পর্দাপ্রথা কী সত্যিই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ন্ত্রন করে?
গত ১৯/০১/২০১৭ তারিখে Whatsapp এর একটি গ্রুপে একটি পরিসংখ্যান পোষ্ট করে দাবী করা হয়েছে সৌদি আরর সহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি মুসলিম দেশে মেয়েদের পর্দাপ্রথা চালু থাকার কারণে সেখানে ধর্ষণের হার কম এবং অমুসলিম দেশগুলিতে পর্দাপ্রথা নেই বলে ধর্ষণের হার অত্যন্ত বেশী। অবশ্য পোষ্টের শেষে পোষ্টকারী দাবী করেছেন, তিনি পর্দাপ্রথার সমর্থক নন কিন্তু পোশাকে (মেয়েদের) শালীনতা থাকা দরকার।
এখন প্রশ্ন হল, পর্দাপ্রথার (পড়ুন বোরখা/হিজাব পরার) সমর্থক নন যখন, তখন তিনি এই পরিসংখ্যান সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরলেন কেন? যদিও এ-প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দেন নি। আমার মনে হয়, পোশাকের সঙ্গে শালীনতার সম্পর্ককে যদি মানতে হয় তবে শালীনতা শুধু মেয়েদের কেন, পুরুষের পোশাকেও তো থাকা দরকার। কিভাবে বিচার হয় শালীনতা? বিচারের ভার কি কেবল পুরুষের উপর? নারী যে পোশাক পরলে পুরুষের কাম জেগে ওঠে সেটাই কি অশালীন পোশাক? জেনে রাখা ভালো, পুরুষের কোন কোন পোশাক পুরুষকেও যথেষ্ট উত্তেজক করে তোলে। পুরুষ হয় সেটা বোঝে না, না হয় না-বোঝার ভান করে। সমস্ত পুরুষই যে মেয়েদের নজরে পড়ার জন্য চেষ্টার কসুর করে না একথা সত্যিই কি অস্বীকার করা যায়? এবং মেয়েরা এধরণের পুরুষকে দেখে নিজেদের মধ্যে যে উত্তেজনা অনুভব করে তাও কি পুরুষের অজানা? মোটেও তা নয়। তাহলে কেবল নারীই কেন দায় নেবে পুরুষের কুচিন্তা বা কামনাকে নিয়ন্ত্রনে রাখার? পুরুষের নিজের চোখ, শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রনের দায় তার নিজের থাকবে না কেন?
আসলে নারী-পুরুষ উভয়েই পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ঠ হবে, কিম্বা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের পুরুষ সমাজপতিরা যে এটা জানেন না তা নয়; জানেন, কিন্তু মানেন না। মানলে যে ধর্ষণের দায় পুরোপুরি নিজেদের ঘাড়ে এসে পড়ে। তাই মনগড়া সমাজ দর্শনের জন্ম দেন, এবং তাতে ধর্মদর্শনের মোড়ক পরিয়ে দেন। আর তারাই প্রচার করেন, মেয়েরা পর্দাপ্রথা মেনে বোরখা বা হিজাব পরলেই সমাজ থেকে ধর্ষণ নামক অমানবিক কার্যকলাপ কমে যাবে।
তলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, নারী-পুরুষের দৈহিক সংসর্গের কিম্বা পরস্পরিক দৈহিক সৌন্দর্য উপভোগ করার ইচ্ছা সহজাত। প্রকৃতির নিয়মেই তা ঘটে। পরিণত বয়য়ের পরেও যখন তা পুরণের উপায় থাকে না, সাধারণত তখনই মানুষ অবৈধ ও অনৈতিক পথ বেছে নেয়। এখানে নারী-পুরুষের কোন ভেদ নেই। অর্থাৎ নারীর ইচ্ছা থাকে না, কেবল পুরুষের থাকে, এমনটাও নয়। উভয়ের মধ্যেই এই ইচ্ছা সমানভাবে জাগ্রত থাকে। কিন্তু শারীরিক দুর্বলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা না থাকায় মেয়েরা তা প্রকাশ করে না।
পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের এই ভয় না থাকায় কিছু পুরুষ(?) নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই দুই বাধা নারীর জীবনে না থকলে কোন কোন নারী পুরুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত, পুরুষ ধর্ষিত হত। সুতরাং একমাত্র পোষাকই ধর্ষিত হওয়া কিম্বা না হওয়াকে নিয়ন্ত্রন করে, একথা ঠিক নয়।
আসলে পুরুষ তার শারীরিক সক্ষমতা ও তাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন কায়েম রাখতে পারে বলে সে ধর্ষিত হয় না, আর হলেও তাতে তার কিছু যায় আসে না। উলটে সে খানিকটা নির্ভয়ে ধর্ষণ করে বসে। নারীর সে-সুযোগ নেই বলে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রন করে বা করতে বাধ্য হয়। আমার মতে, পুরুষই নারীকে এই ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতে বাধ্য করে। আর তারই বহির্প্রকাশ পর্দাপ্রথা। পুরুষ তার চোখ, তার কামনাকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করবে না। সে যেমন খুশি সাজতে পারবে, যেমন খুশি পোশাক পরতে পারবে। কেবল নারী পরলেই গেল গেল রব ওঠবে। কেন?
সূত্র : ফেসবুক
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন