাই স্কুল গুলোতে একটা বিষয়ের একটা শিক্ষক দিয়ে উচ্চমাধ‍্যমিক চলছে, সেন্ট্রাল ফোর্সের জন‍্য আন্দোলন করছেন,PRT scale চেয়ে আন্দোলন করলে বদলি করে দিচ্ছেন অন‍্য জেলায় অথচ প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে transfer নিয়ে কোনো হেলদোল নেই, শিক্ষক নিয়োগ শুধুই আইনি জটিলতায় আটকে যাচ্ছে..….
ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি অনেক সমস্যায় জর্জরিত শিক্ষক সমাজ।

আর একটা প্রসঙ্গ বলতেই হবে।
বিরোধীরা বনধ ডাকলেই স্কুলে ( যদিও সমস্ত সরকারি অফিস )  যাওয়ার জন্য রীতিমতো হুইপ জারি উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করেছেন এবং বেতন কাটার এমনকি সার্ভিস বুক ব্রেক করার ফতোয়া জারি করেছেন।
আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন , এটা গণতান্ত্রিক দেশ।
এভাবে কাউকে জোর করে CL না নিতে বাধ‍্য করতে পারেন না।
একটা সত্যি কথা বলি ,
আপনি যখন এই ব‍্যাপারে ফতোয়া জারি করেন তখন আপনার বনধ ডাকার সংখ্যার কথা বড্ড মনে পড়ে।

আজ একজন নাম লিখতে না পারা গজিয়ে ওঠা নেতাও স্কুলের প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেবার সাহস পায়!
শাসক দল হয়ে এরকম শিক্ষক বিদ্বেষী বা পুরো সরকারি কর্মচারী বিদ্বেষী মনোভাব শিক্ষক সমাজ মেনে নেয়নি।
তার প্রভাব ভোটে পড়েছে।
আপনার কাছে সরকারি কর্মচারীদের ৩ শতাংশ ভোট গুরুত্ব পায়নি।
প্রথম থেকেই উপেক্ষা করে এসেছেন।

উল্টোদিকে সরকারি কর্মচারীদের ন‍্যায‍্য ডিএ , পে কমিশন বা স্কেল থেকে বঞ্চিত করে
ক্লাবে দান ,উৎসবে খরচ, মদ খেয়ে মারা গেলে টাকা, ইমাম ভাতা.... এইসব করে উড়িয়ে গেছেন।

এখন আর বাম আমলের ঋণের কথা শুনতে পাইনা।
সম্ভবত আপনারাও অনেক ঋণ করেছেন। অবশ্য এটা ভুল কিছু নয়। ঋণ সব রাজ‍্যের আছে।
তবে ন‍্যায‍্য পাওনা সরকারি কর্মচারীদের দেননি।
ভাবার সময় এসেছে।

৩) সংখ‍্যালঘু তোষনঃ -

প্রথমেই বলি মুসলিম বন্ধুদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রেখে কিছু বলছি না। আমাদের দেশ সর্বধর্ম নির্বিশেষে বহমান। সব ধর্মই মহান।
কিন্তু আপনি বড্ড বেশি মাতামাতি করে ফেলেছেন সংখ‍্যালঘুদের নিয়ে।
মোদিকে তোপ দাগছেন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে কিংবা ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করছে বলে।
অথচ আপনিই যে অগোচরে কবে কিভাবে ভোটের জন্য ধর্মকে ব‍্যবহার করেছেন,
বুঝতেই পারেননি।
বিজেপি হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের দল। এটা সর্বজনবিদিত।
কিন্তু তাবলে তারা জয় শ্রীরাম বললে সেটা গালাগাল বলবেন?
জয় শ্রীরাম বলার জন‍্য তাদের হেনস্থা করবেন?

আমার অনেক মুসলিম বন্ধু আছে , যারা আপনার এই সমস্ত কথাবার্তা বা আচরণ ভালো ভাবে নেননি।
সকালেই দেখলাম একটা তথ্য।
পশ্চিমবঙ্গে ১২টি সংখ‍্যালঘু আসনে ৯টিতে তৃণমূল ভালো ফল করেছেন।
আপনার ভোট ব‍্যাঙ্ক কোথায় আটকে আছে, বুঝে নিন।
ভাবার সময় এসেছে।

৪) পুলওয়ামার নিসংশ হত‍্যাকান্ডের পর আপনার কিছু কার্যকলাপ বা বক্তব্যঃ -

৪৯ জন ভারতীয় জওয়ানকে পাকিস্তানি জঙ্গিরা হত‍্যা করল। তার জন‍্য মোদী কড়া পদক্ষেপ নিল।
পাকিস্তানের বুকে গিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে এর।
আর আপনি বলছেন ভিডিও ফুটেজ দিন!
বাহ!
এছাড়াও নানাভাবে কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রকে।

অথচ যখন কলকাতায় বিদ‍্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার জন‍্য সিসিটিভি ফুটেজ চাওয়া হল,
আপনারা বলছেন সিসিটিভি অকেজো!
বাহ!

