সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পালটে গেলেই জীবন বাড়ে.... নইলে মৃত্যু হয়


পালটে গেলেই জীবন বাড়ে, না পাল্টালে নয়
জীবন মানে এগিয়ে যাওয়া, নইলে মৃত্যু হয়

আলী হোসেন

যখন ছোট ছিলাম, মাঠে যেতাম গরু চরাতে। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম মাঠ পেরিয়ে ওপাশের গাছপালায় ঘেরা সবুজ গ্রামটার ওপারেই আকাশটা বোধহয় মাটিতে নেমে এসেছে। ওটাই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। একছুট্টে পৃথিবীর শেষ প্রান্তটা, ইচ্ছা করলেই ছুঁয়ে আসতে পারি আমি এই ছুঁয়ে দেখার ভাবনা অনেক সময় ওই ইচ্ছাটাকে ভীষণ রকম উস্কে দিত। তার এই উস্কানিতেই একদিন হাঁটতে শুরু করি, আকাশ ছুঁয়ে দেখবো বলে। তারপর অনেকদূর এগোনোর পর, নিজের গ্রামটার দিকে তাকাতেই বুকের ভিতরটা যেন কেমন করে উঠে। নিজের গ্রামটাকে ঘিরে থাকা গাছগুলো কেমন যেন ছোট হয়ে গেছে কোন এক মন্ত্র বলে। পালটে গেল ভাবনাটা। মনে হল, এত দূরে আসার কী দরকার? আমার গ্রামের ওপারেরই তো আকাশটা নেমে গেছে মাটিতে। ওখানে গেলেই তো আকাশটা ছুঁতে পারি। এভাবেই পালটে যেতে দেখেছি একের পর এক ভাবনা। আর এভাবে পালটে গেলেই, মনে হত, আমি যেন অনেকটা বড় হয়ে গেছি। এখন বুঝি এই বড় হওয়ার আসলে কোন অন্ত নেই। অন্তহীন এই বেড়ে ওঠা, বেড়ে চলা। সমীরদার সঙ্গে প্রথম পরিচয়েই আর একবার আমার সেই উপলব্ধিটা প্রামান্যতা পেয়েছিল। এখানে সেই গল্পটারই কয়েক ঝলক...।

বাবার কাছে গল্প শুনেছি গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির কথা। রূপকথার মতো মনে হত সে কাহিনী। তিতুমীরের সাথে জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বিরোধ এবং ইংরেজ নীলকর সাহেবদের সহযোগীতায় তিতুর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের কাহিনী, পরিশেষে বাঁশের কেল্লার পতনের ইতিহাস রোমাঞ্চিত করত। মেলাতে পারতাম না, দোদণ্ডপ্রতাপ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে একটি অজ-গ্রামের তিতুমীর কিভাবে যুদ্ধে যাওয়ার সাহস করেছিল। মেলাতে পারতাম না, ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও কালীপ্রসন্নরা কেন ইংরেজদের সহযোগী হয়েছিলেন। এখন ইতিহাসের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে সে উত্তর যেমন পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি, সময়ের সাথে সাথে আমাদের জানাবোঝার পরিধি প্রসারের অনিবার্যতার উত্তর। এমনই নতুন নতুন বিষয়ে জানা-বোঝার অক্লান্ত শিক্ষাশ্রমিকের সন্ধান পেয়েছিলাম সমীর রায়চৌধুরী, আমাদের সমীরদার মধ্যে।
সম্পাদকের কাছ থেকে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন

 উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি এই জমিদার বাড়ি দেখার ইচ্ছা বুকের ভিতর জমতে থাকে ছেলেবেলা থেকেই। তারপর যখন জানলাম জমিদার বাড়ির উলটো দিকে যমুনা নদীর পাড়ে বসে বিরাট মেলা, তখন বানভাসি নদীর ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়তো সেই ইচ্ছা মন-যমুনায় মেলা বসার সময় যত এগোতো, বুকের ভেতরের সেই ঢেউ উথাল-পাতাল করে উঠতো। আমার সেই ইচ্ছা শক্তি একদিন বাধ্য করলো আব্বাকে। রাজি হলেন মেলা আর জমিদার বাড়ি দেখাতে। সেই দুই দেখার আবেগ ও অভিজ্ঞতার অবর্ননীয় বর্ণনা দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু মেলা দেখতে যাওয়ার পথে মাঠের পর গ্রাম, গ্রামের পর আবার মাঠ, পার হতে হয়েছে আমাকে। এভাবে একের পর এক মাঠ আর গ্রাম পার হতে গিয়ে বুঝলাম আমার দেখা ও ভাবনার সঙ্গে বাস্তবের বিরাট বড় অসঙ্গতি রয়েছে। কারণ, যত এগোচ্ছি দিগন্ত ততই পিছোচ্ছে। পালটে যাচ্ছে আগের ভাবনা, পালটে যাচ্ছি আমি। সমীরদার মধ্যে দেখেছি, এভাবেই সময়ের দাবিতে নিজেকে পালটে নেওয়ার উদগ্র আকাঙ্খা। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পালটে ফেলার প্রয়োজনীয়তা তাকে তাড়া করে নিয়ে বেড়াত প্রতিনিয়ত।

সমীরদার সংগে আমার পরিচয় লেখালেখির সূত্র ধরে নয়, অন্য সূত্রে। একদিন সন্ধ্যাবেলা মুর্শিদদার (সাহিত্যির মূর্শিদ এ এম) ফোন এলো। কল রিসিভ করে বললাম, ‘বলুন’। উনি খুব কম কথা বলেন, বলা ভালো মেপে মেপে। কোন ভনিতা না করেই বললেন, ‘সমীরদা আপনাকে একটু দেখা করতে বলেছেন, খুব জরুরী’। আমি বেশ অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম। নামটাই তো শুনিনি কোনদিন। কিন্তু মুর্শিদদা এমন করে বললেন, যেন আমার সাথে তাঁর বেশ জানা-পরিচয় আছে। আমি কিন্তু কিন্তু করে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম, সমিরদা কে? উনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘আপনি সমীরদাকে চেনেন না?’ আমি খুব লজ্জিত কণ্ঠেই বললাম, ‘না’। মনে মনে বললাম, কলকাতায় এলাম আর কদিন হল, যে পরিচয় হবে! ঠিক আছে, পরে চিনলেও হবে। আপনার যদি সময় হয়, একটু যান। উনি লেখালেখি করেন। একটা পত্রিকার সম্পাদনাও করেন। বাকিটূকু গেলেই জানতে পারবেন। কদিন ধরেই আমাকে বলছেন। আমিও ব্যস্ততার জন্য সময় করে উঠতে পারিনি, আপনাকে বলাও হয় নি। কিন্তু কেন যাব একথা আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কেননা, সমীরদাকে না চেনার উত্তরের প্রতিক্রিয়া মুর্শিদদা যেভাবে দেখিয়েছিলেন, তাতে জিজ্ঞাসা করার মত বুকবল ঐ মূহুর্তে আর ধরে রাখতে পারিনি। মনে মনে আন্দাজ করলাম, হয়তো লেখালেখির ব্যপারেই কথা বলবেন। লেখা চাইতেও পারেন।

সুতরাং পরের দিন স্কুল থেকে ফিরে সন্ধ্যাবেলা হাজির হলাম। মুর্শিদদা-ই পথনির্দেশ দিয়েছিলেন। দরজার কড়া নাড়তেই যিনি বেরিয়ে এলেন, পরে জানলাম উনি বৌদি। আমাকে দেখেই যেন কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। গলা উচু করে বললেন, দেখোতো কে একজন এসেছে। বলে, পিছন ফিরতে গিয়ে আবার আমার দিকে তাকালেন। কৌতুহল নিয়েই বললেন, কি চাই ভাই তোমার? নাম কি? বললাম, সমীরদাকে। আমাকে আসতে বলেছিলেন। নাম বলতেই বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, আলী! আরও কিছু হয়তো জিজ্ঞেস করতেন। হয়তো বলতেন, কই, আলী বলে তো কাউকে আমরা চিনি না। কিন্তু সমীরদাই থামিয়ে দিয়ে ভিতর থেকে শ্বসব্যস্ত হয়ে বললেন, আরে! আলী এসেছো। এসে এসো, কদিন ধরে তোমার অপেক্ষায় আছি। অবশেষে তোমার সময় হল? অশক্ত শরীর নিয়ে যেভাবে তাড়াহুড়ো করে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন, তাতে বৌদি খানিকটা ঘাবড়েই গেলেন। তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলেন, হাত বাড়িয়ে দিলেন, ঠিক যেন একজন বন্ধুর মত। বলতে বাধা নেই, অনেক মানুষের মধ্যে সমীরদাকে অন্য রকম লেগেছিল সেদিন। মনে হয়েছিল, কতদিনের পরিচয় রয়েছে যেন ওঁনার সাথে তারপর গ্রীলের তালা খুলে ঘরে নিয়ে গেলেন আমাকে