এতটাই কি বোকা হয়ে গেছে বাঙালি?
যেখানে গোটা বিশ্ব এমনকি পাকিস্তান পর্যন্ত মেনে নিচ্ছে যে জঙ্গি ঘাঁটি আক্রমণ করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা,
সেখানে আপনি ভিডিও ফুটেজ ছাড়া বিশ্বাস করতে চাইছেন না।
আর নিজের রাজ‍্যের সামান্য সিসিটিভি ফুটেজের বেলায়!
প্রশ্ন করুন নিজেকে। ভাবার সময় এসে গেছে।

৫) বিরোধী শূন্য করার আপ্রাণ চেষ্টাঃ -

প্রথমেই একটা ছোট্ট কথা বলব। আমি যদি নিজের পড়াশোনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকি ,
তাহলে পরীক্ষা হলে কড়া স‍্যার গার্ড দিল না লুজ গার্ড দেওয়া স‍্যার গার্ড দিল ,
তাতে কি আসে যায় ?

আপনার উন্নয়ন নিয়ে , আপনার কাজ নিয়ে ঠিক এতটাই আত্মবিশ্বাসী থাকলে সেন্ট্রাল ফোর্স দিয়ে ভোট করানোর জন‍্য এতটা আপত্তি করতেন না..
আপনার দলীয় নেতারাই বলছেন -
ভোটের পর কি আর কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে?
বুঝে নিন এই কথার অর্থ।

অমিত শাহ রোড করছেন। ভালো কথা।
ওনার রোড শো বাঞ্চাল করার চেষ্টা হবে কেন?
মানুষ সব দেখছে। এটা ২০১৯.... ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা এসেছে বেশিরভাগ মানুষের।

এমন কাজ করুন , যাতে ভারতবর্ষের সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করালেও যেন জিততে পারেন।
সেন্ট্রাল ফোর্সের জন‍্য যেন শিক্ষক সমাজকে পথে না বসতে হয়!
মনে রাখবেন ,
শিক্ষক সমাজ আগেও সমাজের কারিগর ছিল,
এখনও আছেন।
শুধু সম্মানটা পান না বর্তমানে।
ভাবার সময় এসেছে।

৬) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না করাঃ -

বিশ্বাস করুন ,
শেষ কবে আমাদের রাজ‍্যের অর্থমন্ত্রীকে টিভির পর্দায় বা খবরের কাগজে দেখেছি মনে নেই।
আপনি এবং শিক্ষামন্ত্রী ছাড়া আর কোনো কার্যকরী মন্ত্রী আছে বলে আমার মনে হয় না।
প্রত‍্যেকটা দপ্তর যখন আলাদা, মন্ত্রী যখন আলাদা,
তাদের ক্ষমতা কোথায়?
সেই পদের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়?

ডিএ ঘোষনা করার মতোও ক্ষমতা আমাদের অর্থমন্ত্রী পাননি।
বিশ্বাস করুন , এটা সত্যিই হাস‍্যকর...
ক্ষমতার মেরুকরণ করুন। প্রত‍্যেককে স্বাধীনতা দিন।
নাহলে মানুষের কাছে একনায়কতন্ত্রের বার্তা যাচ্ছে।

ভাবার সময় এবার সত্যিই এসেছে। ভাবুন...

৭) রংচটা বা চাঁচাছোলা ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণঃ --

রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলের সাথে মতবিরোধ থাকবেই।
একে অপরকে আক্রমণ ব‍্যাপারটাও থাকবে।
কিন্তু সেখানে ভাষা সংযম থাকবে না??
আমি মেনে নিলাম , আপনি মোদিকে একদম পছন্দ করেন না। বিজেপির নীতি একদম পছন্দ করেন না।
কিন্তু তবুও উনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী।
নোংরা ভাষায় আক্রমণ করাটা একটা মূখ‍্যমন্ত্রীর শোভা পায় না।
লক্ষ বার আক্রমণ করুন রাজনৈতিক স্বার্থে।
কিন্তু শালীনতা বজায় রাখুন।
বিরোধীদের প্রতি সৌজন্য দেখান।

এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি।
রাহুল গান্ধী সব জনসভায় বলে গেল -
চৌকিদার চোর হ‍্যায়!
দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের বক্তব্য ভালো ভাবে নেননি কেউ।
ফল প্রমাণিত। কংগ্রেস আর কোনোদিন শিরদাঁড়া সোজা করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে!