সময় নষ্ট না করে বৌদির সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরিচয়ের সময় এমন কিছু কথা, বলা ভালো প্রশংসা করলেন, তাতে ভিতরে ভিতরে একটা যেমন ভালো লাগা কাজ করছিল, তেমন অসস্থিও লাগছিল। অবাকও হচ্ছিলাম এই ভেবে যে, উনি এত কথা আমাকে বলছেন কেন এবং কিভাবে? যেহেতু এই প্রথম পরিচয়, তাই শুনে যাওয়া ছাড়া আমার তেমন কিছু বলারও নেই। মানুষটাকে জানিই না তো সেভাবে। শ্রোতা হয়েই তাই কাটলো কয়েক মুহূর্ত। তারপর হঠাৎ বললেন, আমার সঙ্গে এসো; কাজের কাজটা আগে সেরে ফেলি তারপর গল্প করা যাবে। দোতলার ঘরের চাবি নিয়ে সিড়ি দিয়ে তরতর করে ওঠার চেষ্টা করলেন। কয়েক ধাপ উঠতেই দেখলাম সতর্ক হয়ে গেলেন। বুঝতে পারলেন, বয়সের ভারটা বইতে পারার ক্ষমতা আগের মত নেই। আমি বুঝলাম, কী অস্বাভাবিক মনোবল এই সত্তরোর্ধ মানুষটির। যদিও আমার ঘোর তখনও কাটেনি। কেননা, চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর কোনোটার ব্যখ্যাই আমার কাছে পরিস্কার নয় তখনও। এই বয়সে এত আগ্রাসী আবেগ নিয়ে তিনি কী করতে চাইছেন। আর কেনই বা আমাকে নিয়ে এত আগ্রহ দেখাছেন? আমি ওনার জন্য কী-ই বা করতে পারি!

সিঁড়ি পেরিয়ে দোতলায় পৌছালাম। বাঁদিকে বাঁক নিতেই দেখি একটি ঘরে অসংখ্য বই। নিজের লেখা যেমন আছে, তেমনি অন্যান্য অসংখ্য বই ও পত্রপত্রিকা। নিজের সম্পাদননার পত্রিকার বেশকিছু কপিও রয়েছে সেখানে। নতুন বিষয় কেন্দ্রিক বা অন্য ধারার লেখা বই দেখলেই পা’টা যেন আটকে যায়। মনে পড়ে স্কুল ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় গুলোর কথা। বই কেনার বাহানা করে বুক স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বই ও পত্রপত্রিকা পড়ে নেওয়ার চালাকীর কথা। বই বিক্রেতা কখনও কখনও বিরক্ত হতেন। বুঝতে পারতাম। তবু কিছুটা নির্লজ্জের মতই দাঁড়িয়ে থাকতাম; পড়ে যেতাম। কখনও পরের দিন কেনার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও দিতাম, বিক্রেতার মনপাওয়ার জন্য। আজ আর সে সময় নেই। বই কিনে পড়ার মত পয়সা আমার হাতে আছে। কিনিও। কিন্তু জীবনের চাহিদা সময়কে অনেকটা কেড়ে নিয়েছে। যে অর্থের অভাবের কারণে, একদিন বই বিক্রেতার সঙ্গে ছলনা করেছি, সেই অর্থের যোগান গতিহীনতার গ্রাসে যাতে না পড়ে তার চেষ্টায় পড়ার সময় চুরি হয়ে গেছে অনেকটাই। কিন্তু চোখের নেশা তো সহজে যায় না। নতুন কিছু দেখলে তো নয়ই। স্বাভাবিক ভাবেই চোখ আটকে গেল সরু লনের বাঁপাশের ঘরের অসংখ্য বইতে, যার নতুনত্বের গন্ধ আমার মনকে দাড় করিয়ে দিল ক্ষণিকের জন্য।

তারপর আচমকাই কানে এলো সমীরদার গলা। কী হল, দাঁড়িয়ে গেলে কেন? তাকিয়ে দেখি একটু দূরের একটি ঘর থেকে মুখ বাড়িয়ে আমাকে ডাকছেন। কাছে যেতেই বললেন, তুমি বই পড়তে ভালোবাস বুঝি? আমি আবার একবার অবাক হয়ে গেলাম। মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, ঠিক আছে তোমাকে কিছু বই পড়তে দেব। দেখ ভালো লাগে কিনা। তবে তোমরা তো সুনীলের লেখা পড়ে বড় হয়েছ। ফলে আমাদের মত অনামী মানুষের লেখা না ভালো লাগতেও পারে। তবু তোমাকে দেব। সময় পেলে পড়ে দেখ। তার আগে দেখত আমার এই যন্ত্রটা ঠিক করে দিতে পার কিনা। বড্ড পিছিয়ে পড়েছি। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না। সময় এগোচ্ছে আর আমি ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। এটা মোটেও মানতে পারছি না। অথচ এই বুড়োটাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়েও আসছে না। দেখতো, তুমি আমাকে একটু সাহায্য করতে পার কিনা।

ঘরটার ভিতরটা দেখলাম একপলক। ধুলোবালিতে ভরা। অব্যবহৃত আসবাব আর অন্য নানা রকমের বাদপড়া জিনিসে ভরা ঘরটা। সেই জিনিস গুলোর মধ্যে অনেক যন্ত্রই আছে, যারা সংসারের ভার বইতে বইতে বানপ্রস্থে যাওয়ার বয়সে এসে পৌঁছেছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না। আমাকে ঠিক কী ঠিক করে দেওয়ার কথা বলছেন, যা ওঁনার খুব প্রয়োজন; যা তাঁকে পিছিয়ে দিচ্ছে, এই বয়সে! আমার না বুঝতে পারার শরীরি ভাষা পড়ে উনি আঙুল বাড়ালেন। আঙুল অনুসরণ করতেই নজর পড়লো একটি ধুলোর ঘোমটায় ঢাকা একটি লাজুক মুখের উপর, যার পোশাকি নাম মনিটর। ১৯ ইঞ্চির একটি বাদপড়া সিআরটি মনিটরকে দেখিয়ে বললেন, ওটাকে তোমাকে সারিয়ে দিতে হবে।

এবার বুঝলাম উনি কী করতে আমাকে ডেকেছেন। কিন্তু কেন ডেকেছেন তার হিসাব তখনও মেলেনি। অর্থাৎ বিস্ময়ের ভুত তখনও মাথা থেকে নামে নি। আমি বললাম, এটা সারিয়ে আপনি কী করবেন? এতে যা খরচ হবে তাতে আপনার পোশাবে না। তার থেকে একটা নতুন কিনে নিন, অনেকদিন চলবে। তাছাড়া যার জন্য কিনছেন সে অনেকদিন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবে। শুধু তাই নয়, এই মনিটরগুলো প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করায়। এখন টিএফটি মনিটর বেরিয়ে গেছে, যাতে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। ওটাই কিনে দিন। ... আমার কথা মাঝপথে থামিয়ে বললেল, ‘দাঁড়াও দাঁড়াও, তুমি জাননা, বুড়োদের পোশাকেই বুড়োদের মানায় ভালো?’ ভাবুন একবার, কোন কথার কোন উত্তর! বিস্ময়ের ভুত ঘাড় থেকে নামবে কী, আরও চেপে বসলো। কী বলবো ভাবছি। ভাবছি বলি, নাতি বা নাতনির জন্য যন্ত্রটি সারাতে চাইছেন তো, তা এটা না সারিয়ে একটা নতুন কিনে দিন; ওরা অনেকদিন নিশ্চিন্তে চালাতে পারবে। কিন্তু কথায় বলে না, মোল্লার দোড় মসজিদ পর্যন্ত। তেমনি আমার বুঝতে দেরি হল না, আমার ভাবনার দোড় ভবানিপুর পর্যন্ত। কারণ, সমীরদা কম্পিউটারটা সারাবেন নাতি-নাতনির জন্য নয়, যেটা আমার মাথায় এতক্ষণ ঢোকেনি। আর ওটা নাতি কিম্বা নাতনিদের বাদ দেওয়া কম্পিউটার। তারা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে, তাই পুরানো মডেলের কম্পিউটার তাদের চলবে না। তাই ধুলোর ঘোমটা পরে কনে সেজে ঘরের কোনে লাজুক মুখে বসে আছে।

হয়তো ভাবছেন, এতে আবার অবাক হওয়ার কি আছে? হয় তো নেই, কারও কারও কাছে। কিন্তু আমার কাছে খুবই অবাক হওয়ার মত ঘটনা ছিল এটা। কারণ, আমার প্রজন্মের মানুষ-জনের মধ্যে পাঁচ শতাংশ মানুষের মধ্যেও এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জানাবোঝার আগ্রহ নজরে আসেনি। এমনকি আমার থেকে অনেক ছোট, যাদের জন্মলগ্নেই এ রাজ্যে কম্পিউটার প্রযুক্তির প্রসার ঘটতে শুরু করেছে, তাদের মধ্যেও দেখেছি অনাগ্রহ এবং অহেতুক ভয়। অথচ সমীরদা তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম। কেননা, তিনি কম্পিউটার শিখতে চান শুধু নয়, ইউনিকোড ফণ্টে বাংলা লেখাও শিখতে চান। তাঁর কাছে এই নতুনকে আপন না করতে পারাটা পিছিয়ে থাকার সামিল, যা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাই আমার ডাক পড়েছে তাঁর ঘরে। পালটে যাওয়ার বাসনায়। কারণ, না হলে যে জীবন বাড়ে না।



‘বাংলা সাহিত্য’ অনলাইন ম্যাগাজিনের দপ্তরে বসে বাংলা লেখার চেষ্টা করছেন

তারপর যে অধ্যাবসয় নিয়ে তিনি এই কাজে মননিবেশ করেছিলেন, তা এককথায় অকল্পনীয়। নিজের বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে যেমন এই চেষ্টা করেছেন, তেমনি যখন আমি যাওয়ার সময় বের করতে পারিনি ফোনে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেক সময় অশক্ত শরীর নিয়ে আমার বাড়ী পর্যন্ত ছুটে এসেছেন। বলতে বাধা নেই, তার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে আমি ফোন-ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রতি মুহূর্তে এই আতঙ্ক আমায় তাড়া করে নিয়ে বেড়াতো যে, এই বুঝি সমীরদার ফোন ঢুকলো। আমি শেষ পর্যন্ত সমীরদার ফোন কলের জন্য রিংটোন পার্সনালাইজ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আজকের এই লেখার সুবাদে তাই তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার সুযোগকে হাতছাড়া করতে চাইনা। যেখানেই থাকুন, যেভাবেই থাকুন, পারলে এই ছোট ভাইটিকে ক্ষমা করে দেবেন, যেন এই অপরাধ বোধ নিয়ে এই সুন্দর-সম্পর্কের পৃথিবী ছাড়তে না হয় যে, আমি আপনার সব ফোনকল রিসিপ করিনি। আপনার প্রত্যাশা পুরণের রসদ আপনাকে আমি সম্পূর্ণ দিতে না পারলেও আপনার অদম্য আগ্রহ আমার মধ্যে এক অমোঘ সত্য উপলব্ধিতে সাহায্য করেছে, যা এ লেখার শিরোনাম হয়ে বেঁচে থাকবে।

মন্তব্যসমূহ

📂 আলী হোসেনের জনপ্রিয় প্রবন্ধগুলি

হিন্দু কারা? তারা কীভাবে হিন্দু হল?

হিন্দু কারা? কীভাবে তারা হিন্দু হল? যদি কেউ প্রশ্ন করেন, অমিত শাহ হিন্দু হলেন কবে থেকে? অবাক হবেন তাই তো? কিন্তু আমি হবো না। কারণ, তাঁর পদবী বলে দিচ্ছে উনি এদেশীয়ই নন, ইরানি বংশোদ্ভুত। কারণ, ইতিহাস বলছে পারস্যের রাজারা ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং ‘শাহ’ শব্দটি পার্শি বা ফার্সি। লালকৃষ্ণ আদবানির নামও শুনেছেন আপনি। মজার কথা হল আদবানি শব্দটিও এদেশীয় নয়। আরবি শব্দ ‘আদবান’ থেকে উদ্ভূত। সুতরাং তাঁর পদবীও বলছে, তিনিও এদেশীয় নন। ভাষাতত্ত্ব ও নৃতত্ত্বের বিশ্লেষণ বলছে, উচ্চবর্ণের বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মানুষদের, উৎসভূমি হল পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল। তারও আগে ছিল ইউরোপের ককেশাস অঞ্চলে। আসলে এরা (উচ্চবর্ণের মানুষ) কেউই এদেশীয় নয়। তারা নিজেদের আর্য বলে পরিচয় দিতেন এবং এই পরিচয়ে তারা গর্ববোধ করতেন। সিন্ধু সভ্যতা পরবর্তীকালে তারা পারস্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ ধরে এদেশে অভিবাসিত হয়েছেন। আর মধ্যযুগে এসে এদেরই উত্তরসূরী ইরানিরা (অমিত শাহের পূর্বপুরুষ) অর্থাৎ পারস্যের কিছু পর্যটক-ঐতিহাসিক, এদেশের আদিম অধিবাসীদের ’হিন্দু’ বলে অভিহিত করেছেন তাদের বিভিন্ন ভ্রমণ বৃত্তান্তে।

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন

রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও তার বিবর্তন আলী হোসেন  যদি প্রশ্ন করা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম কী? মনে হয় অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন। কেউ বলবেন, তাঁর বাবা যখন ব্রাহ্ম ছিলেন, তখন তিনি নিশ্চয়ই ব্রাহ্ম হবেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা বলবেন, কেন! উনি তো হিন্দু ছিলেন। আবার কেউ কেউ তথ্য সহযোগে এও বলার চেষ্টা করবেন যে, উনি নাস্তিক ছিলেন। না হলে কেউ বলতে পারেন, ধর্মমোহের চেয়ে নাস্তিকতা অনেক ভালো?¹ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম ভাবনার বিবর্তন  তাহলে সঠিক উত্তরটা কী? আসলে এর কোনোটাই সঠিক উত্তর নয়। চিন্তাশীল মানুষ-মাত্রই সারা জীবন ধরে ভাবতে থাকেন। ভাবতে ভাবতে তাঁর উপলব্ধি এগোতে থাকে ক্রমশঃ প্রগতির পথে। এই সময়কালে জগৎ ও জীবন থেকে তথ্য সংগ্রহ করে একে একে গড়ে তোলেন জীবনদর্শনের নিত্যনতুন পর্ব। তাই এ ধরনের চিন্তাশীল মানুষ আজীবন এক এবং অখণ্ড জীবনদর্শনের বার্তা বহন করেন না। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় তাঁর পথচলার গতিমুখ, গড়ে ওঠে উন্নততর জীবন দর্শন। মানুষ রবীন্দ্রনাথও তাই পাল্টে ফেলেছেন তাঁর জীবন ও ধর্মদর্শন; সময়ের এগিয়ে যাওয়াকে অনুসরণ করে। রবীন্দ্রনাথ ও  হিন্দু জাতীয়তাবাদ ১৮৬১ সালের ৭ই মে সোমবার রাত্রি ২টা ৩৮ মিনিট ৩৭ সেকেন

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি

ভাগ্য : মুসলিম মনস্তত্ত্ব, ধর্মদর্শন ও প্রগতি - লিখছেন আলী হোসেন  কপালের লেখন খণ্ডায় কার সাধ্য? জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে কিংবা লেখাপড়া জানা-নাজানা নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সিংহভাগই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই কথাটা মেনে নেয়। জীবনের উত্থান-পতনের ইতিহাসে কপালের লেখনকে জায়গা করে দিতে তারা কুণ্ঠাবোধ করে না। বরং বলা ভালো এব্যাপারে তারা অতিমাত্রায় উদার। মানুষের মনস্তত্বের এ-এক জটিল স্তর বিন্যাস। একই মানুষ বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ের বিচার বিশ্লেষণে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিকোণ ব্যবহার করে। এ রকমই একটি দৃষ্টিকোণ হলো কপাল বা ভাগ্যের ভূমিকাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে ভাবা। কখনও সে ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, আবার কখনও নিজেই ভাগ্যের কাছে নির্দিধায় আত্ম সমর্পন করে। নিজের ব্যার্থতার পিছনে ভাগ্যের অদৃশ্য হাতের কারসাজির কল্পনা করে নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। মজার কথা, এক্ষেত্রে মুসলিম মানসের মনস্তত্ত্ব কখনও চেতনমনে আবার কখনও অবচেতন মনে উপরওয়ালাকে (আল্লাহকে) কাঠ গড়ায় তোলে বিনা দ্বিধায়। নির্দিধায় বলে দেয়, উপরওয়ালা রাজি না থাকলে কিছুই করার থাকেনা। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা সবই তাঁর (আল্লার

সীমান্ত আখ্যান, বাঙালির আত্মানুসন্ধানের ডিজিটাল আখ্যান

সময়ের সঙ্গে সমস্যার চরিত্র বদলায়। কিন্তু মুলটা বদলায় না। যদি সে সমস্যা ইচ্ছা করে তৈরি হয়ে থাকে বিশেষ সুবিধা ভোগেই লোভে, তবে তো অন্য কথা চলেই না। স্বনামধন্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের ডকুমেন্টারি ফিল্প 'সীমান্ত আখ্যান' দেখার পর এই উপলব্ধি মাথা জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখলাম, দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যার অবসান হয়নি। শুধু সমস্যার চরিত্রটা পাল্টেছে। এই যে সমস্যা রয়ে গেল, কোন গেল? তার উত্তর ও পাওয়া গেল 'সীমান্ত আখ্যান' এ। আসলে দেশ ভাগ তো দেশের জনগণ চাননি, চেয়েছেন দেশের নেতারা। চেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিগত, সম্প্রদায়গত সুবিধাকে নিজেদের কুক্ষিগত করার নেশায়। আর এই নেশার রসদ যোগান দিতে পারার নিশ্চয়তা নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতার লাগাম নিজের হাতে থাকার ওপর। তাই রাজনীতিকরা এই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য জনগণকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিছি দ্বারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছেন এবং করে চলেছেন। এ সমস্যা নতুন না, ব্রিটিশ সরকার এর বীজ রোপণ করে গেছেন, এখন কেউ তার সুফল ভোগ করছে (রাজনীতিকরা) আর কেউ কুফল (জনগন)। 'সীমান্ত আখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দে

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী

কাশ্মীর ফাইলস : প্রপাগান্ডার এক নয়া ব্রান্ড, কর্পোরেট পুঁজি ও রাজনৈতিক দলের গলাগলির এক সুচারু প্রদর্শনী রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ১৯৪৭ সালের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মিরের জনগণের ভাগ্যলিপিতে লেখা হয়ে গেছে এই বিখ্যাত প্রবাদটির বিস্তারিত সারাৎসার। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে ভারত – এই দুই প্রতিবেশি দেশের ভুরাজনৈতিক স্বার্থের যাঁতাকলে পড়ে তাদের এই হাল। কিন্তু কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তর জানে না এমন মানুষ ভুভারতে হয়তো বা নেই। কিন্তু সেই জানার মধ্যে রয়েছে বিরাট ধরণের ফাঁক। সেই ফাঁক গলেই ঢুকেছে কাশ্মির ফাইলসের মত বিজেপির রাজনৈতিক ন্যারেটিভ যা তারা বহুকাল ধরে করে চলেছে অন্য আঙ্গিকে। এবার নতুন মাধ্যমে এবং নবরূপে তার আগমন ঘটেছে, যায় নাম সিনেমা বা সেলুলয়েড প্রদর্শনী। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সৌজন্যে অনেক আগেই সফলভাবে তারা এই ন্যারেটিভ দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করে চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। টেলিভিশন সম্প্রচারে কর্পোরেট পুজির অনুপ্রবেশের মাধ্যমে যার সূচনা হয়েছিল। রাষ্ট্রশক্তিকে কুক্ষিগত করতে না পারলে দেশের সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আনা সম্ভব নয়, একথা সাধারণ নিরক্ষর নাগরিক এবং ত

শিক্ষা কী, কেন প্রয়োজন এবং কীভাবে অর্জন করা যায়?

শিক্ষা কী, কেন এবং কীভাবে অর্জন করতে হয়? সূচিপত্র : What is education, why it is needed and how to achieve it শিক্ষা কী শিক্ষা হল এক ধরনের অর্জন, যা নিজের ইচ্ছা শক্তির সাহায্যে নিজে নিজেই নিজের মধ্যে জমা করতে হয়। প্রকৃতি থেকেই সেই অর্জন আমাদের চেতনায় আসে। সেই চেতনাই আমাদের জানিয়ে দেয়, জগৎ ও জীবন পরিচালিত হয় প্রকৃতির কিছু অলংঘনীয় নিয়ম-নীতির দ্বারা। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শক্তিকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে কাজে লাগালেই এই নিয়মনীতিগুলো আমাদের আয়ত্বে আসে। এই নিয়ম-নীতিগুলো জানা এবং সেই জানার ওপর ভিত্তি করেই জগৎ ও জীবনকে সর্বোত্তম পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার পথ খুঁজে বের করার শক্তি অর্জনই শিক্ষা। মনে রাখতে হবে, এই শিক্ষা কখনও কারও মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। এখন প্রশ্ন হল, শিক্ষা অর্জনের বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিটা আসলে কী। সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে জানতে হবে, এই শিক্ষার সূচনা হয় কখন এবং কীভাবে? শিক্ষার সূচনা কখন হয় : এই অর্জনের সূচনা হয় মাতৃগর্ভে এবং তা প্রাকৃতিক ভাবেই। প্রকৃতির দেওয়া কিছু সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই তার সূচনা। এই সহজাত শিক্ষাকে অবলম্বন করেই মানুষ তার পরবর্তী প

জল, না পানি : জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয়

জল নিয়ে জলঘোলা করা পানির মত সহজ নয় আলী হোসেন  সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে চিত্র শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য পানি শব্দকে বাংলা নয় বলে দাবি করেছেন। বলেছেন, "আমরা কোনোদিন কখনও বাংলা ভাষায় পানি (শব্দটা) ব্যবহার করি না"। শুধু তা-ই নয়, পানি শব্দের ব্যবহারের মধ্যে তিনি 'সাম্প্রদায়িকতার ছাপ'ও দেখতে পেয়েছেন। প্রশ্ন হল - এক, এই ভাবনা কতটা বাংলা ভাষার পক্ষে স্বাস্থ্যকর এবং কতটা 'বাংলা ভাষার ইতিহাস' সম্মত? দুই, জল বা পানি নিয়ে যারা জলঘোলা করছেন তারা কি বাংলাকে ভালোবেসে করছেন? মনে হয় না। কারণ, খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এরা কেউ নিজের সন্তানকে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে পড়াননি বা পড়ান না। ব্যবহারিক জীবনেও তারা বাংলার ভাষার চেয়ে ইংরেজি বা হিন্দিতে কথা বলতে বা গান শুনতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, বলা ভালো গর্ববোধ করেন। প্রসংগত মনে রাখা দরকার, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে যারা ভর্তি হয়, তারা অধিকাংশই গরীব ঘরের সন্তান। বলা ভালো, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তারাই বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কারণ, সন্তানকে বাংলা মিডিয়ামে পড়ানোর পাশাপাশি, বা

নিম্নবর্গের মানুষ মার খাচ্ছে কেন

নিম্নবর্গের মানুষ কীভাবে পিছিয়ে পড়েছেন? সমাধান কীভাবে? এদেশের নিম্নবর্গের মানুষ নিজেদের বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে ধর্ম পরিবর্তন করেছে। কখনও বৌদ্ধ (প্রাচীন যুগ), কখনও মুসলমান (মধুযুগ), কিম্বা কখনো খ্রিস্টান (আধুনিক যুগ) হয়েছে। কিন্তু কখনই নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে পাল্টানোর কথা ভাবেনি। পরিবর্তন হচ্ছে অলংঘনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম। যারা এই নিয়ম মেনে সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে, তারাই লাভবান হয়, টিকে থাকে। “পাল্টে গেলেই জীবন বাড়ে না পাল্টালে নয়, জীবন মানেই এগিয়ে যাওয়া নইলে মৃত্যু হয়” জীবনের এই চরম সত্য তারা অধিকাংশই উপলব্ধি করতে পারেনি। পৃথিবীর যেকোন উন্নত জাতির দিকে তাকান, তারা দ্রুততার সঙ্গে এই পরিবর্তনকে মেনে নিজেদেরকে পুনর্গঠন করে নিয়েছে। যারা পারেনি বা নেয়নি তারাই মার খাচ্ছে, অতীতেও খেয়েছে। বুদ্ধিমান জাতি নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সময়ের সঙ্গে তাল রেখে নিজেদের চিন্তা এবং চেতনায় পরিবর্তন আনে। খ্রিষ্টান, ইহুদি-সহ এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন জাতি - যারাই এই পরিবর্তন মেনে নিয়েছে তারাই আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। মহানবীর (সঃ) গৌরবময় উত্থান (যা এক ধরণ

আধুনিক মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির (পুঁজিপতিদের) তোতাপাখি

গোদি মিডিয়া : কর্পোরেট পুঁজির তোতাপাখি পশ্চিমী মিডিয়াকে 'ইসরাইল সরকারের তোতাপাখি' নামে পরিচয় দেওয়া হয় সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া হাউজের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি একইভাবে ভারতীয় কর্পোরেট মিডিয়া ভারত সরকার তথা 'কর্পোরেট পুঁজির  তোতাপাখি' হিসাবে পরিচয় পাচ্ছে, যাকে নিন্দুকেরা 'গোদী মিডিয়া' নামে অভিহিত করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইল যা বলে, ইউরোপ ও আমেরিকার মিডিয়া, তোতা পাখির মতো তা-ই প্রচার করে। সাংবাদিকতার প্রধান প্রধান শর্তগুলোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইসরাইলের দেওয়া তথ্যই তারা প্রচার করে অন্ধ ও নির্লজ্জভাবে। ভারতের ক্ষেত্রেও করপোরেট মিডিয়া বর্তমানে সেটাই করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, নত মস্তকে ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য বিনা বিচারে প্রচার করে চলেছে অধিকাংশ মিডিয়া হাউজ।  অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারিত খবরের বড় অংশই হয় নিয়ন্ত্রিত অথবা কখনও কখনও অসত্য - এমন দাবিও করা হয়।  আসলে সিংহভাগ মিডিয়ার মালিক হচ্ছেন এক-একজন  করপোরেট পুঁজির মালিক বা পুঁজিপতি। এরা কি কখনও নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় - এমন খবর, তথ্য বা তত্ত্ব প্রচার করবে? করবে না, করেও না। আর এ

সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের আয়না

  সংখ্যালঘুর মুখই গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। The face of the minority is the mirror of democracy কোন দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা বোঝা যায় সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সুরক্ষা কতটা মজবুত, তা থেকে। কারণ, সংখ্যালঘুর মুখই হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আয়না। সংখ্যালঘুরা সঙ্গত কারণেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের চেয়ে বেশি বঞ্চনাজনিত মনস্তাত্ত্বিক চাপে থাকে। এই চাপ দু’ভাবে তৈরি হয়। ১) সংখ্যাগিষ্ঠতাজনিত সুবিধা যা সংখ্যাগুরুরা পায়, সংখ্যালঘুরা কখনই তা পায় না বা পাবে না - এই ধারণা, যার কিছুটা হলেও ভিত্তি রয়েছে ২) সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বৃহত্তম (?) জনগোষ্ঠীর অংশ হওয়ার সুবাদে যে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি হয় এবং যা বহুজনের মধ্যে দৃষ্টিকটুভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে, তার ভয়ে। এই চাপ কতটা গভীর তা সংখ্যালঘু ছাড়া বোঝা খুব মুশকিল। তবে আলোকপ্রাপ্ত মানুষ মাত্রই যে তা উপলব্ধি করতে পারেন, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরণের চাপ তৈরি করে কিছু অসাধু মানুষ যখন সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির সামনে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমানোর ক্ষমতা একমাত্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রশক্তির হাতেই থাকে