ভাবার বিষয়,
যখন অশালীন ভাষায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হচ্ছে, তখন জনতা হাততালিতে ফাটিয়ে দিচ্ছে।
কিন্তু তবুও তার প্রভাব দেখুন ভোট ব‍্যাঙ্কে!

৮) নীচুতলার দলীয় কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব‍্যবহারঃ --

প্রথমেই বলতে হবে বামফ্রন্টের কথা। বাম আমলের পতনের কারণ নিচুতলার কর্মীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব‍্যবহার।
শেষের দিকে বাম কর্মীদের অত‍্যাচার এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ,
মানুষ দিন গুনছিল কবে বামফ্রন্টকে সরানোর সুযোগ পাবে!
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসাই।
অনেক আশা নিয়ে বাংলার মানুষ মা মাটি মানুষের সরকারকে সাদরে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

কিন্তু জেনে রাখুন ,
বামেরা শেষ দশ বছরে যে ধরনের অত‍্যাচার, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহার করেছিল....
অলরেডি আপনাদের নিচুতলার কর্মীরা সেই সীমা লঙ্ঘন করেছে।

"টাকা ছাড়া চাকরি নেই"
এই বাক্যটি পশ্চিমবঙ্গের ট‍্যাগ লাইন হয়ে গেছে।

সামান্য ১০০ দিনের কাজের সুপারভাইজার বর্তমানে লাখপতি।
আমাদের মতো শিক্ষকদের কেনার মতো অবস্থায় চলে গেছে।
সামান্য সিভিক পুলিশের ক্ষমতা SDO বা BDOর থেকেও বেশি।
সাধারণ মানুষ সব দেখছে।

এবারের ফলাফল যদি লক্ষ্য করেন ,
তাহলে অবশ্যই জানেন।
আপনার পিঠ বাঁচিয়ে দিয়েছে কলকাতা এবং শহরতলীর আসনগুলো।
কারণটা ভাবুন। ভাবার সময় এসেছে।

৯) পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিঃ -

এটা এক কথায় স্বীকার করতে হবে,
আপনি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষদের জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন।
সাইকেল,জুতো,ব‍্যাগ,কন‍্যাশ্রী,খাতা, বিভিন্ন ভাতা,দুটাকা দরের চাল ডাল.…..ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি
তবুও মানুষ খুশি নয়। কারণ মানুষ আজ পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়।

আপনারা যেটাকে উন্নয়ন বলে মনে করেন,
আমি সেটাকে মানি না।

উন্নয়ন মানে ,
দু টাকা দরের চাল সবাইকে পাইয়ে দেওয়া নয়।
বরং ঠিক উল্টোটা।
উন্নয়ন মানে ,
এমন অর্থনৈতিক কাঠামো বা পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সৃষ্টি করা,
যেখানে সবাই নিজে ইনকাম করে নিজের টাকায় ৪০টাকা কেজি দরের চাল কিনতে পারবে...

আপনার অনেক জনমোহিনী প্রকল্প আছে।
সত্যি প্রসংশনীয়।
কিন্তু সেখানে দুর্নীতির শেষ নেই....

১০) এছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কাজ করেছে। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য গত পঞ্চায়েত ভোট।
মানুষ আজ ক্ষুব্ধ, বিরক্ত, অসন্তুষ্ট...
কেন ?
কারণ খুঁজুন খুব তাড়াতাড়ি এবং সেইমতো ব‍্যবস্থা নিন।
২০২১ এ বিধানসভা ভোট।
২০০৯ এ লোকসভায় ভালো ফল করে ২০১১তে বিধানসভা জিতেছিলেন।

এবারেও যে তার প্রতিফলন হবে না কে বলতে পারে?
আপনারা যতই রাজনীতি রাজনীতি করে উতল হন না কেন ,
শেষ কথা কিন্তু বলে জনতাই.....

অনেক অনেক কথা বলে ফেললাম। আমি সমালোচনায় বিশ্বাসী। আমাদের গনতন্ত্র এখনও এতটা ভেঙে যায়নি যে, একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে মূখ‍্যমন্ত্রীর সমালোচনা করতে পারব না!

এটাও আমার অধিকার।

ইতি

বিঃদ্রঃ - কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে এবং ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা নয় এই চিঠি।

আমার বক্তব্যে কেউ আঘাত পেলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
Collected

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন তাহলে তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন; না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো? ¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবেন, ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি বাড়তে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন নিত্যনতুন জীবনদর্শন। তাই এ ধরনের মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন সময়ের বয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে